ভারি যানবাহন চালাতে সরকারের দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ
তারিথ
: ২৪-০৭-২০১৮
অনলাইন ডেস্ক,ফাইল ছবি :
সরকার দেশে এক লাখ নতুন দক্ষক গাড়িচালক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পেরেশন (বিআরটিসি) প্রাথমিকভাবে ৩৬ হাজার নতুন গাড়িচালক তৈরি করতে যাচ্ছে। সেজন্য বাড়ানো হচ্ছে বিআরটিসির জনবল। তাছাড়া সরকারি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চালক তৈরির ট্রেড চালুর জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে। মূলত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে সড়ক নিরাপত্তা রক্ষায় সংশ্লিষ্টরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা দক্ষ চালক তৈরির প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়তে সরকারের কাছে জায়গা বরাদ্দ চেয়েছে। পাশাপাশি সরকারি কয়েকটি কেন্দ্রেও দক্ষ চালক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সেগুলো হলো- যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র; জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। পরিবহন খাত এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশজুড়েই বাস ও ট্রাকের মতো ভারি যানবাহনে চালানোর জন্য লাইসেন্সধারী চালকের ব্যাপক অভাব রয়েছে। ফলে অদক্ষ চালকরাই সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাছাড়া মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়ানো ৮০ শতাংশ ট্রাকই জরাজীর্ণ। আর রাতে চলাচলরত বেশির ভাগ বাসেরও নেই ফিটনেস বা উপযুক্ততার সনদ। বর্তমানে দেশে ভারি যানবাহন চালানোর ক্ষেত্রে প্রায় ৮২ হাজার লাইসেন্সধারী চালকের অভাব রয়েছে। প্রতিটি ভারি যানে একজন করে চালক থাকার হিসাব থেকেই এ ঘাটতি দেখা যায়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি দূরপাল্লার বাসে বিকল্প চালক রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। সূত্র জানায়, দেশের বাস ও ট্রাকচালকদের জন্য প্রাথমিকভাবে দেশের ৪টি মহাসড়কে বিগ্রামাগার নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ওসব বিশ্রামাগার থাকবে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কে। ওসব বিশ্রামাগারে গাড়ি রাখার পর্যাপ্ত জায়গা, চালকদের বিশ্রামের জন্য ১০টি করে বিছানা, তাদের বিনোদনের জন্য টেলিভিশন, খাবারের ব্যবস্থা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা রাখা হবে। ওই বিশ্রামাগার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে সমন্বয় করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, বিগত ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ২০ ধরনের ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬২০টি যানবাহন নিবন্ধিত হয়েছে। আর ওসব যানবাহনের বিপরীতে লাইসেন্সধারী চালক আছে ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৮১৬ জন। দেশে সরকারিভাবে নিবন্ধিত যানবাহনে একজন করে চালক রাখা হলেও প্রায় অর্ধেকসংখ্যক যানবাহনেই বৈধ লাইসেন্সধারী চালক নেই। দেশে বাস ও ট্রাকসহ ভারি যানবাহন আছে ২ লাখ ২০ হাজার ৭৬৫টি। ওসব নিবন্ধিত যানবাহনের বিপরীতে চালকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে এক লাখ ৩৮ হাজার ৭৪৫টি। সেক্ষেত্রে নিবন্ধিত ভারি যানবাহনের তুলনায় লাইসেন্স প্রায় ৮২ হাজার কম। তাছাড়া বৈধ কিংবা অবৈধ চালকদের বড় একটি অংশ নিষেধ না মেনে মহাসড়কে মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে। মোবাইল ফোনে কথা বলছে অনবরত। এমনকি ওই চালকরা গতিসীমা না মেনেই ভারি গাড়ি চালায়। এদিকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রী গত ২৫ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিশেষ নির্দেশনা দেন। সেজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং নৌপরিবহনমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার মধ্যে ছিল কোনো চালকের একটানা ৫ ঘণ্টা গাড়ি না চালানো এবং বিকল্প চালক রাখা। তিনি মহাসড়কে বাস ও ট্রাকচালকদের জন্য নির্ধারিত সময়ের পর বিশ্রামের অবকাঠামোগত সুবিধা সৃষ্টিরও নির্দেশ দিয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছে। অন্যদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় জেল-জরিমানা বাড়িয়ে, নতুন লাইসেন্স পেতে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাসের বাধ্যবাধকতার বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া তৈরি করেছিল এবং গত বছরের ২৭ মার্চে তার অনুমোদন দেয়া হয়। নতুন আইন পাস হলে চালকের সহকারি হতে গেলে লাইসেন্স নিতে হবে। সেজন্য অন্তত পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ হতে হবে। বর্তমানে মোটরযান অধ্যাদেশে সহকারীদের লাইসেন্সের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত নেই। নতুন আইন পাস হলে কেউ গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে না। যদিও সড়ক পরিবহন নেতাদের আন্দোলনসহ নানা চাপে সেটি ঝুলে আছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী জানান, ভারি গাড়ির তুলনায় চালক না থাকার কারণ মূলত বিআরটিএর হয়রানি ও বিভিন্ন শর্ত। ভারি গাড়ি তাই চালকের সহকারীরাও চালায়। একই প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম জানান, নিবন্ধিত গাড়ির তুলনায় বৈধ চালক কম। এখন বড় দায়িত্ব দক্ষ চালক তৈরি করা।