বাদল ফরাজীর মুক্তির বিষয়ে সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে: হাইকোর্ট
তারিথ
: ১১-০৭-২০১৮
অনলাইন ডেস্ক :
একটি হত্যা মামলায় ১০ বছর ভারতের কারাগারে বন্দি জীবন কাটিয়ে সম্প্রতি দেশে ফেরা বাদল ফরাজীর মুক্তির বিষয়ে সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করছে হাইকোর্ট। বাদলের মুক্তির আদেশ চেয়ে করা রিট আবেদন ‘উত্থাপিত হয়নি মর্মে’ খারিজ করে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার এই আদেশ দেয়। আদালত বলেছে, সরকার যেহেতু উদ্যোগী হয়ে বাদলকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে এনেছে, সেহেতু সরকারই হয়ত তার মুক্তির পদক্ষেপ নেবে। এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা দেওয়া ঠিক হবে না। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব ও মোহাম্মদ কাওছার ভারত থেকে বাদলের দেশে ফেরার বিষয়টি গত রোববার হাই কোর্টের নজরে আনলে তাদের রিট আবেদন করতে বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তারা এই রিট আবেদন করেন; গতকাল বুধবার আদালতে এ বিষয়ে শুনানি হয়। রিট আবেদনে বলা হয়, বাদল ফরাজী ‘ভুল বিচারের’ শিকার হয়ে ভারতে ১০ বছর কারাভোগ করেছেন। তিনি ‘নির্দোষ হওয়ার পরও’ দেশে ফিরিয়ে এনে তাকে আবার কারাগারে নেওয়া হয়েছে, যা সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৬ ও ৪৪ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। এই যুক্তি দেখিয়ে বাদল ফরাজীকে কারামুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের প্রতি আদালতের নির্দেশনা ও রুল চাওয়া হয় ওই আবেদনে। স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পররাষ্ট্র সচিব ও পুলিশ প্রধানকে সেখানে বিবাদী করা হয়। গতকাল বুধবার রিট খারিজের আদেশে আদালত বলে, ভারতের আদালতের রায়ে দেখা যাচ্ছে তারা তাদের দেশের ওই হত্যা মামলায় বাংলাদেশের বাদল ফরাজীকেই সাজা দিয়েছে। তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি সরকার তার বিষয়ে পজেটিভ। সরকার পদক্ষেপ নিয়ে বাদল ফরাজীকে তিহার জেল থেকে এদেশের জেলে নিয়ে এসেছে। এখন তার মুক্তির ব্যাপারে সরকারই হয়ত কোনো পদক্ষেপ নেবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের প্রতি বাদল ফরাজীর মুক্তির জন্য কোনো নির্দেশনা দেওয়া ঠিক হবে না। তাই আমরা রিটটি উত্থাপন হয়নি মর্মে খারিজ করছি। ২০০৮ সালে ৬ মে দিল্লির অমর কলোনিতে এক বৃদ্ধাকে খুনের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদ- হয় বাদলের। তবে বাদল তার দুই মাসেরও বেশি সময় পর ১৩ জুলাই ভারতে ঢুকেছিলেন বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ওই হত্যাকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে বাদল সিং নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছিল পুলিশ। তাকে ধরতে সীমান্তে সতর্কতা জারি হয়েছিল। এর মধ্যে বেনাপোল চেকপোস্ট হয়ে টুরিস্ট ভিসায় ভারতে ঢুকেই গ্রেফতার হন বাংলাদেশের বাদল। হত্যাকা-ের সময় বাদল ভারতে ছিলেন না জানিয়ে তাকে মুক্তি দিয়ে দেশে ফেরত পাঠাতে ২০১২ সালে ভারতের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় দিল্লিতে বাংলাদেশের হাই কমিশন। এরপরেও ২০১৫ সালে বাদলকে দোষী সাব্যস্ত করে দিল্লির একটি আদালত। রায়ে তাকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদ-। পরে দিল্লি হাই কোর্টও সেই রায় বহাল রাখে। বাংলাদেশ হাই কমিশনের সহায়তায় বাদল ওই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেও বিফল হন। গ্রেফতার হওয়ার সময় বাদলের বয়স ছিল ১৮ বছর; সে সময় ইংরেজি বা হিন্দি জানা না থাকায় মামলা চালাতে তাকে বেগ পেতে হয়। পরে কারাগারে লেখাপড়া করে আটটি ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করেন তিনি। বন্দি প্রত্যার্পণ চুক্তির আওতায় গত ৭ জুলাই ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় বাদলকে। বর্তমানে তাকে কেরাণীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।