‘গাজা ইসরায়েলের জন্য ইতিহাসের অভিশাপ হয়ে থাকবে।’- মুখপাত্র আবু ওবেদা
তারিথ
: ০৩-১১-২০২৩
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার বলেছে, তাদের বাহিনী হামাস পরিচালিত এবং ঘনবসতিপূর্ণ ফিলিস্তিনি ভূখন্ডের গাজা শহর ঘিরে রেখেছে এবং তারা হামাসের বিরুদ্ধে হামলা চালাচ্ছে। হামাসের সামরিক শাখা ‘ইজ্জেদিন আল-কাসাম ব্রিগেড’ ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে যে, তাদের সৈন্যরা ‘কালো ব্যাগে’ বাড়ি ফিরে যাবে। মুখপাত্র আবু ওবেদা বলেছেন, ‘গাজা ইসরায়েলের জন্য ইতিহাসের অভিশাপ হয়ে থাকবে।’ কয়েকদিন ধরে স্থল অভিযান চালানোর পর সেনারা গাজা শহরকে পুরোপুরি ঘিরে ফেলায় ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারির ঘোষণার পর হামাসের এই সতর্কবার্তা এলো। হাগারি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইসরায়েলি সৈন্যরা হামাস সংগঠনের কেন্দ্রস্থল গাজা শহর ঘেরাও করে রেখেছে।’ তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির ধারণাটি বর্তমানে টেবিলে নেই।’ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার ক্রমবর্ধমান আশঙ্কার মধ্যে, ইসরায়েল এবং লেবাননে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা উত্তর ইসরায়েলের একটি শহরে রকেট হামলার পর গুলি বিনিময় করেছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই সংঘাতে মানবিক বিরতির আহ্বান জানাচ্ছেন যা একটি ‘সাধারণ যুদ্ধবিরতি’ থেকে খুব কম সময়ে ‘অস্থায়ী, স্থানীয়ভাবে’ হামলা বন্ধ করবে। মধ্যপ্রাচ্যে সফরে রওনা হয়ে বাইডেনের প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে ‘আমরা যুদ্ধের যে কোনও সম্প্রসারণ রোধ করতে বদ্ধপরিকর’। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘গাজায় পুরুষ, নারী ও শিশুদের ক্ষতি কমাতে আমরা দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলবো এবং নেওয়া উচিত।’ আরও শত শত বিদেশী এবং দ্বৈত নাগরিক বৃহস্পতিবার যুদ্ধ-বিধ্বস্ত গাজা থেকে পালিয়ে মিশরে প্রবশে করেছে। ইসরায়েলের বাহিনী অবরুদ্ধ অঞ্চলে বোমাবর্ষণ এবং স্থল যুদ্ধ করেছে যেখানে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংয়ের একটি সূত্র এএফপি’কে জানিয়েছে, এটি শুক্রবার আবার খুলবে। গাজা উপত্যকা থেকে আরও বিদেশী নাগরিক এবং আহত ফিলিস্তিনিরা মিশরে প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। মিশর বলেছে, তারা অবশেষে রাফাহ দিয়ে ৭ হাজার বিদেশীকে সরিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। কায়রোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২১ জন আহত ফিলিস্তিনি এবং ‘৭২ শিশুসহ ৩৪৪ বিদেশী নাগরিক’ দ্বিতীয় দিনে রাফাহ ক্রসিং অতিক্রম করেছে। ভ্রমণের জন্য অনুমোদিত ব্যক্তিদের তালিকায় শতাধিক মার্কিন নাগরিক এবং ৫০ জন বেলজিয়ানসহ বিভিন্ন ইউরোপীয়, আরব, এশিয়ান এবং আফ্রিকান দেশগুলোর অল্প সংখ্যক নাগরিক রয়েছেন। মার্কিন পাসপোর্ট ধারী সালমা সাথ (১৪) সীমান্ত অতিক্রম করার সময় বলেন, সেখানে ‘কোন খাবার ছিল না, পানি ছিল না, গ্যাস ছিল না, কোথাও আশ্রয় নেওয়ার জায়গা ছিল না।’ ‘মানুষ ঘুমানোর জন্য হাসপাতালে যাচ্ছিল, সেখানে অনেকে শহীদ হয়, ইন্টারনেট নেই, যোগাযোগ নেই এবং বিদ্যুৎ নেই। আমাদের বাড়িতে বোমা হামলা হয়েছে, তাই আমরা এখানে রাফাতে এসেছি।’ ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে হিং¯্র ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে গাজায় আটকে পড়া ২৪ লাখ লোকের একটি ক্ষুদ্র অনুপাত গাজা থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের বিষয়ে তার নেতা হাসান নাসরুল্লাহর বক্তৃতার আগে বৃহস্পতিবার সীমান্তে ১৯টি ইসরায়েলি অবস্থানে একযোগে আক্রমণ করেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, ‘এর পরপরই যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টারগুলো লেবাননের ভূখন্ড থেকে গোলাগুলির জবাবে হিজবুল্লাহ লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করেছে, একইসাথে কামান ও ট্যাঙ্কের সাহায্যে হামলা করেছে’। লেবাননের সরকারি ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, এতে চারজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছে এবং হিজবুল্লাহ তাদের আরও এক যোদ্ধার নিহত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এএফপি’র তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে লেবাননে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭১ জন হয়েছে। উত্তর গাজায়, ইসরায়েলি সৈন্যরা হামাসের সাথে যুদ্ধ করার সাথে সাথে রাতারাতি আবার স্থল যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইসরায়েলি সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেছেন, সৈন্যরা গাজার অভ্যন্তরে রয়েছে। গাজা শহর অবরোধ করছে এবং হামাস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ‘অনুপ্রবেশ করছে’। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামলার সময় হামাসের হাতে বন্দী বেসামরিক এবং সৈন্য উভয়ই প্রায় ২৪০ জিম্মিকে মুক্ত করতে চাইছে। গত ৭ অক্টোবরের হামলায় এবং পরে ইসরায়েলি আক্রমণের মধ্যে হামাসের হামলায় ইতোমধ্যেই প্রায় ৩৩২ ইসরায়েলি সৈন্য মারা গেছে। এখন ভয়ঙ্কর শহুরে যুদ্ধ গাজার অভ্যন্তরে আরও গভীরে রয়েছে, যেখানে হামাস শ’ শ’ কিলোমিটার (মাইল) বিস্তৃত একটি টানেল নেটওয়ার্ক থেকে লড়াই করছে। ইসরায়েলের হামলার বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ তীব্রভাবে বেড়েছে, যেখানে সেনাবাহিনী বলেছে, তারা এখন পর্যন্ত ১২ হাজারেরও বেশি স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলি হামলায় ৯ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গাজার হামাস-শাসিত সরকার বলেছে, জাবালিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় দুই দিনের মধ্যে ১৯৫ জন নিহত হয়েছে। আরও শতাধিক নিখোঁজ ও আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার গাজার বুরেজ শরণার্থী শিবির এবং জাবালিয়ায় জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলের কাছে এক এলাকাতেও বড় ধরনের হামলা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে সেখানে ২৭ জন মারা গেছে। গাজা শহরের আল-কুদস হাসপাতালের বাইরে ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা এএফপি’কে বলেছেন, বেসামরিক লোকরা আর বেশিদিন বাঁধা সহ্য করবে না। ৫০ বছর বয়সী হিয়াম শামলাখ বলেছেন, ‘এটি কোন জীবন নয়। আমাদের বাচ্চাদের জন্য একটি নিরাপদ জায়গা দরকার’। ‘সবাই আতঙ্কিত, শিশু, মহিলা এবং বৃদ্ধ আমরা সবাই আতঙ্কিত।’ আরেক গাজান, ৩০ বছর বয়সী মাহমুদ আবু জারাদ বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকরা আরও এক সপ্তাহের হামলা সহ্য করতে পারবে না। ‘আমরা একটি যুদ্ধবিরতির দাবি করছি। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’