বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আগামী ৩১ মে থেকে সয়াবিন তেল ও ৩১ ডিসেম্বর থেকে পামওয়েল খোলা বিক্রি করা যাবে না। বোতলজাত করে বিক্রি করতে হবে৷
বুধবার (০২ মার্চ) বিকেলে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা যৌথভাবে কাজ করছি। আগামী ৩১ মে ও ৩১ ডিসেম্বরের পরে সয়াবিন তেল খোলা বাজারে খোলা বিক্রি হবে না বোতলজাত বা প্যাকেটজাত করা হবে। নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি নিশ্চিত করা হবে। নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে কোনো পণ্য বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং মাঠ প্রশাসন বাজার মনিটরিং জোরদার করেছে। যৌক্তিক মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উৎপাদনকারী এবং ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় সবকিছু করা হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ এবং মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
তেল অতিরিক্ত দামে বিক্রি করতে বোতল খুলে খোলাভাবে বিক্রি হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, এ কথাগুলো আমরা শুনেছি, বোতলে যে দাম লেখা থাকে, বোতল থেকে খুলে বিক্রি করলে দামের কোনো বালাই থাকে না। এসব কথা শোনার পরিপ্রেক্ষিতে আজকে ডিজিএফআই, পুলিশ, এনএসআই, ভোক্তা অধিকার, প্রতিযোগিতা কমিশন সবাইকে বলেছি, এসব কথা শুনছি, ইউ টেক ইউর অ্যাকশন। এটি হলো পরিষ্কার কথা।
সভায় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আলোচনায় এটিই সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে দাম আমরা ঠিক করে দেই বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে যা প্রভাব পড়ে, সে দামটা কিন্তু আমাদের ট্রেন্ড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন একটা সূচকের ভিত্তিতে বসে ঠিক করে, যে বাজারে কী দাম হওয়া উচিত। তারা সবকিছু মিলিয়েই দাম নির্ধারণ করে। আমরা সম্প্রতি দেখেছি, কিছু গড়মিল দেখা যাচ্ছে। আমাদের সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি, আমাদের ভোক্তা অধিকার, ক্যাব, প্রতিযোগিতা কমিশন এবং গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট সবাইকে ডেকেছি। এ কথাটাই আলোচনা করেছি। এ নির্দেশ তাদের দেওয়া হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে যে নির্দেশনাটা আমাকে জানানো হয়েছে, সে কথাই বলা হয়েছে, যৌক্তিকভাবে এটা কন্ট্রোল করতে হবে। যেটা আছে সেটা মেনে করতে হবে।
পণ্যের দামের বিষয়ে কেউ আইন মানেন না এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা আরও অ্যাকটিভ হবো। ভোক্তা অধিকারকে বলবো শিল্প মন্ত্রণালয়ের যে দায়িত্ব সেটা যেন তাদের জানানো হয়। আমরাও আমাদের ব্যবস্থা নেবো।
খুচরা বাজারে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, এজন্য আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে, ভোক্তা অধিকার রয়েছে তাদের এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। আমরা এবার ডিসি এবং প্রশাসনের সাহায্য নিয়েছি। এ ধরনের কাজ যারা করবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন।
যৌথ অভিযান পরিচালনা করবেন কিনা জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, যেখানে যেরকম প্রয়োজন, যদি কোথাও যৌথ দরকার পড়ে যৌথ করবো। খালি পুলিশ যদি পারে পুলিশ করবে, ডিসি করবে, ভোক্তা অধিকার করবে। সবারই ম্যাজিট্রেসি ক্ষমতা আছে। যার-যার মতো করে করবে। যদি কোথাও মনে করে সবাই এক সঙ্গে যাওয়া দরকার, এক সঙ্গে যাবে।
এ সময় প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম জানান, প্রতিযোগিতা কমিশন থেকে ইতোমধ্যে তেল ব্যবসায়ীদের বিষয়টি বলে দেওয়া হয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মিটিং করে ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে এটা আপনারা গণমাধ্যমকে বলেন। তাহলে মানুষ জানবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ী নেতা, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, প্রতিযোগিতা কমিশন, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা।