ভুয়া ডিগ্রীধারী ডাক্তারদের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা
তারিথ
: ১৬-০৪-২০১৮
অলাইন ডেস্ক :
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আনাচে-কানাচে ঝাঁকিয়ে বসেছে ভুয়া ডিগ্রীধারী চিকিৎসকরা। তাদের প্রতিরোধে কার্যকর তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। যদিও সীমিত পরিসরে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)সহ কয়েকটি সংস্থার অভিযান কার্যক্রমও চলে। কিন্তু তাদের পক্ষেও অলিগলিতে বসে থাকা মোট ভুয়া ডিগ্রী ব্যবহারকারী চিকিৎসকের দশভাগের কাছে পৌঁছা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আর বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) দায়িত্ব শেষ শুধুমাত্র ভুয়া ডিগ্রীধারী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে সতর্ক বার্তা দিয়েই। ফলে স্বীকৃত পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী না থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসকদের কেউ কেউ নিজেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। যা বিএমডিসি আইনের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর সাইনবোর্ড, প্রেসক্রিপশন প্যাড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক লেখা দেখে চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রত্যাশিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। শুধু তাই নয়, আইন অমান্য করে কোন কোন চিকিৎসক তাদের ব্যবস্থাপত্রে এমন কিছু ওষুধ লিখছেন, যা সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ। এমনকি ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রীপ্রাপ্ত না হয়েও অনেকে তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করে যাচ্ছে। দেশের সর্বত্রই চলছে বিএমডিসি’র দেয়া সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি অমান্য করার প্রতিযোগিতা। ফলে একদিকে যেমন দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা হয়ে পড়ছে প্রশ্নবিদ্ধ, অন্যদিকে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে রোগীরা অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। পাশাপাশি রোগী ও তাদের স্বজনেরা পড়ছে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে। বিএমডিসি ও চিকিৎসা খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের সর্বত্র চলছে বিএমডিসি আইনের লঙ্ঘন। স্বীকৃত চিকিৎসা থেকে ডাক্তার হয়েও অনেকে ভুয়া ডিগ্রী ব্যবহার করে থাকে। নামের আগে ভুয়া ডিগ্রী লাগিয়ে রোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই ওই ধরনের চিকিৎসকদের মূল উদ্দেশ্য। তারা রোগীদের ভাল-মন্দ বিবেচনায় রাখে না। তাদের কাছে মূখ্য টাকা, রোগীর চিকিৎসা বা সেবা নয়। তাছাড়া স্বীকৃত চিকিৎসকদের পাশাপাশি দেশে অস্বীকৃত কোয়াক চিকিৎসকদের সংখ্যাও কম নয়। তারাও চিকিৎসা খাতের জন্য বেশ হুমকিস্বরূপ। বর্তমানে দেশে প্রায় আড়াই লাখ কোয়াক চিকিৎসক রয়েছে। ওই ধরনের চিকিৎসকদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী ও অভিজ্ঞতা থাকে না। কোন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে তারা কিছু চিকিৎসা জ্ঞান অর্জন করে। সেই সীমিত জ্ঞান দিয়ে তারা নিজেদের মতো করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যায়। তাতে অনেক রোগী ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সরকারী অনুমোদন না থাকলেও এ ধরনের চিকিৎসকরা দেশের আনাচে-কানাচে চিকিৎসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, ভুয়া