অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে অশুভ শক্তি সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আবার কোনো অশুভ শক্তি ক্ষমতায় এসে যেন জনগণের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য কেড়ে নিতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশের মানুষ এখন একটু সুখের মুখ দেখতে আরম্ভ করেছে। আবার কোনো অশুভ শক্তি এসে যেন মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য কেড়ে নিতে না পারে, এটাই আমি দেশবাসীর কাছে এই মহান সংসদের মাধ্যমে আবেদন জানাব।
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) ১০ম জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের (বাজেট অধিবেশন) সমাপনী ভাষণে এ কথা বলেন।
জনগণের কাছে সহযোগিতা প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতের মতো মারামারি, কাটাকাটি, সংসদে খিস্তি-খেউর যেন না শুনতে হয়। আবার যেন ওই ধরনের পরিবেশ না হয় যেখানে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে নৌকা মার্কায় জনগণ ভোট দিয়েছিলেন বলেই আমরা সরকার গঠন করে তাদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। ২০১৪ সালে আবারো শত বাধার মুখে জ্বালাও-পোড়াও সবকিছু উপেক্ষা করেও তারা ভোট দিয়েছিলেন বলেই আমরা জয়ী হয়ে সংসদে এসে সরকার গঠন করে তাদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি মানুষের কথা চিন্তা করেই এই বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সেই মোতাবেক আমরা উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশ শান্তিপূর্ণ থাক, দেশের উন্নতি ও কল্যাণ হোক, মানুষ ভালো থাকুক- সেটুকুই চাই। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত করতে পেরেছি। এখন দারিদ্র্যমুক্ত করাটাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রত্যেকের একটা ঘর হবে, নিদেন পক্ষে টিনের ঘর হলেও হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে গৃহহীন হিসেবে সারাদেশে তালিকা করা হয়েছে। এখন তাদের গৃহনির্মাণে প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা এবং বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি সংসদকে প্রাণবন্ত করে রাখায় এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই জাতীয় সংসদ দেশে গঠনমূলক সংসদীয় চর্চার একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে দেশে আশ্রয়দানের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, সমগ্র বিশ্ব বাংলাদেশের এই ভূমিকার প্রশংসা করেছে, যেটা দেশের জন্য বিরাট অর্জন।
বিশ্বে এখন আর কোনো দেশ বাংলাদেশকে অবহেলার চোখে দেখে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশ স্বীকার করেছে বাংলাদেশ কেবল উন্নয়নই করছে না তাদের উন্নয়ন স্থায়ীও হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ভাষণে তার সরকারের শাসনামলে দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৮ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, জিডিপি নিয়মিত ৭ শতাংশে কোঠায় ধরে রাখা এবং এ বছর ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন, জনগণের গড় আয়ু ৭২ বছরে উন্নীতকরণসহ দেশের বিভিন্ন আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন।
জনগণের পুষ্টিমান নিশ্চিত করার উদ্যোগ, ভিজিডি এবং ভিজিএফর মাধ্যমে দুস্থদের খাদ্য সাহায্য প্রদান, স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ প্রদান, কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা, সরকারি কর্মচারিদের ১২৩ ভাগ বেতন বৃদ্ধি, তাদের জন্য আবাসন সুবিধা ৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশে উন্নীত করার উদ্যোগ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ, দেশের শিল্পায়নে সারাদেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলাসহ সরকারের অন্যান্য উন্নয়ন উদ্যোগও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত তার সরকারের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র গড়ে তোলা, সারাদেশে বিশেষায়িত হাসপাতাল, হাসপাতালসমূহের আধুনিকীকরণ, সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ বিপুলসংখ্যক চিকিৎসক এবং নার্স নিয়োগের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি এ সময় বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়াটা অসমর্থন করে বলেন, বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়াটা আজকাল একটি ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও একই মানের চিকিৎসা এখন আমাদের দেশেও হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী সরকারি চাকরির কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের বিষয়ে বলেন, সরকার এ বিষয়টি সমাধানের জন্য একটি কমিটি করে তাদের দায়িত্ব দিয়েছে। অথচ এখনও অনেকে আন্দোলন করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় আন্দোলনের নামে অছাত্রসুলভ আচরণের সমালোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাড়িতে ভাঙচুরকারীরা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না বলেও পুনরায় হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সময়ে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে আগামীতে ক্ষমতায় এলে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বক্সকালভার্টগুলো ভেঙে নিচে খাল এবং উপরে এলিভেটেডওয়ে রাস্তা নির্মাণের মাধ্যমে রাজধানীর খাল ও জলাশয়গুলো পুনরুদ্ধার করে জলবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলেও জানান। প্রধানমন্ত্রী জনগণকে পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবার পরামর্শ দিয়ে বলেন, তাহলে আমরা মানুষের উন্নত জীবনযাপনের জন্য আরো সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার উদ্বৃতি- বাংলাদেশকে আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা নার উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করব। আর ২০২১ সালে উদযাপন করব স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং এর মধ্যেই বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হয়ে গড়ে উঠবে। সব ঘরে আমরা আলো জ্বালাব। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার একটা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। সবার অংশগ্রহণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিরোধী দল এবং যারা আছে সকলে নির্বাচনে অংশ নেবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেশকে আমরা বিশ্বের দরবারে যে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছি সেটা আমরা ধরে রেখে এগিয়ে যাব। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব।
|