বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। সোমবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, তারেক রহমান সাহেবের কাছে যদি কোনো বাংলাদেশী পাসপোর্ট থাকে এটিই তারা আগে প্রদর্শন করুক। আপনাদের অবগতির জন্য আমি জানাতে চাচ্ছি, তারেক রহমান ওয়ান ইলেভেনের সময় মুচলেকা দিয়ে বিদেশে যাওয়ার পরে একবার তিনি পাসপোর্ট রিনিউ করেছে বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে। এরপরে তিনি ব্রিটেন হোম অফিসের মাধ্যমে বাংলাদেশ দূতাবাসে তাঁর পাসপোর্ট স্যালেন্ডার করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য বাংলাদেশ হাই কমিশনে কোনো আবেদন করেছেন কী না এটা যদি তারা দেখাতে পারে তাহলে আমরা তাদের বক্তব্যকে স্বাগত জানাবো। মূলত তিনি বাংলাদেশের পাসপোর্ট স্যালেন্ডার করেছেন এবং তিনি ব্রিটেনে এখন কি স্ট্যাটাসে আছেন এটা আপনারা সবাই জানেন।
সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কোনো মিথ্যাচার করেননি। তিনি সত্য তথ্য উপস্থাপন করেছেন। এ বিষয়ে যদি কোনো আইনী নোটিশ দেওয়া হয়, সে নোটিশ প্রাপ্ত হলে সে অবশ্যই যথাযথ জবাব দেবেন। সত্য তথ্য তিনি প্রকাশ করেছেন, সত্য তথ্য প্রকাশ করার জন্য যদি ক্ষমা চাইতে হয় তাহলে সেটা দুর্ভাগ্যজনক বিষয়।
তিনি বলেন, প্রচলিত দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মাননীয় আদালত দুর্নীতির দায়ে বিএনপি চেয়ারপারস বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দিয়েছেন। আপনারা বেগম জিয়ার পুত্র তারেক জিয়া ইতিপূর্বে আদালত কর্তৃক দন্ডিত হয়েছেন এবং আদালতের কাছে আত্মসমর্পণ না করে লন্ডনে পালিয়ে আছেন। আমার অবাক বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং লন্ডনে পলাতক সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্পর্কে নানা রকম মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জিয়া পরিবার ধ্বংসের চক্রান্ত করা হচ্ছে বলে সরকারের প্রতি হাস্যকর-মনগড়া অভিযোগ করেছেন। প্রকৃত পক্ষে জিয়া পরিবার ধ্বংসের নায়ক সয়ং তারেক রহমান। জিয়া পরিবার ধ্বংসের কোনো অভিপ্রায় সরকার বা আওয়ামী লীগের নেই।
তিনি বলেন, দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস বাদের মদদদাতা তারেক রহমান সেই দল ধ্বংসের জন্য অন্য কোনো শক্তির প্রয়োজন নেই। আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।
একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানিয়ে বিএনপি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে কলঙ্কিত করেছে দাবি করে স্বপন বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা চিহ্নিত ও সাজাপ্রাপ্তদের দেশে ফিরিয়ে এনে সরকার আইনের হাতে সোপর্দ করে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আইনের শাসন সম্মুন্নত রাখার স্বার্থেই তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে জিয়া পরিবার ধ্বংসের চক্রান্ত আবিস্কার করে বিএনপি হাস্য-রসের সৃষ্টি করেছে।
এ সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে ‘হাইড্রোলিক টকিং ডল’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন মিডিয়ার সামনে শব্দ সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছেন। আপনারা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পরও জিয়া হত্যার বিচার করতে পারেননি কেন? এমনকি ক্যাবিনেটি সিদ্ধান্ত নিয়ে জিয়া হত্যা মামলাকে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করেছেন।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক সন্ত্রাস করে আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারেক রহমান নিজেই নিজের রাজনৈতিক কবর রচনা করেছেন। তারেক রহমানের কাছে শুধু বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাজ্যের নাগরিকরাও নিরাপদ নয়। এ সময় ব্রিটিশ সরকারকে অবিলম্বে তারেক রহমানকে বাংলাদেশের হাতে সোপর্দ করার আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন দলের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, নির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু।