ফরিদপুরে আবার জনসেবায় এগিয়ে এলো ‘কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশন’। সেবামূলক এই সংস্থাটি স্থানীয় নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সম্প্রতি মধুখালী উপজেলার কামারখালী উদ্দীপন বিদ্যানিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই চক্ষু ক্যাম্প উদ্বোধন করা হয়। ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এবং ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী আরিফুর রহমান দোলন এর উদ্বোধন করেন। চিকিৎসা নিতে আসা শত শত মানুষের উদ্দেশ্যে দোলন বলেন, ‘আমি আপনাদেরই সন্তান। আপনাদের ছেলে হিসেবে আমি মনে করি, যারা পিছিয়ে পড়েছে, অবহেলিত, অর্থাভাবে যারা ঠিকমত চিকিৎসা নিতে পারছে না, বিশেষ করে যারা চোখের সমস্যায় ভুগছেন, আমি মনে করি আমার একটি সামাজিক দায় আছে, এই সমস্ত অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো।’ কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রায়ই নানা ধরনের সেবামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়। ভবিষ্যতেও নানা ধরনের সেবামূলক কর্মসূচি নিয়ে হাজির হওয়ার অঙ্গীকার করেন দোলন। ‘আমি আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি, আজকে যে কঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এখানে আমরা স্বাস্থ্যসুবিধা চালু করলাম এটা শুরু মাত্র। ভবিষতে আরো জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি নিয়ে কঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশন আপনাদের মাঝে হাজির হবে।’ সরকার এবং কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য অভিন্ন জানিয়ে ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী দোলন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য হচ্ছে অবহেলিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষকে সেবা দিয়ে দেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতিতে তারা যেন সামিল হতে পারে সেইভাবে প্রস্তুত করা।’ ‘আমরা শুধু ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে না, সরকার যেন আরো বেশি করে আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পারে, সরকার থেকে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ এনে আপনাদের স্বাস্থ্যসেবা করা যায় সেই বিষয়েও কাজ করতে চাই।’ সরকার যেসব সেবা জনগণকে দিতে চাইছে জনগণ নানা কারণে সেভাবে সেবা পাচ্ছে না বলেও আক্ষেপ করেন দোলন। বলেন, ‘ক্ষেত্র বিশেষ রাজনৈতিক নেতৃত্বে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বে দুর্বলতার কারণে অথবা আন্তরিকতার অভাবে অনেক সময় কেন্দ্রীয় সেবাগুলো আপনাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।’ ফরিদপুর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য দোলন বলেন, ‘আমি একটি কথা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আপনাদের মধ্যে অনেকের হয়তো এই ধারণা আছে, আরিফুর রহমান দোলন ফরিদপুর-১ আসনের এমপি হতে চায়। কিন্তু আমি এমপি হতে চাই না। আমি আপনাদের সেবক হতে চাই।’ ‘আমি নিজেকে আপনাদের ভৃত্য, চাকর হিসেবে কাজে লাগতে চাই। আমি মনে করি এই মানসিকতা না নিয়ে জনগণের পাশে থাকা না যায় কোনো দিনও সেবা করা সম্ভব না।’ জনপ্রতিনিধিদের কাজ জনগণের সেবা দেয়া উল্লেখ করে দোলন বলেন, দেশের আসল মালিক জনগণ। তারা ভোট দিয়ে অন্যদেরকে দায়িত্ব দেন। ‘যারা ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্য, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের সদস্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং এমপি মানুষের সেবা করার জন্য সরকার তাদেরকে জনগণের করের পয়সায় যে তহবিল সেই তহবিল থেকে সম্মানি দেয়।’ জনগণের মালিকানার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে দোলন বলেন, ‘উপজেলা মহোদয় গাড়ি পায় কার টাকায়? আপনাদের টাকায়। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাড়ি হাকান কার টাকায়? জনগণের টাকায়। এমপি মহাদয় লক্ষ লক্ষ টাকা সম্মানী পান কার টাকায়? এই আপনাদের মতো অবহেলিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের টাকায়।’ ‘তাহলে আপনারা কেন অবহেলিত থাকবেন? আপনারা কেন পিছিয়ে থাকবেন? ভোট যখন আসে পোস্টার ছাপানো হয়। পোস্টারে কী লেখা থাকে? অমুক ভাইকে তমুক মার্কায় ভোট দিয়ে জনগণকে সেবা করার সুযোগ দিন। কার সেবা কে করে, চাকর মনিবের সেবা করে।’ ‘ভোটের সময় নিজেকে চাকর হিসেবে উপস্থাপন করছে, ভোট যখন পার হয়ে যাচ্ছে তখন নির্বাচিত হয়ে মনিবের আসনে বসছে। মনিব কখনও চাকরের সেবা করে না। কিন্তু আপনারা যারা জনগণ তারাই হচ্ছেন আসল মনিব।’ দোলন বলেন, ‘আমি এমপি হতে আপনাদের জন্য কাজ করছি না। আমি মনে করি মানব সেবাই হচ্ছে প্রকৃত ধর্ম। আপনাদের সেবা করে এই পৃথিবী থেকে একজন ভাল মানুষ যদি বিদায় নিতে পারি আমি মনে করি সেটিই হবে আমার পরম পাওয়া।’ ‘আগামীতে প্রমাণ করতে হবে, আপনারাই হচ্ছেন প্রকৃত সকল ক্ষমতার উৎস। রাষ্ট্র জনগণের জন্য, ক্ষমতা মানুষের কল্যাণের জন্য, এই জনপ্রতিনিধিরা যেই সমস্ত সুবিধা পাচ্ছেন, সেটি আপনাদেরকে সেবা দেয়ার জন্য। এটি যেন ভবিষতে নিশ্চিত করা যায় সেই জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার ওপরও গুরুত্ব দেন দোলন। বলেন, ‘এই জন্য যে, দেশের উন্নতি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য তিনি কাজ করছেন। কোনো স্থানীয় নেতা তার যদি কোনো ভুল হয় প্রয়োজনে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই নেতাকে পাল্টাতে হবে। কিন্তু শেখ হাসিনাকে সমর্থন জানাতে হবে।’ ‘এই দেশকে জঙ্গিবাদ মুক্ত করতে, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’ ‘আমি আপনাদের কাছে দাবি জানাই, কামারখালী ইউনিয়ন যেন আরও বেশি করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির ঘাঁটি হয় আপনারা সেই জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।’ ‘সারাদেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে, উন্নয়নের যে মহাসড়কে শেখ হাসিনা সারা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন, সেই মহাসড়কে এই অঞ্চলও সামিল হতে পারবে।’ ‘আমাদেরকে যদি আপনারা আরো বেশি করে কাজে লাগান, কাজ করার সুযোগ করে দেন, আশা করি এই অঞ্চল আর পিছিয়ে থাকবে না।’ বিএনএসবি জহুরুল হক চক্ষু হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ক্যাম্পটি পরিচালনা করেন- প্রখ্যাত চক্ষু সার্জন অধ্যাপক ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী। সমন্বয়কারী ছিলেন- ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি সাজ্জাদ বাবু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ফরিদপুর জেলা পরিষদ সদস্য ও জেলা কৃষকলীগের সদস্য সচিব শেখ শহীদুল ইসলাম শহীদ, উপজেলা কৃষকলীগ নেতা, সাবেক চেয়ারম্যান খুরশীদ আলম, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা একরামুল হক তপন, কামারখালী ইউপি আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শাহাদত হোসেন সাবু, উদ্দীপন বিদ্যানিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শশাংক শেখর শাহা প্রমুখ।