জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আসামি ও দুদকের আইনজীবীর তুমুল বাক বিত-ার মধ্যে এজলাস ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন বিচারক। মামলার প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উপস্থিতে গতকাল বুধবার দুপুরে বকশীবাজারে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে শুনানি চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের হট্টগোল না থামায় বিচারক আখতারুজ্জামান আসন ত্যাগ করে খাসকামরায় চলে যান। ১৫ মিনিট পর এজলাসে ফিরে তিনি কনিষ্ঠ আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য বিএনপিপন্থী জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের দায়ী করেন এবং আদালতের বিচারিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে বলেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দ্বিতীয় দিন ছিল গতকাল বুধবার। সে অনুযায়ী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালতে পৌঁছান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করার পর আসামিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। প্রথমে খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর এপিএস জিয়াউল ইসলাম মুন্নার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন আইনজীবী আমিনুল ইসলাম। গতকাল বুধবার তিনি দ্বিতীয় দিনের মত বক্তব্য উপস্থাপনের সময় তিনি বিচারককে বলেন, গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রধানমন্ত্রীসুলভ বক্তব্য হয়নি, তা দলীয় বক্তব্য হয়ে গেছে। এ সময় দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এর প্রতিবাদ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আপনি আদালতে নিয়ে আসবেন না, আপনি আপনার যুক্তি উপস্থাপন করেন। এরপর দুই আইনজীবীর মধ্যে তুমুল বাকবিত-া শুরু হয়। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় বেলা পৌনে ১২টার পর বিচারক এজলাস কক্ষ ত্যাগ করে খাস কামড়ায় চলে যান। ১৫ মিনিট পর এজলাসে ফিরে তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর (খালেদা জিয়া) সামনে কীভাবে এরকম হট্টগোল করেন? ম্যাডামের সম্মানের দিকে আপনারা কি লক্ষ্য করছেন না? তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বিতর্ক হতেই পারে। তাই বলে জুনিয়র আইনজীবীরা কেন হট্টগোল করবেন? আপনারা সিনিয়রদের দিকে লক্ষ্য করেন, তারা কীভাবে চুপ করে ছিলেন। পরে আবারও শুনানি শুরু হলে আইনজীবী আমিনুল ইসলাম তার যুক্তি উপস্থাপন চালিয়ে যান। খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী নূরুজ্জামান তপন জানান,, মধ্যাহ্ন বিরতির পরও এ মামলার শুনানি চলবে। খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হয়। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ শুরু হয় বিচার। মামলাটিতে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী এবং তার তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান আসামি। গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল যুক্তিতর্কে বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে (২০০১ থেকে ২০০৬ সাল) ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে ও অন্যকে লাভবান করার জন্য জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠন করেন। এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাত বছরের সাজা চান তিনি।