ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার অভিযোগ কারওয়ান বাজার রেল সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের
তারিথ
: ২১-০৭-২০১৮
অনলাইন ডেস্ক :
ক্ষতিপূরণ ও পুনর্নির্মাণ বাবদ রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্টকে বরাদ্দ দেওয়া হলেও ক্ষতিপূরণ বাবদ কোনো টাকা পাননি বলে অভিযোগ রাজধানীর কারওয়ান বাজারের রেলওয়ে সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ এই দোকান মালিকদের। ১৯৭৪ সালে কারওয়ান বাজার এলাকার রেললাইনের পাশে ব্যবসা শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। ১৯৮৮ সালে রেলওয়ে এসব দোকান উচ্ছেদ করলেও পরে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে এই জায়গায় ২৭০টি দোকান বানিয়ে তা ব্যবসায়ীদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। রেলওয়ের এই জমিতে কারওয়ান বাজার সেমিপাকা শপিং কমপ্লেক্স তৈরি করে ব্যবসায়ীদের কাছে বাৎসরিক ইজারা দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্ট। তবে ২০১১ সালে নির্মাণ শুরু হওয়া ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য সরকারি-বেসরকারি ২২০ দশমিক ১৬ একর জমি অধিগ্রহণের মধ্যে তেজগাঁও রেল গেইট থেকে কারওয়ান বাজার কামারপট্টি পর্যন্ত রেললাইনের পশ্চিম পাশের ২৭০টি দোকানসহ রেলওয়ে মার্কেটও অধিগ্রহণ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। গত মঙ্গলবার থেকে অধিগ্রহণ করা জমি থেকে স্থাপনা অপসারণ শুরু করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এ সময় গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানের মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন। উচ্ছেদ ও স্থাপনা অপসারণ নিয়ে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্নির্মাণ বাবদ রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্টকে যে দুই কোটি ৬২ হাজার ৯০০ টাকা দিয়েছে সেতু বিভাগ, সেই টাকা পাননি তারা। ভূমি অধিগ্রহণ আইন ১৯৮২ অনুযায়ী অধিগ্রহণকৃত জমি ও তাতে অবস্থিত ঘরবাড়ি, স্থাপনা, পুকুর ও গাছপালার ক্ষতিপূরণ সিসিএলের (ক্যাশ কমপেনসেশন আন্ডার ল) মাধ্যমে দিতে হবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন পুস্তিকায় দেখা গেছে, অধিগ্রহণকৃত নিজস্ব জমি বা বৈধ লিজ চুক্তির মাধ্যমে লিজ জমিতে ব্যবসায়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। আয়কর প্রমাণপত্র নেই এমন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে স্থানান্তর অনুদান হিসেবে দেওয়া হবে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে তিন মাসের ১৫ হাজার টাকা। মাঝারি ব্যবসায়ীদের মাসে ১০ হাজার করে ৩০ হাজার এবং বড় ব্যবসায়ীদের ১৫ হাজার করে তিন মাসের আয়ের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৪৫ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। এছাড়াও যাদের আয়কর প্রমাণপত্র আছে তাদের জন্য আয়কর প্রমাণপত্র অনুযায়ী ব্যবসায় স্থানান্তর অনুদান নির্ধারিত হবে, ব্যবসায়ীরা সে অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবেন। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হলে তিন মাসের ক্ষতিপূরণ হিসেবে এককালীন সর্বোচ্চ ২০ হাজার, মাঝারি ব্যবসায়ী সর্বোচ্চ ৫০ হাজার এবং বড় ব্যবসায়ী ৭৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে পাবেন। ২০১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রেলভবনে অনুষ্ঠিত সভায় বনানী থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত রেলওয়ের স্থাপনা অপসারণ করার সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার বলা হয়েছিল। তবে উচ্ছেদের আগে ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ার অভিযোগের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানান তারা। কারওয়ানবাজার রেলওয়ে মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. বাচ্চু গাজী জানান, অধিগ্রহণের ফলে ব্যবসা বন্ধ রাখতে হয়েছে তাক। এ অবস্থায় অনুদান এবং ক্ষতিপূরণের টাকা পেলে সাময়িক উপকার হতো তার। দোকান ভাইঙ্গা দেওয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছি। কর্মচারীরা বেকার, আমাদের ছেলে-সন্তানরা বেকার। তারপরে বাজারে বাকি যা