দেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বাংলাদেশী পাসপোর্ট পেতে রোহিঙ্গারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গারা একটি পাসপোর্ট পেতে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত দালালদের অফার দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে হঠাৎ করেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেয়ার গোপন তৎপরতা বেড়ে গেছে। মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা। বিপুল অর্থের বিনিময়ে এই অপতৎপরতায় বাংলাদেশি কিছু দালাল তাদের সহায়তা করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মিয়ানমার ফিরতে অনিচ্ছুক রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ওই রোহিঙ্গারা বিদেশি আত্মীয়ের সহযোগিতায় মালয়েশিয়া কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমাতে চাচ্ছে। এখন পর্যন্ত যেসব রোহিঙ্গা পাসপোর্ট নিতে গিয়ে ধরা পড়েছে, তার মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস মনসুরাবাদে ওই ধরনের ৭ রোহিঙ্গা ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট করতে এসে কর্মকর্তাদের হাতে ধরা পড়েছে। পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসেও ওই সময়ে আরো ৪ রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পরে তাদের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা বাংলাদেশী পাসপোর্ট পেতে দালালদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের চুক্তির পর রোহিঙ্গা নারী কিংবা পুরুষকে পাসপোর্ট অফিসে আনার আগে অন্তত ১৫ দিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিশেষ করে বাবা-মায়ের নাম-ঠিকানা এবং চট্টগ্রামের ভাষা আয়ত্বে আনতে ওই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। সন্দেহমুক্ত থাকতে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে কক্সবাজার জেলার আওতাধীন কোনো জায়গার নাম ব্যবহার না করে চট্টগ্রাম জেলার অন্য কোনো উপজেলাকে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গ্রাম এলাকার এমন মানুষের জন্মনিবন্ধন সনদ ও ঠিকানা ব্যবহার করা হচ্ছে, যে নামে এখনো পাসপোর্ট করা হয়নি। ওই লোকের অজান্তেই তার নামে ফরম পূরণ করে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিচ্ছে জালিয়াতচক্র। কিন্তু তারপরও ভাষাগত পার্থক্যেই ফরম জমা দিতে এসে ধরা পড়ছে রোহিঙ্গারা। সূত্র আরো জানায়, পাসপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট অফিস পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্টের ওপর গুরুত্ব দেয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চিহ্নিত না হলে রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করতে পাসপোর্ট অফিসের শেষ ভরসা পুলিশ ভেরিফিকেশন। কারণ পুলিশ রিপোর্ট পাওয়ার পর পাসপোর্ট অফিস পাসপোর্ট ইস্যু করতে বাধ্য। ওই কারণে পাসপোর্ট পেতে রোহিঙ্গাদের সাম্প্রতিক তৎপরতায় পুলিশও অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে। তবে রোহিঙ্গাদের আটক করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হচ্ছে না। কারণ মামলায় বাদী হলে দীর্ঘদিন সেই মামলার দায় বয়ে বেড়াতে হয়। বাদী অন্য কোথাও বদলি হলেও মামলার হাজিরা দিতে আসতে হয়। ওই কারণে ঝামেলা এড়াতে মামলা করা হচ্ছে না। বরং পুলিশের মাধ্যমে তাদের ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়। এদিকে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট সংগ্রহের তৎপরতা সম্পর্কে চট্টগ্রাম পুলিশের বিশেষ শাখার উপকমিশনার মোখলেসুর রহমান জানান, তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা আছে, বাসাবাড়িতে গিয়ে সরেজমিন দেখে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে তারপর রিপোর্ট দিতে। সব পাসপোর্টের ক্ষেত্রেই একই নির্দেশনা আছে। রোহিঙ্গাদের কারণে বর্তমানে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। অন্যদিকে পাসপোর্ট নিতে এসে আটক রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস, মনসুরাবাদের উপ-পরিচালক আবু নোমান মো. জাকির হোসেন জানান, চট্টগ্রামের ভাষার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ভাষাগত পার্থক্য রয়েছে। চট্টগ্রামের যেকোনো নাগরিক তা ধরতে পারবে। তাছাড়া একটু জোর দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই ঠিকানা গুলিয়ে ফেলে তারা। পরে আরো চাপ দিলে তারা প্রতারণার কথা স্বীকার করছে। আটক করা রোহিঙ্গাদের স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হচ্ছে। সম্প্রতি হঠাৎ রোহিঙ্গাদের মধ্যে পাসপোর্ট করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। সেজন্য ১১টি জেলা অফিসকে চিঠি দিয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যাতে কোনোভাবে একজন রোহিঙ্গাও বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিতে না পারে।