অনলাইন ডেস্ক :
শরীর সুস্থ রাখতে হলে নিজেকে সচল রাখতে হবে। আর খাওয়া-দাওয়ায় সচেতন হলেই শরীর সচল হবে। তাই আমারা চিন্তা করি কি খাবো আর কি খাবো না। সব চিন্তার সমাধান যদি হয় একটি ফল তাহলে কেমন হয়? শরীরের জন্য উপকারী একটি ফল হলো বেদানা। এটি আনার বা ডালিম নামেও পরিচিত। প্রতিদিন খাবারের মেন্যুতেু যদি একটি বেদানা রাখা হয় তাহলে আর চিন্তা কি।
একটি বেদানা আপনার শরীরের জন্য কতো উপকারী চলুন জেনে নেই-
১. ব্রেন ডিজিজ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয় একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে বেদানায় উপস্থিত নানাবিধ উপকারি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর ব্রেনের পাওয়ার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। বিশেষত ব্রেন সেলের ক্ষমতা এতটা বেড়ে যায় যে অ্যালঝাইমার্সের মতো মস্তিস্কঘটিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বলে চলে।
২. ভিটামিনের ঘাটতি দূর হয় শরীরকে সচল এবং সুস্থ রাখতে যে যে ভিটামিনগুলির প্রয়োজন পরে প্রতিদিন, তার প্রায় সবকটিরই সন্ধান মিলে একটি বেদানায়, যেমন ধরুন-ভিটামিন সি, ই,কে। সেই সঙ্গে ফলেট, পটাসিয়াম এবং আরও কত কী। তাই দীর্ঘ দিন যদি সুস্থভাবে বাঁচতে হয়, তাহলে এই ফলটির সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতে দেরি করবেন না।
৩. নানাবিধ পেটের রোগের প্রকোপ কমে বাঙালি মানেই মাত্রা ছাড়া খাওয়া-দাওয়া। আর এমনটা করতে গিয়ে কি পেট ছেড়েছে? তাহলে এক্ষুণি অল্প করে বেদানা খেয়ে ফেলুন। দেখবেন কষ্ট কমে যাবে। কারণ বেদানা অন্দরে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান পাকস্থলির কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতার উন্নতিতেও সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, বেদানার পাতা দিয়ে বানানো চা খেলেও এক্ষেত্রে দারুণ উপকার পাওয়া যায়।
৪. হার্টের ক্ষমতা বাড়ে রোজ ডায়েটে এই ফলটিকে রাখলে সারা শরীরে রক্তের প্রবাহ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে কমে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও। বেদানায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও নানাভাবে হার্টের খেয়াল রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. চুল পড়ার হার কমে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে প্রতিদিন বেদানার রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন চুল পড়ার মাত্রা তো কমবেই, সেই সঙ্গে চুলের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পাবে চোখে পরার মতো।
৬. ক্যান্সার ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারে না বেদানায় ফ্লেবোনয়েড নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা রক্তে উপস্থিত ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টক্সিক উপাদানদের শরীর থেকে বের করে দেয়। ফলে কোনও ভাবেই দেহের অন্দের ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা থাকে না। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে প্রোস্টেট এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারকে দূরে রাখতেও এই ফলটি নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।
৭. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় বেশ কিছু স্টাডি অনুসারে প্রতিদিনের ডায়েটে বেদানাকে জায়গা করে দিলে ত্বকের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে বলিরেখা অদৃশ্য হতে থাকে। সেই সঙ্গে ডার্ক স্পট এবং ডার্ক সার্কেলও গায়েব হয়ে যায়। ফলে সৌন্দর্য বাড়ে চোখে পরার মতো।
৮. অ্যানিমিয়ার মতো রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না অ্যানিমিয়ার প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে বেদানা খাওয়ারও প্রয়োজন বেড়েছে অনেক মাত্রায়। কারণ এই ফলটির শরীরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, যা লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়ে রক্তাল্পতার মতো সমস্যা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কারণেই তো ছোট থেকেই মেয়েদের নিয়মিত বেদানা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
৯. ডায়াবেটিস দূরে থাকে পরিবারে কি এই রোগটির ইতিহাস রয়েছে? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়ে থাকে তাহলে আজ থেকেই বেদানা খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন আপনার জীবনকালে কখনও ডায়াবেটিস আপনার শরীরে বাসা বাধতে পারবে না। কারণ এই ফলটি খাওয়া মাত্র শরীরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মতো রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
১০. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে শুনতে আজব লাগলেও একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে নিয়মিত কাঁচা বেদানা অথবা বেদানার রস খাওয়া শুরু করলে ব্লাড ভেসেলে সৃষ্টি হওয়া প্রদাহ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে সারা শরীরে রক্তের প্রবাহ এতটা বেড়ে যায় যে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। তাই তো বলি বন্ধু, যাদের পরিবারে এই মারণ রোগের ইতিহাস রয়েছে, তারা যদি দীর্ঘকাল সুস্থ থাকতে চান, তাহলে এই ফলটিকে সঙ্গী বানাতে ভুলবেন না যেন।
১১. জয়েন্টের সচলতা বৃদ্ধি পায় শরীরে যখন ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমতে শুরু করে তখন এমন কিছু ক্ষতিকর এনজাইমের ক্ষরণ বেড়ে যায় যে জয়েন্টের সচলতা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে হাড় এত মাত্রায় দুর্বল হয়ে পরে যে অস্টিওআর্থ্রাইটিস মতো রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এক্ষেত্রেও কিন্তু বেদানা নানাভাবে কাজে আসে। যেই এনজাইমের কারণে হাড়ের ক্ষয় হতে থাকে,তার ক্ষরণ কমিয়ে দিয়ে আর্থ্রাইটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমাতে এই ফলটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
১২. দাঁত শক্তপোক্ত হয় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল প্রপাটিজে পরিপূর্ণ এই ফলটি খাওয়ামাত্র মুখ গহ্বরের অন্দরে উপস্থিত ক্ষতিকর জীবাণুরা সব মারা পরে। ফলে ক্যাভিটির মতো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
|