যখন ব্যাংকগুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা লোপাট হয়ে যাচ্ছে তখন নওগাঁর কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক লিমিটেড থেকে কোন প্রকার ঋণ গ্রহণ না করেও গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ব্যাংক থেকে খেলাপির নোটিশ পেয়ে দিশেহারা ও হতবাক হয়ে পড়েছে নওগাঁর পতœীতলা উপজেলার ঘোষনগর ইউনিয়নের নোধুনী গ্রামের ১৭জন দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষক। নোটিশে গত ৫ মার্চ তারিখে পতœীতলা সমবায় অফিসে উপস্থিত হয়ে প্রত্যেককে ২০১৫-২০১৭ সনের মধ্যম মেয়াদী ও ২০১৬-২০১৭ সালের ইরি-বোরোর জন্য গৃহিত ঋণের টাকা সুদসহ পরিশোধের জন্য বলা হয়। এই সময়ের মধ্যে ঋণের টাকা পরিশোধ না করা হলে আইন অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয় নোটিশে। নওগাঁ কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের প্রদত্ত নোটিশ থেকে জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বর্ষে ইরি-বোরো ফসল চাষের জন্য ২৩ জুনুয়ারি তারিখে যারা ৫০ হাজার টাকা এবং ২০১৫-২০১৭ সনের জন্য মধ্যম মেয়াদী ঋণের জন্য ১৭/৬/২০১৬ তারিখে যারা ৬০হাজার টাকা করে ঋণ গ্রহণ করেছেন পতœীতলা উপজেলার ঘোষনগর ইউনিয়নের নোধুনী গ্রামের বাসিন্দা ও ঘোষনগর ইউনিয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতির ৩০জন সদস্যকে ২৭ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশ প্রাপ্তরা হলেন ইয়ারব আলীর পুত্র দেলুয়ার, উয়ারব আলীর ছেলে বেলাল উদ্দীন, মৃত সাকিম মন্ডলের ছেলে আবুল হোসেন, মৃত তমেজ উদ্দীনের ছেলে জামাল হোসেন, জহির উদ্দীনের ছেলে আতিকুর ইসলামসহ আরো অনেকে। নোটিশ হতে আরো জানা গেছে ঋণ গ্রহণের সময় সনাক্তকারী ছিলেন একই গ্রামের মৃত আছের আলী মন্ডলের পুত্র নজরুল ইসলাম, ওসমান আলীর পুত্র আবুল কালাম আজাদ ও সাইদুল ইসলাম। এ বিষয়ে নোটিশ পাওয়া কয়েক জনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সমবায় ব্যাংক হতে ঋণ নেওয়া বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না। ঋণ গ্রহণ করা তো দুরের কথা ঘোষনগর বহুমুখী সমবায় সমিতি যার রেজিঃ নং-১৯১ (তাং-৭/৩/১৯৪৯) এর কোন সদস্য পদও তাদের নেই। হঠাৎ সমবায় ব্যাংক হতে ঋণ পরিশোধের নোটিশ পেয়ে তাঁরা রীতিমতো চোখে শর্ষে ফুল দেখছেন। কিভাবে কি করবেন বুঝতে পারছেন না। নজরুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ ও সাইদুল ইসলাম সমবায় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে তাদের নাম দিয়ে নামে বেনামে ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ করে থাকতে পারেন। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাঁরা কর্ত্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে ঋণের সনাক্তকারী হিসাবে স্বাক্ষরকারী মোঃ আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে সাধারণ গ্রামবাসীর নাম দিয়ে ঋণ গ্রহণের কথা তিনি স্বীকার করে বলেন, আগামি জৈষ্ঠ্য মাসে তিনি ঋণের সমুদয় টাকা পরিশোধ করবেন। এ বিষয়ে পতœীতলা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা কে,এম সোহরাওয়ার্দী এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঋণের সনাক্তকারী হিসাবে স্বাক্ষরকারী নজরুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ ও সাইদুল ইসলাম কারসাজি করে সাধারণ গ্রামবাসীর নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ঘোষনগর বহুমুখী সমবায় সমিতির নামে ঋণ মঞ্জুর করে নিয়ে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেহেতু নওগাঁ কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ প্রদান করা হয়েছে এবং সেখান থেকেই ভুক্তভোগীদের নোটিশ প্রদান করা হয়েছে সেক্ষেত্রে এখানে আমার কিছু করার নেই। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংকের প্রধান অফিস নওগাঁয় যোগাযোগ করার জন্য তিনি ভুক্তভোগিদের পরামর্শ প্রদান করেন।