দেশের বারো জেলায় বজ্রপাতে প্রাণ গেছে ২৩ জনের। দগ্ধ হয়েছেন আরও ৩১ জন। এর মধ্যে হবিগঞ্জে ছয়জন, সুনামগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নীলফামারী, রাজশাহী, গাজীপুর ও কিশোরগঞ্জে দু’জন করে এবং সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে একজন করে মারা গেছেন। গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঝড় ও বজ্রবৃষ্টিতে এ হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে পৃথক স্থানে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ দু’জন হলেন- ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুর্বাকান্দা গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে জুয়েল আহমদ (১৬) ও শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের ইসহাক আলীর ছেলে আলমগীর মিয়া (২২)। সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের কাজিপুর বজ্রপাতে সমতুল্লাহ (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় শাকিল মিয়া (১৫) নামে এক স্কুলছাত্র দগ্ধ হয়েছে। সমতুল্লাহ উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের পানাগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। আহত শাকিল একই উপজেলার খাস রাজবাড়ি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে। গাইবান্ধা: গাইবান্ধার ফুলছড়িতে বজ্রপাতে মহর আলী (৩৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। মহর উপজেলার আলী উড়িয়া ইউনিয়নের কাবিলপুর গ্রামের মৃত আবদুর রশিদ মিয়ার ছেলে। মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে বজ্রপাতে ইয়াকুব আলী (৪৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। ইয়াকুব উপজেলার বাঁচামারা ইউনিয়নের হাচাদিয়া গ্রামের হাবেজ আলীর ছেলে। এছাড়া দৌলতপুরের কলিয়া ইউনিয়নের তালুকনগর এলাকায় বজ্রপাতে আশরাফুল ইসলাম অন্তর নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও সাত স্কুলছাত্র। রাজশাহী: রাজশাহীর তানোর উপজেলায় বজ্রপাতে দু’জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দু’জন। নিহত দু’জন হলেন- উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের দুবইল নামোপাড়া গ্রামের সামসুদ্দীনের ছেলে সোহাগ আলী (১৮) ও বাতাসপুর গ্রামের লোকমান আলী ছেলে কৃষক আনছার আলী (৩০)। আহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় বজ্রপাতে আলাল উদ্দিন নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহের পৃথক স্থানে বজ্রপাতে আরও ১২ জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে ধান কাটা শ্রমিকসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরো নয়জন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে জেলার বানিয়াচং, নবীগঞ্জ, লাখাই ও মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন-সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার দত্তকান্তি গ্রামের জয়নাল মিয়া (৬০), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার দাইরপুর গ্রামের স্বপন দাস (৩৫), নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের বৈলাকীপুর গ্রামের হরি পালের ছেলে নারায়ণ পাল (৩৫), লাখাই উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের মৃত আবদুস শহিদের ছেলে ছুফি মিয়া (৩৫), নবীগঞ্জ উপজেলার বড় বাকৈর ইউনিয়নের আমড়াখাই গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে আবু তালিব (২০) ও মাধবপুর উপজেলার পিয়াইম গ্রামের রামকুমার সরকারের ছেলে জহরলাল সরকার (২৩)। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে জেলার বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতসহ প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টির মধ্যে বানিয়াচং উপজেলার সৈদরটুলা এলাকায় ধান কাটার সময় বজ্রপাত হলে ঘটাস্থলেই জয়নাল মিয়ার মৃত্যু হয়। তিনি সিরাজগঞ্জ থেকে সৈদরটুলা গ্রামের তাহেদ মিয়ার বাড়িতে ধান কাঁটা শ্রমিক হিসেবে এসেছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে থাকা একই এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে কামরুল ইসলাম (২২) আহত হন। দুপুরে উপজেলার মাকালকান্দি হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মারা যান স্বপন। এ সময় আহত হন মাকালকান্দি গ্রামের গোপেশ দাসের ছেলে দিপুল দাস (৩৭), একই গ্রামের বিষ্ণুপদ (৪৫) এবং দিরাই উপজেলার আরো দুই শ্রমিক। ওই দুইজনের নাম পাওয়া যায়নি। একই উপজেলার নূরপুর হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে আহত হন তকবাজখানী গ্রামের ওয়াহিদ আলীর ছেলে মিজানুর রহমান এবং দৌলতপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁওয়ের মর্তুজ আলীর ছেলে জহুরুল মিয়া। এদিকে নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের ইলামের হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মারা যান নরায়ণ পাল। এ সময় আহত হন একই ইউনিয়নের সরদারপুর গ্রামে বাড়ির উঠানে আখলুছ মিয়ার ছেলে হাবিবুর রহমান (২০)। এ ছাড়া পাশের হাওরে ধান কাটার সময় আবু তালিব মারা যান। এতে আহত হন একই উপজেলার গোলডুবা গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩৫) এবং মার্কুলী এলাকার রাশেদ মিয়ার ছেলে ইউনুছ মিয়া (৩০)। অপরদিকে লাখাই উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের উত্তর হাওর থেকে গরু নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে আহত হন ছুফি মিয়া। পরে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এছাড়া মাধবপুর উপজেলার পিয়াইম গ্রামে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মারা যান জহরলাল সরকার। বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুন খন্দকার, লাখাই ইউএনও মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান, মাধবপুর ইউএনও মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান ও নবীগঞ্জ ইউএনও তৌহিদ বিন হাসান এসব তথ্য জানিয়েছেন। হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফজলুল জাহিদ পাভেল বলেন, নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জে পৃথক বজ্রপাতে নারীসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ দু’জন হলেন-নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়নের পরিষদপাড়া মাঈন উদ্দিনের ছেলে শাহ জালাল (২৫) ও কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের আশুতিয়া এলাকার সুধীর চন্দ্র বর্মণের স্ত্রী দিপালী রানী বর্মণ (৩৮)। নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের তিলাব গ্রামে বজ্রপাতে কুলফি আক্তার (০৮) নামে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। কুলফি ওই গ্রামের শাহ কামালের মেয়ে। মুন্সিগঞ্জ: মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মো. কামাল হোসেন (৩২) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। কামাল ঠাকুরগাঁও জেলার গাছিডাঙ্গা গ্রামের মো. আকবর আলীর ছেলে। নীলফামারী: নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় বজ্রপাতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ দু’জন হলেন-উপজেলার বালাগ্রাম ইউনিয়নের মৃত ইসলাম উদ্দিনের স্ত্রী আছমা খাতুন (৫০) ও কাঁঠালী দেশীবাই এলাকার মৃত রবিউল আলমের ছেলে নুরল আমিন (৪০)। কাপাসিয়ায় বজ্রপাতে দ্ইু দিনমজুরের মর্মান্তিক মৃত্যু গাজীপুর: কাপাসিয়ায় গতকাল বুধবার দুপুরে ফসলের ক্ষেতে ধান কাটার সময় বৈরী আবহাওয়ায় বজ্রপাতে দুই দিনমজুরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার ঘাগটিয়া ইউনিয়নের সালদৈ গ্রামের চিনার চুল বিল থেকে ধান কেটে বাড়ি ফিরার সময় দিনমজুর মমিনুর রহমান বজ্রপাতে আক্রান্ত হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। সে কুড়িগ্রাম জেলার কচাঘাটা উপজেলার সভারটেক গ্রামের আহছান আলীর পুত্র। সে সালদৈ গ্রামের জয়নাল বেপারীর ধান কাটার শ্রমিক হিসাবে কয়েকদিন যাবত কাজ করছিল। অপর দিকে উপজেলার সন্মানিয়া ইউনিয়নের দক্ষিনগাঁও চন্ডালহাতা বিলে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে আক্রান্ত হয়ে মোতালিব (৪০) নামে এক দিনমজুর ঘটনাস্থলে মারা যায়। সে দক্ষিনগাঁও টানপাড়ার মৃত- আলীম উদ্দিন ভূইঁয়ার পুত্র। সে তার ভাতিজা নজরুলের ক্ষেতে ধান কাটছিল। খবর পেয়ে কাপাসিয়া থানার এস আই শাহজাহান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।