কেউ যেন সম্পূর্ণভাবে ভাতার ওপর নির্ভরশীল না হয় : প্রধানমন্ত্রী
তারিথ
: ০২-০১-২০১৮
অনলাইন ডেস্ক :
সুবিধাভোগীরা যেন কর্মবিমুখ না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে ভাতা দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সমাজসেবা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কেউ যেন সম্পূর্ণভাবে ভাতার ওপর নির্ভরশীল না হয়। যে কর্মক্ষম, সে নিজে কাজ করে খাবে। কিন্তু সে যেন অভুক্ত না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখে অন্তত মাসে দশ কিলো চাল কিনতে পারে, সেই সমপরিমাণ আর তার সাথে আরো বেশি টাকা আমরা দিচ্ছি। কর্মক্ষম হয়েও কেউ যেন কাজ করার স্পৃহা হারিয়ে না ফেলে সেজন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যের চেয়ে বেশি ভাতা না দেওয়ার পক্ষে মত দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, এর থেকে বেশি আমি দিতে চাই না। এই কারণে যে, তাহলে কেউ আর কেউ কাজ করবে না। হাত গুটিয়ে বসে ঘরে বসে থাকবে, আর ওইভাবেই চলতে থাকবে। সরকারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা কর্মক্ষম তারা যেন কাজ করে নিজের উপার্জন বাড়াতে পারে। সাধারণ নাগরিকদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে তা আর্থ-সামাজিকতার ওপরও প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করেন সরকার প্রধান। সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া ভাতা একটি পরিবার চালানোর জন্য যথার্থ নয় বলে বিভিন্ন সময়ে যারা সমালোচনা করেছেন, তার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে কিছু সুশীল সমাজ আছে। তারা প্রাকটিক্যাল চিন্তা ভাবনা করে না। তারা মন দিয়েই দেখে, হাতে কলমে হাত দিয়ে দেখে না। অনেককেই বলতে শুনেছি, এই ভাতা দিচ্ছে, এই ভাতায় কী সংসার চলে ? সকল সংসার চালানোর দায়িত্ব তো সরকারের না। যার যার সংসার সে সে চালাবে। কেউ যেন অভুক্ত না থাকে, অবহেলিত না থাকে; সেটুকু দেখার দায়িত্ব সরকারের। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ অবহেলিত, অভুক্ত না থাকে তার ব্যবস্থাটাই তো আমরা করে দিচ্ছি। বাকিটা তাকে কাজ করে খেতে হবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের দেওয়া বিভিন্ন ভাতার পরিমাণও তুলে ধরেন। বয়স্কভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি কয়েকগুণ বাড়ানোর কথাও উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৫ লাখ প্রবীণ ব্যক্তিকে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে বয়স্কভাতা দেওয়া হচ্ছে। এবছর ১২ লাখ ৬৫ হাজার নারীকে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে বিধবা ভাতা দেওয়া হচ্ছে; এজন্য বছরে ৭৫৯ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবন্ধী ভাতা জনপ্রতি ২০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে; এ খাতে সুবিধাভোগীর সংখ্যা এক লাখ থেকে আট লাখ ২৫ হাজার জনে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছর ৮০ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০০ টাকা, মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬০০ টাকা, উচ্চমাধ্যমিকপর্যায়ে ৭০০ টাকা এবং উচ্চতর পর্যায়ে ১২০০ টাকা করে প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ৮৬ হাজার ৪০০ এতিম শিশুকে জনপ্রতি মাসিক এক হাজার টাকা হারে ক্যাপিটেশন গ্রান্ট দেওয়া হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে সব ভাতাভোগী যাতে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভাতা পেতে পারে সেজন্য ‘ক্যাশ ট্রান্সফার মডার্নাইজেশন (সিটিএম) প্রকল্প গ্রহণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা চাচ্ছি ভাতাভোগীদের টাকা সরাসরি তাদের হাতে পৌছে যাবে। তিনি বলেন, “কর্মবিমূখ জাঁতি গড়ে উঠুক; সেটা আমরা চাই না। বরং যার যার কর্মক্ষমতা আছে, কর্মশক্তি আছে; সেটা যেন কাজে লাগাতে পারে।” দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন আইন প্রণয়নের কথাও বলেন শেখ হাসিনা। উপজেলা পর্যায়ে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসায় ৪১৯ উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স হাসাপাতালে সমাজসেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণ করার কথাও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। এতিম ও প্রতিবন্ধী শিশুদের সব পুরনো ভবন পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উন্নত ও আধুনিক ভবন করে দেব, যা হবে দৃষ্টিনন্দন। জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল বাস্তবায়নে সমাজসেবা অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ওই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনও বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ সচিব জিল্লার রহমান। পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে আগারগাঁওয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তর চত্বরে চারদিনের ‘সমাজসেবা মেলা’ উদ্বোধন করেন।