চলছে চিনি উৎপাদনের ভরা মৌসুম। কিন্তু আখের অভাবে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সরকারি চিনিকলগুলো। ইতিমধ্যে রাজশাহী, রংপুর, শ্যামপুর, জয়পুরহাট ও পাবনা চিনিকল বন্ধ হয়ে গেছে। আরো কয়েকটি বন্ধের পথে। চিনি শিল্প করপোরেশন চলতি আখ মাড়াই মৌসুমে (২০১৭-১৮) চিনি রিকভারি (আখ হতে প্রকৃত চিনি সংগ্রহ) বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ফলে চিনির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। তাতে লোকসানের পরিমাণ আরো বাড়বে। গতবছর ৯ লাখ ৯১ হাজার ৪৫৪ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৫৯ হাজার ৯৮৪ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন হয়েছিল। আর রিকভারির হার ছিল ৬ দশমিক ০৫ ভাগ। চিনি শিল্প করপোরেশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি চিনি উৎপাদন মৌসুমে চিনি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয় সাড়ে ১৩ লাখ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে এক লাখ ২৮০ মেট্রিক টন চিনি। আর চিনি রিকভারির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয় শতকরা ৭ দশমিক ৪৩ ভাগ। চলতি ফেব্রæয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ৯ লাখ ৯৬ হাজার ৬৪২ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৫৫ হাজার ৯৩২ টন চিনি উৎপাদন হয়েছে। রিকভারির গড় হার হচ্ছে ৫ দশমিক ৭৩ ভাগ। মূলত বৈরি আবহাওয়ার কারণে আখে চিনির পরিমাণ কম হয়েছে। করপোরেশনের অধীন ১৫টি চিনিকল কম বেশি রিকভারি বিপর্য়য়ের মুখে পড়েছে। চিনিকলগুলো হচ্ছে- পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁ, সেতাবগঞ্জ, শ্যামপুর, রংপুর, জয়পুরহাট, নর্থবেঙ্গল (গোপালপুর), পাবনা, নাটোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়াা, কেরু এন্ড কোম্পানী (দর্শনা), মোবারকগঞ্জ, ফরিদপুর ও জিলবাংলা। সূত্র জানায়, আগে আখ চাষ লাভজনক ছিল। কিন্তু নানাবিধ কারণে চাষিরা আখ চাষ কমিয়ে অন্য ফসল চাষে ঝুঁকে। ফলে চিনি শিল্প করপোরেশনের সংকট শুরু হয়। প্রতি কেজি চিনির উৎপাদন খরচের অনেক কম দামে চিনি বিক্রি করতে হয়। ফলে লোকসানের পরিমাণ বাড়তে থাকে। চিনি শিল্প করপোরেশনের গত অর্থ বছরের (২০১৬-১৭) ফাইনাল এ্যাকাউন্ট এখনো না হলেও আনুমাণিক ৬’শ কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, খোলা বাজারের চেয়ে করপোরেশনের চিনির দাম বেশি থাকায় কাক্সিক্ষত পরিমাণ চিনি বিক্রি হচ্ছে না। মিলগুলোর প্রতি কেজি চিনির দাম ৬০ টাকা। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ওই কারণে ডিলাররাও মিল থেকে চিনি উঠাচ্ছে না। ফলে করপোরেশনের হাতে নগদ টাকার অভাব দেখা দিয়েছে। কর্মকর্তা, কর্মচারি ও শ্রমিকদের ২ মাসের বেতন ভাতা বাকি পড়েছে। কোনো মিলে চাষিরা বিক্রিত আখের মূল্যও পাচ্ছে না। মাসের প্রথম সপ্তাহে পর্যন্ত করপোরেশনের অধীন মিলগুলোর গুদামে ৮৩ হাজার ৩৭৫ মেট্রিক টন চিনি মজুত ছিল। এদিকে আখ সঙ্কট প্রসঙ্গে চিনি শিল্প করপোরেশনের ইক্ষু বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, চাষিরা যাতে আখ চাষে ফের আগ্রহী হয় সেজন্য আখের দাম বাড়িয়ে প্রতিমণ ১২৫ টাকা করা হয়েছে। আগামী বছর ১৪০ টাকা করা হবে। চাষিরা যাতে না ঠকে সেজন্য আখ ক্রয় কেন্দ্রগুলোতে ডিজিটাল ওজন যন্ত্র বসানো হয়েছে। আর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমের চাষিদের আখের মূল্য প্রদান করা হচ্ছে।