কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকা কেজি কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। দাম কিছুটা কমতির দিকে থাকায় আরও দু’তিন দিন বাজার পরিস্থিতি দেখে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আজ রোববার সচিবালয়ে নিজ অফিস কক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, গতবছর দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ও মজুত ভাল ছিলো। পেঁয়াজের দাম কম ছিল, কৃষকেরা কম দাম পেয়েছিল। গত বছর দাম বাড়ার আশায় মজুত করে রাখা পেঁয়াজ পচে যাওয়ায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তিনি বলেন, কৃষক, গুদাম ও আড়ৎদারের কাছে কি পরিমাণ পেঁয়াজ আছে তা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছেন যে, যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুত আছে। তবে তারা দামের আশায় বাজারে বিক্রি করছে না। পেঁয়াজ আমদানির ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, উচ্চপর্যায়ে, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা চলছে। গভীরভাবে বাজার পর্যবেক্ষেণ করা হচ্ছে। দু’তিন দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোন কারণ নেই। তারা বাস্তবতা বুঝবে এবং একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সহযোগিতা করবে। মন্ত্রী বলেন, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ কোনদিনই আমরা কামনা করি না ও সহজভাবে নিতে পারি না। তিনি বলেন, দেশে একটি নির্বাচিত সরকার রয়েছে, আর ৬ মাস পর সংবিধান অনুযায়ীই জাতীয় নির্বাচন হবে। এদিকে রোববার সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের সাথে কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তারের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে কৃষি সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাঁচা তুলা আমদানির ক্ষেত্রে দেশে আর পোকামাকড় মুক্তকরণ বা ফিউমিগেশন করতে হবে না। বাংলাদেশ থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর করে কাঁচা তুলা পোকামাকড়মুক্ত করার পদ্ধতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও দূতাবাসের ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদলে বাণিজ্য প্রতিনিধি ডেপুটি এসিসট্যান্ট ব্রেন্ডন লিঞ্চ, সাউথ এশিয়ার ডিরেক্টর মেহনাজ খান, রিজিওনাল আইপি অ্যাটাশে জন কাবেকা, ঢাকার ইউএস দূতাবাসের ইকনমিক চিফ জোসেফ গিবলিন, এগ্রিকালচার অ্যাটাশে মেগান ফ্রান্সিস, লেবার অ্যাটাশে লিনা খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার কাঁচা তুলায় ক্ষতিকর ‘কটন উইভিল’ পোকা থাকায় সেসব দেশ থেকে কাঁচা তুলা আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে পৌঁছার পর পোকামাকড়মুক্ত বা ফিউমিগেশন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। ইউরোপ, আফ্রিকাসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে এই বাধ্যবাধকতা নেই। এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাঁচা তুলা আমদানির ক্ষেত্রেও এটি প্রয়োজন হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট বা রোগজীবাণুমুক্ত সনদপত্র থাকলেই চলবে। তবে উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশের তুলার ক্ষেত্রে আগের মতোই ফিউমিগেশন করার বাধ্যবাধকতা বহাল রয়েছে। এছাড়া একই কন্টেইনারে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশের তুলা শিপমেন্ট হলে যুক্তরাষ্ট্রের তুলাকেও বাধ্যতামূলক ফিউমিগেশন করতে হবে। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে তুলার চাহিদা ৮৫ লাখ বেল। দেশে উৎপাদন হয় প্রায় ২ লাখ বেল। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বছরে সাড়ে ৭ লাখ বেল তুলা আমদানি হয়।