জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহমেদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান প্রতিমন্ত্রী। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সর্বশেষ প্রকাশিত স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস-২০২১ বইয়ের (জুন, ২০২২ সালে প্রকাশিত) তথ্য অনুযায়ী সরকারের অধীনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, পরিদফতর ও সরকারি কার্যালয়গুলোয় বেসামরিক জনবলের মোট শূন্য পদ ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি। এরমধ্যে প্রথম শ্রেণির ৪৩ হাজার ৩৩৬টি, দ্বিতীয় শ্রেণির ৪০ হাজার ৫৬১, তৃতীয় শ্রেণির ১ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৮ এবং চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদ ১ লাখ ২২ হাজার ৬৮০টি।
এরমধ্যে ৪০তম বিসিএসে ১ হাজার ৯২৯ জন নিয়োগ করা হয়েছে। ৪২তম বিশেষ বিসিএসে (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে ৩ হাজার ৯৬৬টি সহকারী সার্জন নিয়োগ করা হয়েছে। ৪১তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলমান। ৪৩তম বিএসএসের লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন চলছে, ৪৪তম লিখিত পরীক্ষা গত ১১ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। আর আগামী মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি টেস্টের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারিত আছে।
সরকারি অফিসগুলোয় শূন্য পদের নিয়োগ চলমান বলে জানান তিনি। দ্বিতীয় শ্রেণি ১০ থেকে ১৩তম পদের নিয়োগ পিএসসির মাধ্যমে হয়ে থাকে। ১৪ থেকে ২০তম গ্রেডের নিয়োগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর ও সংস্থার নিয়োগবিধি অনুযায়ী হয়ে থাকে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, আদালতে মামলা থাকায় নিয়োগবিধি প্রণয়ন কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় এবং পদোন্নতির যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় কিছু শূন্য পদ পূরণ করা যায় না।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী জানান, ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার পদে ৫ হাজার ৪৩৬টি শূন্য পদের চাহিদাপত্র পাওয়া গেছে। এগুলো যাচাই-বাছাই শেষে প্রকৃত সুপারিশযোগ্য শূন্য পদের সংখ্যা জানানো সম্ভব হবে।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শামসুন নাহারের প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ হোসেন বলেন, স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস-২০২১ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। এরমধ্যে নারী ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৯১ জন, যা মোট চাকরিজীবীর প্রায় ২৬ শতাংশ। ২০১০ সালে ছিল ২১ শতাংশ।
প্রথম শ্রেণির পদে নারীদের জন্য আলাদা কোটা না থাকলেও ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডে নিয়োগে নারীদের জন্য ১৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা আছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
নোয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ হোসেন বলেন, সরকারের অর্থ বিভাগের ২০২২ সালের ২১ জুলাই প্রজ্ঞাপনে পেট্রোল ও লুব্রিকেন্ট (৩২৪৩১০২) খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে মোট বরাদ্দকৃত অর্থের সর্ব্বোচ ৮০ শতাংশ ব্যয় করার নির্দেশনা রয়েছে। তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে সরকারি গাড়ি ব্যবহার আগের তুলনায় সীমিত করে ২০ শতাংশ সাশ্রয় নিশ্চিত করা হচ্ছে।
সরকারি যানবাহন অধিদফতরের মাধ্যমে সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জ্বালানি সাশ্রয়ের বিষয়ে অর্থ বিভাগের নির্দেশনা প্রতিপালনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
সরকারি যানবাহন অধিদফতরের গাড়ি মেরামতকালে রোড টেস্টের জন্য গাড়িপ্রতি তিন লিটারের স্থলে দুই লিটার, সিএনজিতে রূপান্তরিত গাড়ির ইএফআই/এমপিএফআই ইঞ্জিন চালুর জন্য মাসিক ৩০ লিটারের স্থলে ১৫ লিটার, সিএনজিচালিত যানে রূপান্তরিত কার্বুরেটর ইঞ্জিনের গাড়ি চালুর জন্য মাসিক ১৫ লিটারের স্থলে ১০ লিটার এবং গাড়ি ব্যবহারকারী কর্মকর্তাদের প্রতি মাসে গাড়িপ্রতি ২০০ লিটারের স্থলে ১৫০ লিটার অকটেন ও পেট্রোল ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে।
এ ছাড়া ভিআইপিদের জন্য রিজার্ভ গাড়ি মেরামত ও টেস্ট ট্রায়ালের জন্য জ্বালানি ব্যবহার অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে গ্যাস সিলিন্ডারযুক্ত গাড়ির সিলিন্ডার ব্যবহার উপযোগী থাকলে গ্যাস ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ হোসেন বলেন, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ২০২২-এর খসড়া প্রণয়ন করে প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠানো হয়। প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির গত ৩১ মে সভার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত খসড়া বিধিমালাটি ভেটিংয়ের জন্য গত ৪ জুলাই লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে পাঠানো হয়েছে।