বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সংকেত পাচ্ছে গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশন
তারিথ
: ১৩-০৫-২০১৮
অনলাইন ডেস্ক :
গতকাল মহাকাশে উৎক্ষেপণের এক ঘণ্টা ১০ মিনিট পর থেকেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর টেলিমেট্রি সংকেত পাওয়া পাচ্ছে গাজীপুরের গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস স্টেশানের উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনের ৩০ মিনিট পর যখন কক্ষ পথে পৌঁছায়; এর ৪০ মিনিট পরই সংকেত পায় ইটালি, কান এবং গাজীপুরে স্থাপিত গ্রাউন্ড স্টেশন।
স্যাটেলাইটটি সচল আছে। এখন পর্যন্ত এর কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। ৩৬ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এটি তার নির্ধারিত স্থানে পৌঁছবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ গ্রাউন্ড স্টেশনের নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম বলেন, গতকাল আমাদের স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। উৎক্ষেপণের আধা ঘণ্টা পর অরবিটে পৌঁছায়। তার ৪০ মিনিট পর আমরা এখানে টেলিমেট্রিটা পাই। টেলিমেট্রি পাওয়া মানে হচ্ছে, আমরা স্যাটেলাইটের সঙ্গে যুক্ত হলাম। স্যাটেলাইট সুস্থ আছে, ভাল আছে এবং তার কক্ষপথে সে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এর পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে, ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায়ংশে যে জায়গাটা কেনা আছে সেখানে পৌঁছাতে সাত থেকে ১০ দিন সময় লাগবে। এটা আটদিনও হতে পারে, নয়দিনও হতে পারে। এটা হওয়ার পর আমরা বাকি ধাপগুলো শুরু করবো।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, এখান থেকে আমরা হয়তো তিন মাস পর থেকে কার্যক্রম শুরু করতে পারবো। স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এ ৪০টি ট্রান্সফোল্ডার আছে। এর মধ্যে ২৬টি কেইউ-ব্রান্ডের আর সি-ব্রান্ডের ১৪টি। এ ছাড়াও রিডারনেনসি ছয়টি ট্রান্সপোল্ডার আছে। অন্যগুলো যদি কখনো অকার্যকর হয়ে যায় তাহলে এই ছয়টি রিডারনেনসি ব্যবহার করা যাবে। গত শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টা ১৫ মিনিটে দেশের প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহটি কক্ষপথের দিকে যাত্রার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্পেস সোসাইটিতে প্রবেশের ঐতিহাসিক মুহূর্তের সূচনা হয়।
মার্কিন কোম্পানি স্পেসএক্সের সর্বাধুনিক রকেট ফ্যালকন-৯ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপ ক্যানভেরাল উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে স্যাটেলাইটটি নিয়ে কক্ষপথের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় উপগ্রহটি আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং পর্যবেক্ষণে দেশের সক্ষমতা সম্প্রসারিত করবে। এটি থেকে সার্কভুক্ত দেশগুলোর পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং কাজাকিস্তানের একটি অংশ এর সুযোগ নিতে পারবে।
স্যাটেলাইটটি প্রথমে ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর উৎক্ষেপণের কথা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ইরমার কারণে এর উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয়।
বঙ্গবন্ধু-১ এর ফলে ডাইরেক্ট-টু-হো (ডিটিএইচ) ভিডিও সার্ভিস, ই-লার্নিং, টেলি-মেডিসিন, পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি খাতসহ দুর্যোগ উদ্ধারে ভয়েস সার্ভিসের জন্য সেলুলার নেটোয়ার্কের কার্যক্রম এবং এসসিএডিএ, এওএইচও এর ডাটা সার্ভিসের পাশাপাশি বিজনেস-টু-বিজনেস (ভিসেট) পরিচালনায় আরো সহজতর করবে।
বিটিআরসি ২০১৫ সালের নভেম্বরে দেশের প্রথম এ স্যাটেলাইট নির্মাণের জন্য ফ্রান্সের থালেস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিস কোম্পানির সঙ্গে ২৪৮ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে। কোম্পানিটি কয়েক মাস আগে স্যাটেলাইটটির তৈরির কাজ সম্পন্নের পর এটি ফ্রান্সের ক্যানেস ওয়্যারহাউজে রাখা হয়। পরে ২৯ মার্চ এ স্যাটেলাইট ফ্লোরিডায় স্থানান্তর করা হয়।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য বাংলাদেশ ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়ার স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টারস্পুটনিক’ এর কাছ থেকে দুই কোটি ৮০ লাখ ডলারে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায় (স্লট) কক্ষপথ স্লট ক্রয় করে।