সরকারি চাকরিতে মাদকাসক্তদের ঠেকাতে ডোপ টেস্টের উদ্যোগ
তারিথ
: ২১-০৭-২০১৮
অনলাইন ডেস্ক :
সরকারি চাকরি পাবে না মাদকাসক্তরা। কারণ সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে সব প্রার্থীরই স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় ডোপ টেস্ট করা হবে। ফলে ইয়াবা, গাঁজা ও হেরোইনের মতো মাদকে আসক্তরা সরকারি চাকরি পাবে না। কারণ ডোপ টেস্টে তা ধরা পড়বে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পশ্চিমা অনেক দেশের আদলে খুব শিগগিরই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি মাদকাসক্তদের সতর্ক ও সচেতন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। মূলত অভিভাবকদের টনক নড়ানোর জন্যই ওসব উদ্যোগ নেয়া হয়। তার মধ্যে মাদকাসক্তদের সরকারি চাকরিতে অযোগ্য করার জন্য ডোপ টেস্ট পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ অন্যতম। ইতিমধ্যে ওই সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয় এবং প্রধানমন্ত্রী ওই সারসংক্ষেপ অনুমোদন করেন। আর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এখন তা বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে। সূত্র জানায়, দেশের প্রতিটি সিভিল সার্জনের অফিসেই সরকারি চাকরির মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর চূড়ান্ত বাছাইয়ের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হয়। এখন তার সঙ্গে যোগ হবে ডোপ টেস্ট। ডোপ টেস্টের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। ল্যাবে সরাসরি রক্ত ও প্রশ্রাব পরীক্ষায় মাদকের কিছু লক্ষণ ধরা পড়ে। আবার দ্রুতগতিতে মুহূর্তেই সন্দেহজনক মাদকাসক্তদের পরীক্ষা করার জন্য বর্তমানে অত্যাধুনিক মানের বিশেষ কিট রয়েছে, যা শরীরে স্পর্শ করা মাত্রই নেগেটিভ পজেটিভ রেজাল্ট দেবে। তবে আপাতত প্রতিটি জেলা পর্যায়ে রক্ত ও প্রশ্রাব পরীক্ষার মাধ্যমেই মাদকাসক্ত শনাক্ত করা হবে। ধাপে ধাপে বিশেষ ইকুপমেন্ট ও কেমিক্যালস যোগান দেয়া হবে। মূলত দেশজুড়ে চলমান অভিযানের পাশাপাশি মাদকাসক্তদের সমাজে কোনঠাসা করার মতো শাস্তি দেয়ার মানসিকতা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা হলে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া উচ্চশিক্ষিত তরুণ সমাজই নয়, অর্ধশিক্ষিত বেকারও আগে থেকেই সতর্ক হয়ে যাবে। সরকারি চাকরি পেতে হলে মাদক ছাড়তে হবে, নইলে বেকার থাকতে হবে। পিয়ন থেকে বিসিএস ক্যাডার- কেউ এ শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না। সূত্র আরো জানায়, উচ্চশিক্ষিত বেকার যুবকদের অনেকেই হতাশা থেকে মাদকাসক্ত হয়। মেধার জোরে তাদের অনেকেই পরে বিসিএস-এর মতো কঠিন পরীক্ষাতেও টিকে যায় এবং তারা প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে যোগদান করে। ডোপ টেস্টের পর আর সেই সুযোগ থাকছে না। ডোপ টেস্ট ছাড়া যখন কেউ চাকরি পাওয়া যাবে না, তখন বাধ্য হয়েই নিজের প্রয়োজনেই তরুণরা মাদক থেকে দূরে থাকবে। কারণ একজন মেধাবী যখন সবকটা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শুধু ডোপ টেস্টের কারণে বাদ পড়বে, তখন সে নিজ পরিবার ও সমাজের কাছে ধরা খেয়ে যাবে। যা হবে ওই পরিবারের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। এমন কঠিন পরিণতির কথা ভেবেই চাকরিপ্রার্থীরা মাদক থেকে দূরে থাকবে। যারা মাদকাসক্ত হয়ে গেছে তারা সরে আসবে ওই পঙ্কিল পথ থেকে। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই ড্রাগ এডিক্টদের ঘৃণার চোখে দেখা হয়। অনেক দেশেই তাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে অবাঞ্ছিত করা হয়। সরকারি চাকরিতেও অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এখন এদেশেও ওই ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হলে অবশ্যই তা মাদক নির্মূলে ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। কারণ ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজার মতো মাদক কেউ শুধু একবার খেয়েই ছেড়ে দেয় না। কিংবা মাসে দু’একবার খায় না। ওগুলো যারা খায় তারা নিয়মিতই খায়। প্রতিদিন তাদের খেতে হয়। তারা হার্ডকোর ড্রাগস এডিক্টস বা পেশাদার মাদকাসক্ত বলে চিহ্নিত। ডোপ টেস্টে তা ধরা পড়বেই। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, ডোপ টেস্টের উদ্যোগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হলেও বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের আগে তো প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাটা বাধ্যতামূলক। তার সঙ্গে যোগ হবে শুধু মাদকের ওই ডোপ টেস্ট। যেখানেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে সেখানেই থাকবে ডোপ টেস্টেরও ব্যবস্থা। আসলে তা প্রাথমিক সিদ্ধান্ত। এখন কিভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে তা নিয়ে কাজ চলছে।