চিকিৎসকদের বিএমডিসি বারবার সতর্ক করলেও বাস্তবে তা কোনো কাজে আসছে না। বিএমডিসি’র সতর্কীকরণ বার্তায় বলা হয়, স্বীকৃত ডিগ্রীপ্রাপ্ত অনেকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের নিবন্ধন ব্যতীত চিকিৎসা কার্য পরিচালনা করছেন। কোন কোন নিবন্ধিত চিকিৎসক/দন্ত চিকিৎসক তাদের সাইনবোর্ড, প্রেসক্রিপশন প্যাড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে, পিজিটি, এফসিপিএস (পার্ট-১,২), এমডি (ইন কোর্স, পার্ট-১,২, থিসিস পর্ব), এম,এস (পার্ট-১,২, থিসিস পর্ব, সিসি) ইত্যাদি ব্যবহার করছেন, যা কোন স্বীকৃতি অতিরিক্ত চিকিৎসা যোগ্যতা নয়। তাছাড়া স্বীকৃত পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী না থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সার্জারি বিশেষজ্ঞ, গাইনী বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি ব্যবহার করছেন, যা বিএমডিসি আইনের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আবার কোন কোন চিকিৎসক তাদের ব্যবস্থাপত্রে এমন কিছু ওষুধ লিখছেন, যা সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ। নিবন্ধিত চিকিৎসকদের উপরোল্লিখিত আইন পরিপন্থী কাজ হতে বিরত থেকে যথাযথাভাবে অনুসরণকরত চিকিৎসা কার্য পরিচালনা করার জন্য জানানো যাচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, বিএমডিসির ২২(১) ধারা অনুযায়ী নিবন্ধন ব্যতীত এলোপ্যাথি চিকিৎসা নিষিদ্ধ। অন্য কোন আইনে যা, কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীনে নিবন্ধন ব্যতীত কোন মেডিক্যাল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এলোপ্যাথি চিকিৎসা করতে, অথবা নিজেকে মেডিক্যাল চিকিৎসক বা, ক্ষেত্রমত, ডেন্টাল চিকিৎসক বলে পরিচয় প্রদান করতে পারবেন না। কোন ব্যক্তি এই ধারা লঙ্ঘন করলে উক্ত লঙ্ঘন হবে একটি অপরাধ এবং তার জন্য তিনি ৩ বছর কারাদ- অথবা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ- অথবা উভয় দ-ে দ-নীয় হবেন। আর ২৯(১) ধারা অনুযায়ী ভুয়া পদবি, ইত্যাদি ব্যবহার নিষিদ্ধ। ওই আইনের অধীন নিবন্ধনকৃত কোন মেডিক্যাল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এমন কোন নাম, পদবি, বিবরণ বা প্রতীক এমনভাবে ব্যবহার বা প্রকাশ করবেন না, যার ফলে তার কোন অতিরিক্ত পেশাগত যোগ্যতা আছে মর্মে কেউ মনে করতে পারে। যদি না তা কোন স্বীকৃত মেডিক্যাল চিকিৎসা-শিক্ষাগত যোগ্যতা বা স্বীকৃতি ডেন্টাল চিকিৎসা শিক্ষা যোগ্যতা হয়ে থাকে। ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রীপ্রাপ্তরা ব্যতীত অন্য কেউ তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবে না। কোন ব্যক্তি ওই উপধারা লঙ্ঘন করলে উক্ত লঙ্ঘন হবে একটি অপরাধ এবং তার জন্য তিনি ৩ বছর কারাদ- বা ১ লাখ টাকা অর্থদ- অথবা উভয় দ-ে দ-নীয় হবেন এবং উক্ত অপরাধ অব্যাহত থাকলে প্রত্যেকবার তার পুনরাবৃত্তির জন্য অন্যূন ৫০ হাজার টাকা অর্থদ-ের অতিরিক্ত হিসাবে দ-নীয় হবেন। এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বেসরকারী চিকিৎসা সেবা আইন না থাকায় কোয়াক চিকিৎসকেরা নিজেদের বিভিন্নভাবে পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ওই ধরনের চিকিৎসকেরা প্রাইভেট মেডিক্যাল প্র্যাক্টিশনার্সের মধ্যে পড়ে না। তবে তাদের অনেকে কাজ করতে করতে চিকিৎসা শাস্ত্রের ওপর ভাল অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন। ওই ধরনের চিকিৎসকদের একটি শ্রেণীতে ফেলে দিয়ে তাদের কার্যপরিধি নির্ধারিত করে দেয়া যেতে পারে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরালো করাও জরুরি।