টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ঢাকার আইডিয়াল ‘ল’ কলেজের ছাত্রী রূপা খাতুনকে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় আরো চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। এ নিয়ে এ মামলায় মোট নয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হলো। গতকাল সোমবার দুপুরে আদালতে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। সাক্ষীরা হলেন-রূপার ভ্যানিটি ব্যাগ উদ্ধার হওয়ার ঘটনার সাক্ষী লাল মিয়া, হাসমত আলী ও ইমাম হোসেন এবং রূপার মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনের সাক্ষী মধুপুরের স্থানীয় সাংবাদিক এম এ রউফ। টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌসুলি (পিপি) একে এম নাছিমুল আক্তার জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়ার আদালতে দুপুর ১২টা থেকে সোয়া ঘণ্টাব্যাপী চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। পরে আসামিদের আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন ও শামীম চৌধুরী সাক্ষীদের জেরা করেন। মঙ্গলবার আদালত আরো নয়জনের সাক্ষ্য নেয়ার দিন ধার্য্য করেছেন। এরা হলেন-নিহত রূপার ভাই হাফিজুল ইসলাম প্রামাণিক, মধুপুরের স্থানীয় বাসিন্দা কিশোর, আবদুল মান্নান, মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল বারেক, লিটন মিয়া, রুবেল মিয়া, হযরত আলী ও আমেনা খাতুন। বুধবার মামলার বাদী মধুপুরের অরণখোলা ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। পরে গত রোববার রূপার লাশ উদ্ধার ও সুরতহাল প্রতিবেদনের সাক্ষী মধুপুরের অরণখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য প্রবীর এন কুমার, পঁচিশ মাইল এলাকার রশীদ মিয়া ও রহিজ উদ্দিন এবং রূপাকে বহনকারী বাস জব্দ করার সাক্ষী মধুপুরের শ্রমিক আবুল হোসেন। সাক্ষ্যগ্রহণকালে মামলার পাঁচ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রূপা খাতুনকে চলন্ত বাসে ধর্ষণ করে পরিবহন শ্রমিকরা। পরে তাকে হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে রেখে যায়। পুলিশ ওই রাতেই তার লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। ২৮ আগস্ট রূপার ভাই মধুপুর থানায় এসে মরদেহের ছবি দেখে রূপাকে শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর (৪৫), সুপারভাইজার সফর আলী (৫৫) এবং সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীরকে (১৯) গ্রেফতার করে। পুলিশের কাছে তারা রূপাকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে। ২৯ আগস্ট বাসের তিন সহকারী শামীম, আকরাম, জাহাঙ্গীর এবং ৩০ আগস্ট চালক হাবিবুর এবং সুপারভাইজার সফর আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তারা সবাই এখন টাঙ্গাইল কারাগারে আছে। ৩১ আগস্ট রূপার লাশ উত্তোলন করে তার ভাইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তাকে সিরাজগঞ্জের তারাশ উপজেলার নিজ গ্রাম আসানবাড়িতে দাফন করা হয়।