দিছি, তারও কোনো টাকা পাইতেছি না। এইখান থেকে উইঠা গেলে এই টাকা তো আর পামু না। এরা আমাগোরে ক্ষতিপূরণ দিব বলছিল, তাও দিতাছে না। পুনর্বাসন করবো বলছিল, তাও করতাছে না। এসব দোকানের মধ্যে ১৫৩টি দোকান তেজগাঁও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা নিয়েছেন। এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুস শুকুর প্রধান জানান, সরকারি জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কোনো আপত্তি নেই তাদের। তবে ব্যবসায়ীদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের স্ট্রাকচার বিলটা রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্ট অনেকটা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। যেহেতু তারা নিয়ে গেছে, এজন্য তারা আমাদের অনুরূপ একটা মার্কেট আমাদের বানিয়ে দিক। কিন্তু তারা আদৌ মার্কেট বানাবে কি না, বানালে কোথায় বানাবে সে ব্যাপারে আমরা কিছু জানতে পারছি না। এ সমিতির কোষাধ্যক্ষ আবদুল হালিম অভিযোগ জানিয়ে বলেন, জমি অধিগ্রহণ করার আগে সমিতির প্রতিটি সদস্য কল্যাণ ট্রাস্টকে নিয়মিত খাজনা, আয়কর পরিশোধ করেছেন। এর পাশের অন্য বিপণি বিতান-বস্তিগুলোকেও বিল দেওয়া হয়েছে। যাদের অস্থায়ী স্থাপনা আছে তারাও বিল পেয়েছে। স্টেশনের পাশের মুরগির মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও টাকা পেয়েছেন। তাদের মার্কেটও এখনও উচ্ছেদ করা হয়নি। অথচ আমাদের কর্মচারীর বিল দিল না, ব্যবসায়িক ক্ষতিপূরণের বিল দিল না। উচ্ছেদ শুরু করে দিয়েছে। এ নিয়ে ‘সেতু কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই’ জানিয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক কাজী মুহাম্মদ ফেরদৌস বলেন, ক্ষতিপূরণের টাকা বাংলাদেশ রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্টকে পরিশোধ করা হয়েছে। আমরা রেলওয়ের জমি অধিগ্রহণ বাবদ যা পাওনা, তা দিয়ে দিয়েছি। আর ওই মার্কেট যেহেতু রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্টের, সে কারণে ক্ষতিপূরণের টাকাটা তাদের দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা বুঝে নিবেন। তিনি বলেন, আর এখানে যারা ব্যবসা করছে সেই ক্ষতিপূরণের টাকা আমরা পর্যায়ক্রমে দিয়ে দেব। যারা ব্যবসা করছেন তারা সবাই টাকা পাবেন। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন ‘বিষয়টি পুরোপুরি জানা নেই’ উল্লেখ করে এ ব্যাপারে বলেন, ট্রাস্ট একটা আলাদা সংস্থা। তারা আলাদা কাজ করে। তবে যতদূর জানি এখানে যারা তাদের জন্য আলাদা একটা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আছে। তারা একটা ক্ষতিপূরণ পাবে। যেটা সেতু কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্টের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল হকের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। আনোয়ারুল হক বলেন, উনি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) ট্রান্সফার হয়েছেন বলে আমাকে কয়েকদিনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কাজ করছি। আমি তেমন তথ্য দিতে পারব না। এরপর তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্টের উপ-পরিচালক (অর্থ) আ ন ম শহীদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। আ ন ম শহীদুর রহমান বলেন, সেতু কর্তৃপক্ষ যে টাকা দিয়েছে তা কল্যাণ ট্রাস্টের স্থাপনা অপসারণ ও পুনর্বাসনের জন্য দেওয়া হয়েছে। তাদের ক্ষতিপূরণ দিবে সেতু কর্তৃপক্ষ। আমাদের মার্কেট পুনর্নির্মাণ এবং কল্যাণ ট্রাস্টের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুই কোটি টাকার মতো দিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দিবে সেতু কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে জমি অধিগ্রহণ করার পর গত দুই বছর ব্যবসায়ীরা মার্কেট ব্যবহার করেছে। সে হিসেবে কল্যাণ ট্রাস্ট এখনও ব্যবসায়ীদের কাছে দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা পাবে। ক্ষতিপূরণের ভার সেতু কর্তৃপক্ষকে দিলেও ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছেন ট্রাস্টের উপ-পরিচালক শহীদুর। আমরা রেলওয়ের কাছে জায়গা চেয়েছি। সেটা দিয়ে মার্কেট নির্মাণ করা হবে। সেখানে এই মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অগ্রাধিকার পাবেন।