সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া গণসংবর্ধনা উপলক্ষে গতকাল শনিবার রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট দেখা দেয়। বিভিন্ন দিক থেকে আসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বহনের জন্য বেশিরভাগ বাস রিজার্ভ থাকে এবং সমাবেশ উপলক্ষে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার কারণে এমনটি ঘটে। গতকাল শনিবার রাজধানীজুড়ে যাত্রীদের অসহায় চিত্র চোখে পড়ে। পরিবহন সংকটে দুর্ভোগে পড়েন কর্মজীবী হাজারো মানুষ। ইমরান হোসেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ছোট পদে চাকরি করেন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে দাঁড়িয়ে আছেন কর্মস্থল শ্যামলীতে যাওয়ার জন্য। তাঁর চারপাশে দাঁড়িয়ে আছেন আরো বহু মানুষ। কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পেলেন না তাঁরা। আরো বেশ কিছুক্ষণ পর একটা বাস এলে দৌড়ে গেলেন যাত্রীরা। চলন্ত গাড়িতেই ধাক্কাধাক্কি করে যে কজন পারলেন উঠলেন। তাঁদের নিয়েই ছেড়ে গেল বাস। বাকিরা অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন চলন্ত বাসের দিকে। আবারও বাসের অপেক্ষা। একই দৃশ্য দেখা গেছে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে গিয়েও। যাত্রী সংখ্যার তুলনায় পরিবহন ছিল একেবারেই অপ্রতুল। গুলিস্থানগামী শিকড় পরিবহনের একটি বাস মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে এসে থামলেই হুড়মুড় করে যাত্রীরা উঠতে থাকেন। বাসের ভেতরে দাঁড়ানোর বিন্দুমাত্র জায়গা নেই, তবুও ঝুলে হলেও যেতে চাইছেন সবাই। রহিম হোসেন নামের একজন বাসে উঠেই বলে উঠলেন, বাস-টাস কি মইরা গেছে নাকি? এভাবে ঠেলাঠেলি করে যাওন যায়! কথা হয় অফিসগামী এমন আরো বেশ কয়েকজনের। তাদের কেউ যাবে কাওরানবাজার, কেউ শহবাগে বারডেম হাসপাতালে, আবার কেউ ফার্মগেট। কিন্তু হঠাৎ এই পরিবহন সংকট কেন জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী মিরপুর রোডের ১৫ নম্বর বাসের লাইনম্যান বলেন, সকাল ১০টার মধ্যে প্রতিদিন ৪০টির মতো বাস ছেড়ে যায় যাত্রাবাড়ী থেকে। কিন্তু আজ (গতকাল শনিবার) বাস এসেছে মাত্র চার-পাঁচটি। কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, বাসগুলো মিরপুরে রাখা হয়েছে। জনসভার লোকজন আসা যাওয়ার জন্য সব বাসই আগে থেকেই রিজার্ভ রাখা হয়েছে। আর এতেই এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। শিকড় পরিবহনের বাংলা মোটরের ওয়ে বিল কাউন্টার ম্যানেজার মো. সোহেল বলেন, সারাদিনে মোট ৩০টি শিকড় পরিবহনের বাস চলে এই রুটে। কিন্তু সকাল থেকে হিসাব পেয়েছি ১৪টি বাসের। বাকিগুলো জনসভার (গণসংবর্ধনা) কাজে রিজার্ভ করা। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিবহনের ওয়ে বিল কাউন্টারের ম্যানেজার ইউসুফ খান। তিনি বলেন, আমাদের ১১০টি বাস চলে এই রুটে। তবে এখন পর্যন্ত ৭৫টি বাস পেয়েছি। বাকিগুলো বিভিন্ন কাজে আছে। এসব নিয়ে শিকড় পরিবহনের ম্যানেজার মো. জসিমউদ্দীন সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিবহনের ম্যানেজার তহিদুজ্জমান বলেন, অনেকগুলো বাস জুরাইন ও সাভারসহ বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়েছি প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনার লোক নিয়ে আসার জন্য। এই কারণেই রাস্তায় আজকে বাস কম। নানা সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গতকাল শনিবার গণসংবর্ধনা দেয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য রাজধানীর রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিল শতশত পুলিশ কর্মকর্তা। সকাল ১০টা থেকেই অবস্থান নেন পুলিশ সদস্যরা। এ ছাড়া বিভিন্ন ভবনের ছাদের উপরেও তাদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে।