এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার বাজারে বাড়ছে তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয়
তারিথ
: ২৪-০৭-২০১৮
অনলাইন ডেস্ক,ফাইল ছবি :
অপ্রচলিত বাজারে দেশের তৈরি পোশাক রফতানি আয় বাড়ছে। ওই বাজার ইউরোপের বাইরে এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকায়। তার মধ্যে ভারতের বাজারেই রপ্তানি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। আর এশিয়ার বাজারগুলোতে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশের বেশি। তাছাড়া লাতিন আমেরিকার মতো অপ্রচলিত বাজারগুলোতেও রপ্তানি আয় বেড়েছে। মূলত দেশের পোশাক খাতের কারখানার মান উন্নয়ন, উন্নত কর্মপরিবেশ, শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উদ্যোক্তাদের শক্ত প্রতিশ্রুতির ফলে অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের রপ্তানি আয় বাড়ছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বিজিএমইএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পোশাক রপ্তানিতে ভারত বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ। অথচ ওই দেশের বাজারেই বাংলাদেশের পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে। বিদায়ী অর্থবছরের দেশটিতে আয় হয়েছে ২৮ কোটি ডলার। তার আগের বছর ছিল ১২ কোটি ডলারের একটু বেশি। তাছাড়া বড় অঙ্কের রপ্তানি হয়েছে জাপান ও কোরিয়াতেও। সব মিলিয়ে এশিয়ার ২০টি দেশ থেকে আয় হয়েছে ২১২ কোটি ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ১৮৩ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশের বেশি। তাছাড়া প্রধান দুই বাজারের বাইরে অপ্রচলিত বাজার থেকে আয় হয়েছে ৪৬৭ কোটি ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৪২৪ কোটি ডলার। এ সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। সূত্র জানায়, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক খাতের নতুন বাজারগুলোতে বেশ সুখবর ছিল। এই সময় অপ্রচলিত বাজারগুলোতে বেশ সাড়া পাওয়া গেছে। ভারতের স্থানীয় বাজারে বিশাল চাহিদা ও অশুল্ক বাধা দূর হওয়া এবং নিজের প্রয়োজনে ওসব বাধা শিথিলায়নের ফলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়ছে। বিশ্ব যখন ২০০৫ সালের পর কোটামুক্ত হলো, বাংলাদেশ তখন তার সক্ষমতা অন্বেষণ করতে থাকে। ফলে ইউরোপ এবং আমেরিকায় সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি বাড়াতে থাকে। পোশাকের জন্য জাপানের বাজার সংবেদনশীল হওয়া সত্ত্বেও শিল্পমুক্ত সুবিধার সুবাদে ওই বাজারে ক্রেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে জাপানের মতো বাজারে বাংলাদেশ উচ্চমূল্যের পোশাকের বাজার ধরতে শুরু করেছে। তাছাড়া জাপানি ক্রেতারা এদেশের কারখানাগুলোতে অতি সতর্কতার সঙ্গে তাদের পোশাকগুলো তৈরি করে। সূত্র আরো জানায়, তৈরি পোশাক খাতের নতুন সম্ভাবনার বাজার হিসেবে দেখা দিয়েছে লাতিন আমেরিকারও বাজার। ব্রাজিল, চিলি এবং মেক্সিকোর মতো দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনৈতিক দেশগুলোতে পোশাকের বাজার বাড়ছে। তবে ওই অঞ্চলের দেশগুলোতে রপ্তানি ও যোগাযোগ বাড়াতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যোগাযোগ। কারণ লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে একসময় যোগাযোগের তেমন কোনো সুযোগ ছিল না। এমনকি প্রথম ২০০৯ সালে ব্রাজিলে বাংলাদেশের দূতাবাস হয়। তারপর থেকে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা বাজার অন্বেষণে ওসব দেশে যায়। ধীরে ধীরে ব্রাজিল, চিলি এবং মেক্সিকোর মতো দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি হতে থাকে। আর ওই সুফল এখন পাচ্ছে দেশের তৈরি পোশাকের খাতের ব্যবসায়ীরা। এদিকে এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএ সাবেক প্রথম সহসভাপতি এএইচ আসলাম সানি জানান, রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর দেশের তৈরি পোশাক খাত অনেকটা নতুন রূপে তৈরি হয়েছে। ছোট ছোট কারখানা বন্ধ হলেও অনেক বড় কারখানা হয়েছে। সেগুলো আকারে ও প্রযুক্তির দিক দিয়েও কয়েক গুণ বড়। তাছাড়া চায়না মৌলিক পোশাক তৈরির থেকে পিছিয়ে পড়লে ওসব কার্যাদেশ আফ্রিকার দেশগুলোতে যাওয়ার কথা থাকলেও অবকাঠানো, শ্রমিকের দক্ষতা এবং ভাবমূর্তি ভালো না হওয়ায় ওসব দেশে যায়নি। অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, দেশের পোশাক খাতের বিশ্বমানের পরিবেশবান্ধব কারখানা হয়েছে। উন্নত কর্মপরিবেশ, শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিশ্রুতি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ফলে চায়না, ভারত, জাপানসহ এশিয়ার দেশগুলোতে বাংলাদেশের বাজার বাড়ছে। আগে বাংলাদেশের অন্যতম বাজার ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা।