ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের মতো হেভি ফার্নেস অয়েল (এইচএফও) সরাসরি আমদানি করতে চায় শিল্পোদ্যোক্তারা। কারণ আন্তর্জাতিক বাজার দরের তুলনায় দেশীয় বাজারে ফার্নেস অয়েলের দাম বেশি হওয়ায় সম্প্রতি সরকারের কাছে এক আবেদনে এমন দাবি জাননো হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) বাইরে কেবলমাত্র বিদ্যুত উৎপাদনকারীরা জ্বালানি তেল আমদানি করে। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গ্যাসের ঘাটতির কারণে ক্যাপটিভ বিদ্যুত উৎপাদনে ফার্নেস অয়েলের ব্যবহার বাড়ছে। ফার্নেস অয়েল বিপিসির কাছ থেকে কিনতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। কারণ তাতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। যা রফতানিমুখী শিল্পে সঙ্কট তৈরি করছে। বর্তমানে শিল্পোদ্যোক্তারা বিপিসির কাছ থেকে প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েল ৪২ টাকায় কিনছে। তাতে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় পড়ছে ১১ টাকা। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে ফার্নেস অয়েলের দাম অনেক কম। সরাসরি ফার্নেস অয়েল আমদানি করে বিদ্যুত উৎপাদন করলে প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে সাড়ে ৬ টাকা। বর্তমানে দেশে এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট ক্যাপটিভ বিদ্যুত উৎপাদিত হচ্ছে। এদের অধিকাংশই তিতাস গ্যাসের গ্রাহক। সূত্র জানায়, তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ৭০ শতাংশ গ্যাস ঢাকা, গাজীপুর, টঙ্গী, সাভারের অবস্থিত শিল্প ও বস্ত্র কারখানাগুলোতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ওই অঞ্চলের কারখানাগুলো ভয়াবহ গ্যাস সঙ্কটে পতিত হয়েছে। সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ২৮০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন ১৬৭ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। ঘাটতির কারণে সাভার-গাজীপুরের শিল্প কারখানাগুলোতে মানসম্মত গ্যাস সরবরাহ বিঘিœত হচ্ছে। তবে আগামী বছর এলএনজির আমদানি শুরু হলে পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, দেশে জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-বিপিসি। এর বাইরে বর্তমানে প্রায় দেড় ডজন বেসরকারি বিদ্যুতকেন্দ্রের উদ্যোক্তা সরকারের অনুমোদন নিয়ে নিজেরাই প্রয়োজনীয় ফার্নেস অয়েল আমদানি করছেন। ফলে সরকারি কেন্দ্রের তুলনায় আইপিপিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় কম হচ্ছে। এদিকে গত ১২ নভেম্বর এক চিঠিতে বিটিএমএ সভাপতি তপন চৌধুরী জানিয়েছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতির কারণে বস্ত্র কারখানাগুলোতে নিজস্ব জেনারেটর বসানো হয়েছিল। ওসব জেনারেটরে জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহৃত হয়। প্রথমে সাশ্রয়ী হলেও দুবছরে কয়েক দফায় প্রায় ২২২ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়ায় টেক্সটাইল মিলগুলোর উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্যাস সঙ্কট। ফলে অনেক কারখানা গ্যাসের পরিবর্তে ফার্নেস অয়েলে বিদ্যুত উৎপাদন করছে। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা বিপিসি করে থাকে। সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষ বিপিসি বেসরকারি বিদ্যুত উৎপাদনকারীদের তেল আনার অনুমতি দিয়েছে। বস্ত্র কারখানার মালিকরাও বিপিসির কাছে আবেদন করতে পারেন। বিপিসি খতিয়ে দেখবে শিল্প খাতে ফার্নেস অয়েল আমদানির অনুমোদন দেয়া যৌক্তিক হবে কি না।