বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটেও ৮ বছরে ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে দ্বিগুণ
তারিথ
: ১৪-০৫-২০১৮
অনলাইন ডেস্ক :
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানি ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত। তাছাড়া অনেক এলাকার গ্রাহক পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে না। ওসব এলাকার গ্রাহকেরা বাড়ির পানির বিল পরিশোধ করার পরও ওয়াসার পাম্পস্টেশন থেকে পানি কিনতে বাধ্য হচ্ছে। সব মিলিয়েই ঢাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। কিন্তু ওয়াসার দাবি রাজধানীতে পানি সঙ্কট নেই। এমন পরিস্থিতিতে আগামী পহেলা জুলাই থেকে ফের পানির দাম বাড়াতে যাচ্ছে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের মধ্যে তৃতীয় দফায় পানি দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে গ্রাহকদের নতুন অর্থবছর থেকে পানির জন্য অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হবে। ওয়াসা ও ভুক্তভোগী সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ প্রতিবছরই কয়েক দফায় পানির দাম বাড়ায়। কিন্তু সেই অনুযায়ী সেবার মান বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই। সেবার মান না বাড়িয়ে দফায় দফায় পানির দাম বৃদ্ধিতে গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ। তাদের মতে, ওয়াসার সেবা কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই। আর ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানির দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। সূত্র জানায়, গত ৮ বছরে ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। ২০০৯ সালে প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) আবাসিক সংযোগ পানির দাম ৫ টাকা ৭৫ পয়সা, ২০১০ সালে প্রতি ইউনিট পানির দাম ৬ টাকা ৪ পয়সা, ২০১১ সালে প্রতি ইউনিট পানির দাম ৬ টাকা ৩৪ পয়সা ও ২০১২ সালে প্রতি ইউনিট পানির দাম ৬ টাকা ৬৬ পয়সা ছিল। এভাবে প্রতিবছর বাড়িয়েও ২০১৭ সালে দু’দফায় পানির দাম বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গতবছরের নভেম্বর মাসে বাড়ানো দাম অনুযায়ী বর্তমানে আবাসিক প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির মূল্য ১০ দশমিক ৫০ টাকা আর বাণিজ্যিক সংযোগে প্রতি ইউনিট পানির দাম ৩৩ দশমিক ৬০ টাকা। ঢাকা ওয়াসা জানিয়েছে, পানির উৎপাদন খরচ ও পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধিসহ অন্যান্য কারণে আগামী ১ জুলাই থেকে ৫ শতাংশ সমন্বয় করে যথাক্রমে ১০ দশমিক ৫০ টাকার স্থলে ১১ দশমিক ০২ টাকায় এবং ৩৩ দশমিক ৬০ টাকার স্থলে ৩৫ দশমিক ২৮ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই অনুযায়ী আবাসিক সংযোগে প্রতি ইউনিট পানির দাম পড়বে ১১ দশমিক ০২ টাকা আর বাণিজ্যিক সংযোগে প্রতি ইউনিট পানির দাম পড়বে ৩৫ দশমিক ২৮ টাকা। চলতি বছরের মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে আংশিক সামঞ্জস্য বিধানের লক্ষ্যে পানির দাম বাড়ানো হচ্ছে। ওয়াসা আইন ১৯৯৬-এর ২২ ধারা অনুযায়ী দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সিদ্ধান্ত মিটারবিহীন হোল্ডিং, গভীর নলকূপ, নির্মাণাধীন ভবন ও ন্যূনতম বিলসহ সকল প্রকার (পানি ও পয়ঃ) ব্যবহারের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানির উৎপাদন ক্ষমতা ২৪৫ কোটি লিটার। চাহিদা অনুযায়ী ওয়াসার পক্ষ থেকে ২৪০ কোটি লিটার উৎপাদনের কথা বলা হলেও গ্রাহকদের অভিযোগ রাজধানীর অনেক এলাকায়ই পানি পাওয়া যায় না। এনিয়ে গত কয়েক মাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে পানির দাবিতে গ্রাহকরা বিক্ষোভও করেছে। তবে ওয়াসার হিসাবে সায়েদাবাদ, চাঁদনী চক, নারায়ণগঞ্জ পানি শোধনাগার এবং ৮২৩টি গভীর নলকূপের সাহায্যে প্রতিদিন পানির উৎপাদন ২৪৫ কোটি লিটার। পানির চাহিদা ২৩৫ কোটি লিটার। কিন্তু বাস্তবে উৎপাদন কম হচ্ছে। পাম্পের উৎপাদনক্ষমতা কমে যাওয়া, পানির স্তর নেমে যাওয়া এবং বিদ্যুৎ-বিভ্রাটজনিত কারণে পানির উৎপাদন অনেক কম। আর পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী রাজধানীতে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বাড়ে। ওই হিসাবে পানির চাহিদা বাড়ার হারও ধরা হয় ৫ শতাংশ। তাই পানির চাহিদাও অনেক বেশি। এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার পরিচালক শহীদ উদ্দিন জানান, পানির সংকট না বলে কিছু এলাকার পানি সমস্যা বলা ভালো। অনেক এলাকায় ৫০ বছর আগের পাইপে পানি সরবরাহ হচ্ছে। পাইপ ফুটো হয়ে যাওয়ার কারণে ময়লা ঢুকে পানি দুর্গন্ধ হয়। যতোদিন পর্যন্ত পানির পাইপ বদলানো সম্ভব না হবে, ততোদিন এ ধরনের সংকট থাকবে।