অনলাইন ডেস্ক :

ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে দেশে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি সরকার প্রতিবেশী দেশ থেকেও বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তার মধ্যে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। তার বাইরে আরো ৩ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। তার মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এ বছরই আসার কথা রয়েছে। আর বিহার ও অসামকে সংযুক্ত করা গ্রিড লাইন দিয়ে আরো এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া ভারতের মধ্যে আমদানির স্থাপন করা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আরো এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে বাংলাদেশ। কিন্তু এখনো বিক্রয় নীতিমালা চূড়ান্ত না করতে পারায় ওসব বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে দুই দেশই চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে পারছে না। আমদানির জন্য দরপত্র আহŸান করেও তা উন্মুক্ত করা যাচ্ছে না। একই কারণে সম্প্রতি ভারতের বেসরকারী খাত থেকে ২৫০ মেগাওয়াটের দরপত্রও বাতিল করা হয়েছে। এখন বিদ্যুৎ-জ্বালানি দ্রæত সরবরাহ বিশেষ বিধানের আওতায় পাওয়ার ট্রেডিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার (পিটিসি) সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি বছরই ভারত থেকে নতুন করে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির কথা রয়েছে। কিন্তু ভারতের বিক্রয় নীতি চূড়ান্ত না হওয়ায় ওই আমদানি প্রক্রিয়া জটিলতার মধ্যে পড়েছে। ফলে বিদ্যুৎ কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ভারত গত বছর নতুন করে ক্রস বর্ডার ট্রেড অব ইলেক্ট্রিসিটি ট্রেড আইন প্রণয়ন করেছে। কিন্তু সেটি বাস্তবায়নের জন্য যে নীতিমালা দরকার, তা এখনো তৈরি করা হয়নি। ফলে ভারত থেকে বিদ্যুৎ রফতানির যেসব প্রক্রিয়া রয়েছে, তার সবক’টি ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী প্রতিবছর দেশে ১০ ভাগ হারে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। ওই হিসাবে ২০২১ সাল নাগাদ দেশে প্রয়োজন হবে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। চাহিদা সামাল দিতে সরকার দেশী-বিদেশী খাত থেকে বিদ্যুতের সংস্থান করছে। বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের মধ্যে ২৫০ মেগাওয়াট আসে বেসরকারী খাত থেকে। ওই বিদ্যুৎ বাংলাদেশকে সরবরাহ করে পিটিসি। সেজন্য ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর পিটিসি ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মধ্যে একটি বিদ্যুৎ বিক্রি চুক্তি (পিপিএ) সই হয়। ওই চুক্তির মেয়াদ গত বছর ৩১ জুলাই শেষ হয়ে গেছে। সেজন্য নতুন করে দরপত্র আহŸান করে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতের ক্রস বর্ডার নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় ওই দরপত্রও খুলতে পারছে না বাংলাদেশ।
সূত্র আরো জানায়, বেসরকারী খাতের বিদ্যুৎ আমদানি যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য পিটিসি’র সাথে করা আগের পিপিএ’র মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। প্রচলিত আইনে পিপিএ’র মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ না থাকায় বিশেষ আইনে মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ভারত বন্ধুরাষ্ট্র। ভারত থেকে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। আগামীতে আমদানির পরিমাণ অনেক বাড়বে। ওসব বিদ্যুৎ আনতে নীতিমালা জরুরি। সম্প্রতি যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকেও ভারতের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওই নীতিমালা দ্রæত সম্পন্ন করার অনুরোধ করা হয়েছে। তা নাহলে বিকল্প উপায়ে কিভাবে বিদ্যুৎ আমদানি করা যায়, সে বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।