রেলের সেইল ডিপো থেকে চুরি ও নষ্ট হচ্ছে পুরনো যন্ত্রাংশ
তারিথ
: ১৩-০১-২০১৮
অনলাইন ডেস্ক,ফাইল ছবি :
বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সেইল ডিপোতে বিপুল পরিমাণ পুরনো যন্ত্রাংশ বছরের পর বছর খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে। চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে অবস্থিত সেইল ডিপোতে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা পুরনো অবিক্রীত রেলের যন্ত্রাংশ মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি অহরহ চুরির ঘটনাও ঘটছে। অপ্রতুল অবকাঠামো ও নিরাপত্তা দুর্বলতায় রাষ্ট্রীয় ওসব সম্পদ নষ্ট ও চুরি হলেও কর্তৃপক্ষের ডিপোর অবকাঠামো উন্নয়নে নজর নেই। ইতিপূর্বে গভীর রাতে সেইল ডিপোর দেয়াল টপকে একদল চোর প্রায় এক হাজার কেজি স্ক্র্যাপ লোহা সরিয়ে নেয়। কিন্তু স্ক্র্যাপগুলো গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় পাহাড়তলী পুলিশ ফাঁড়ির টহল দল ওসব মালামালসহ একজনকে আটক করে। ওই ঘটনায় খুলশী থানায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী একটি মামলাও করে। রেলের পুরনো যন্ত্রাংশ চুরির একটি ঘটনায় টহল পুলিশের কারণে ঠেকানো গেলেও প্রায়ই ওই রকম ঘটনা ঘটছে। আর সেজন্য ডিপোর অবকাঠামো দুর্বলতাকেই দায়ী করছে রেলের নিরাপত্তা বিভাগ। রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় রেলের নিজস্ব স্টোর গুদামে পূর্বাঞ্চল রেলের পুরনো যন্ত্রাংশ বা স্ক্র্যাপ মজুদ করা হয়। ওসব স্ক্র্যাপ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর অনুমোদনসাপেক্ষে প্রতি তিন মাস অন্তর বিক্রির জন্য নিলামে তোলা হয়। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই স্ক্র্যাপের ওজন মজুদকালীন ওজনের চেয়ে কম পাওয়া যায়। মূলত মরিচা ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া এবং চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে এমনটি হয়। আর এর দায় গিয়ে পড়ে স্টোর বিভাগে দায়িত্বরতদের উপর। যার ফলে অনেক সময় তারা অবসরোত্তর সুবিধা পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সূত্র জানায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পুরনো সেইল ডিপোয় প্রায় ৮০ ক্যাটাগরির স্ক্র্যাপ খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে বিক্রি না করার কারণে অধিকাংশ স্ক্র্যাপ যন্ত্রাংশই নষ্ট হচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে অকেজো ও পরিত্যক্ত ইঞ্জিন, লোকোমোটিভের টাকা, স্প্রিং, বগি, লোহা, সিলভার, তামা, স্টিল, এমএস শিপপ্লেট, এমএস স্ক্র্যাপ, বাফার হ্যালিকল স্প্রিং, স্টিল স্প্রিং, কপার স্ক্র্যাপ, অ্যালুমিনিয়াম স্ক্র্যাপ ও পুরনো বাল্ব। ডিপোর দায়িত্বরত কর্মকর্তারা রেলের ডিপোর উন্নয়ন ও সংস্কার করতে তাগাদা দিয়ে বিভিন্ন সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন। পাহাড়তলীতে অবস্থিত পুরনো সেইল ডিপোর দক্ষিণ, উত্তর ও পূর্ব পাশের বাউন্ডারি ওয়াল উঁচু করা এবং ওয়ালে কাঁটাতার দেয়ার তাগিদ জানিয়ে ২০১৪ সালে রেলের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর চিঠি দেন জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক। পরের দুই বছরেও একই ধরনের চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু রেলওয়ের প্রকৌশল দপ্তর এখন পর্যন্ত ডিপোর চারপাশের সংরক্ষণ দেয়াল উঁচু করতে পারেনি। রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপকসহ প্রকৌশল দপ্তরকে সেজন্য বারবার তাগাদা দেয়া হলেও মালপত্র সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ ডিপোটি সংস্কার করেনি রেল কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার পুরনো স্ক্র্যাপ পণ্য ডিপোয় পাঠানো হলেও ন্যায্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রেলওয়ে। সূত্র আরো জানায়, রেলওয়ে অডিট অধিদপ্তর রেলের স্টোর বিভাগের মালপত্র নষ্ট হওয়ার বিষয়ে আপত্তি দিয়েছে। ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ অফিসারের এক অডিট আপত্তিতে দেখা যায়, পাহাড়তলীর পুরনো সেইল ডিপোয় খোলা আকাশের নিচে অবিক্রীত অবস্থায় মালপত্র ফেলে রাখার কারণে রেলওয়ে দীর্ঘদিন ধরে মোট ২ কোটি ৩৪ লাখ ৬২ হাজার ১৭৮ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। লোহাজাতীয় মালপত্র হওয়ায় অবিলম্বে সেসব বিক্রি ছাড়াও পুরনো সেইল ডিপোর অবকাঠামো উন্নয়ন ও ডিপোটি আধুনিকায়নেরও পরামর্শ দেয়া হয়। এদিকে রেলের একাধিক বিভাগের মালপত্র ডিপোয় মজুদ রাখায় দরপত্র আহ্বানের আগে সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হয়। এরপর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের অনুমোদন নিয়ে দরপত্র আহ্বান ও মূল্যায়ন শেষে মালপত্র বিক্রি করতে হয়। তবে ডিপোর অবকাঠামোগত দুর্বলতায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান মালপত্র সংগ্রহ করতে এসে ফেরত চলে যায়। অনেক সময় বাজারের সঙ্গে স্ক্র্যাপ পণ্যের দামের পার্থক্য থাকলে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো চিঠির মাধ্যমে স্ক্র্যাপ সংগ্রহে সময়ক্ষেপণ করে। তাতে খোলা আকাশের নিচে থাকা স্ক্র্যাপ পণ্য পড়ে থেকে নষ্ট হতে থাকে। এ বিষয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ ইন্সপেক্টর মো. ছালামত উল্লাহ জানান, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কাজ হলো সেইল ডিপোর মালপত্র পাহারা দেয়া। তবে ডিপোর অবকাঠামোগত সমস্যা থাকায় পাহাড়ি এলাকার এ গুদামের মালপত্রের নিরাপত্তা দেয়া কঠিন। ডিপোর চারপাশের দেয়াল টপকিয়ে অধিকাংশ সময়ই মালপত্র চুরি হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।