রিজার্ভ চুরি: রিজল ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করবে বাংলাদেশ
তারিথ
: ০৭-০২-২০১৮
অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ভূমিকার জন্য ফিলিপাইনের রিজল কমার্সিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ফৌজদারি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মামলার সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ফিলিপিন্স সফর করে এসেছেন। যে প্রতিবেদন তারা দিয়েছেন, তার ভিত্তিতেই মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে নিউ ইয়র্কে এই মামলা করা হবে। মামলার বাদী হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ও সুইফট কর্তৃপক্ষও থাকবে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপাইনের আরসিবিসিতে। আর আরেক আদেশে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার। শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ ওই অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া শেষ পর্যন্ত আটকানো গেলেও ফিলিপাইনের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে। রিজল ব্যাংকের একটি শাখা হয়ে বেরিয়ে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে এক ক্যাসিনো মালিকের ফেরত দেওয়া দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দিয়েছে ফিলিপিন্স। এ ঘটনায় রিজল ব্যাংককে ২০ কোটি ডলার জরিমানাও করেছে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জরিমানার ওই অর্থ তারা পরিশোধ করলেও বাংলাদেশকে বাকি অর্থ ফেরতের দায় নিতে তারা রাজি নয়। ডেপুটি গভর্নর রাজী হাসান বলেন, ফিলিপিন্সে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ৬ কোটি ৭০ লাখ বেরিয়ে কোথায় গেছে তার ধারণা পাওয়া গেলেও প্রায় দেড় কোটি ডলারের বিষয়ে কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। আরসিবিসির উপর থেকে নিচ পর্যন্ত অনেকে জড়িত। এ কারণেই আমরা ফৌজদারি মামলা করতে যাচ্ছি। অবশ্য মামলা করার আগে আরসিবিসি কোনো প্রস্তাব নিয়ে এলে বাংলাদেশ তা ভেবে দেখবে বলে জানান তিনি। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সাইবার চুরির এই ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে ঘটনার এক মাস পর, ফিলিপাইনের একটি পত্রিকার খবরের মাধ্যমে। বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল। ওই সময়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ঢাকায় মামলা করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি দুই বছরেও আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি। পুরো বিশ্বে আলোচিত এই সাইবার চুরির পেছনে কারা ছিল- তা জানা যায়নি এখনও। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বলে গত ডিসেম্বরে খবর দেয় রয়টার্স। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নভেম্বরে এক কনফারেন্স কলে নিউ ইয়র্ক ফেড ও সুইফটের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মামলার বিষয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এরপর রিজল কর্তৃপক্ষের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ চুরির ঘটনায় নিজেদের গাফিলতির দায় এড়াতে তথ্য গোপন করে এখন আরসিবিসিকে ‘বলির পাঁঠা’ বানাতে চাইছে। আইনত যেসব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব, তার সবই ফিলিপাইনের সিনেট এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দিয়েছে আরসিবিসি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সম্ভব সব কিছুই লুকিয়েছে। ব্যাংক খাতে হ্যাকিংয়ের সবচেয়ে বড় এই ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার যে তদন্ত করেছিল, তার প্রতিবেদন দেখতে চেয়েছিল ফিলিপিন্স সরকার। কিন্তু অর্থমন্ত্রী মুহিত তখন বলেছিলেন, ফিলিপিন্স চাইলেও ওই প্রতিবেদন তাদের দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মুহিত গতকাল বুধবারও বলেন, এখন (প্রতিবেদন) প্রকাশ করব না, সিদ্ধান্ত এখনও নেই নাই, দেখি কখন (প্রকাশ) করি।