বাংলাদেশের জনশক্তি এবং সিঙ্গাপুরের পুঁজি কাজে লাগাতে পারলে দু’দেশেরই লাভ: প্রধানমন্ত্রী
তারিথ
: ১২-০৩-২০১৮
অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের বিপুল তরুণ জনশক্তি এবং সিঙ্গাপুরের পুঁজি কাজে লাগিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা এগিয়ে নিতে পারলে দুই দেশই আরও লাভবান হতে পারে। গতকাল সোমবার সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট ভবন ইস্তানায় এক মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের সম্মানে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোং এই মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর উন্নয়নের ভিন্ন পর্যায়ে দুটি অবস্থান করলেও সমৃদ্ধি অর্জনে দুই দেশের শক্তির জায়গাগুলো পরস্পরের পরিপূরক হতে পারে। সিঙ্গাপুরে আপনাদের আছে পুঁজি, আধুনিক প্রযুক্তি আর জ্ঞান। আর বাংলাদেশে আমাদের আছে বিপুল জনশক্তি। আমাদের মোট জনসংখ্যার বড় একটি অংশ তরুণ, তারা শিক্ষিত। এ বিষয়গুলো যৌথভাবে কাজে লাগাতে পারলে দুই দেশই আরও লাভবান হতে পারে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য সিঙ্গাপুর একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। আমি আশা করি সিঙ্গাপুর সরকার তাদের জন্য সম্মানজনক একটি কর্মপরিবেশ দেবে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এক লাখ ৬০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে ৩০ হাজার বাংলাদেশি কাজ করেন জাহাজ নির্মাণ শিল্পে। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে। এই সম্পর্ক গড়ে উঠেছে অতীত ইতিহাস, অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে। এই মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুব এবং প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোংয়ের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন। পরে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ এবং বিমান চলাচলে সহযোগিতার বিষয়ে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা মধ্যাহ্ন ভোজে বলেন, আমাদের ব্যবসায়ী চেম্বারগুলো আগামীকাল আরও কয়েকটি সমঝোতা স্মারকে সই করবে। এসব চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সিঙ্গাপুরের কোম্পানিগুলো যে বাংলাদেশের বিষয়ে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে, তাতে আমি আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী এই সফরে উ আতিথেয়তার জন্য সিঙ্গাপুর সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং সিঙ্গাপুর আসিয়ানের নেতৃত্ব নেওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোংকে অভিনন্দন জানান। এদিকে, রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খুঁজতে মিয়ানমারের উপর চাপ দিতে সিঙ্গাপুরকে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্য স্ট্রেইটস টাইমসে গতকাল সোমবার প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ঢলের কারণে বাংলাদেশ ‘অভূতপূর্ব সংকট’ মোকাবেলা করছে। আগের দিন সিঙ্গাপুরে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় সফরে গেছেন শেখ হাসিনা। এক দশকের মধ্যে নগররাষ্ট্রটিতে দেশের সরকারপ্রধানের প্রথম সফর এটি। ‘গ্রোয়িং দ্য বন্ডস দ্যাট লিংক সিঙ্গাপুর অ্যান্ড বাংলাদেশ’ শিরোনামের ওই নিবন্ধে ১৯৭২ সালের শুরুতে কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সৃষ্ট বন্ধন বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কয়েক দশকে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের অর্জনের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। বিশ্বের সর্বোচ্চ ধনী দেশগুলোর অন্যতম এই সিঙ্গাপুরের মোট দেশজ উৎপাদন অন্য এশীয় প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বেশি। ব্যবসায়, বাণিজ্য, শিক্ষা ও শ্রম প্রবাহের মধ্য দিয়ে সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত বলে হাসিনা তার নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন। সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যে পরিমাণ ২৫০ কোটি ডলারের বেশি। শেখ হাসিনা লিখেছেন, উন্নয়নের আকাক্সক্ষাগুলো অর্জনে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের সাথে কাজ করতে একান্ত আগ্রহী। সিঙ্গাপুরের পুঁজি, উন্নত প্রযুক্তি ও জানাশোনা ভালো আছে যেখানে বাংলাদেশের আছে বিশাল সংখ্যার সহজপ্রাপ্য ও প্রশিক্ষণযোগ্য কর্মীবাহিনী। একসঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থ খুঁজে বের করতে এসব সুবিধা কাজে লাগানো যায় বলে তিনি নিবন্ধে মন্তব্য করেছেন। সিঙ্গাপুরের উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অবদানের কথাও মনে করিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, দুই দেশের মানুষের ভালো থাকার জন্য দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোংয়ের আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে গত রোববার সিঙ্গাপুরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফর শেষে ১৪ মার্চ তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।