রবিউল ইসলাম সোহেল:
আমাদের দেশে বর্তমানে জনপ্রিয় একটি মাধ্যম এফএম রেডিও। এই জনপ্রিয়তার পেছনে একটি কারণ ছিল। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির দাপটে বাংলাদেশের সংগীত শিল্প যখন প্রায় ধ্বংসের পথে, তখন ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয় কয়েকটি এফএম রেডিও চ্যানেল। শুরুর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নতুন নতুন আইডিয়া এবং নতুন ধরনের পরিবেশনার মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এফএম রেডিও চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে বাংলা গান আবার ফিরে পেতে থাকে হারানো গৌরব। তরুণ প্রজন্মের মুখে মুখে ঘুরতে থাকে বাংলা গান এবং বিভিন্ন আরজেদের কথা। এফএম ব্যান্ডের রেডিও স¤প্রচার অনেক আগে থেকেই বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হলেও, বাংলাদেশে এর প্রচলন হয়েছে প্রায় ১ যুগ। প্রথম দিকে বিবিসি রেডিও, ভয়েস অফ আমেরিকা প্রভৃতি বৈশ্বিক চ্যানেলগুলোই কেবলমাত্র বাংলাদেশে এফএম স¤প্রচার পরিচালনা করত। বাংলাদেশী মালিকানাধীন প্রথম এফএম রেডিও চ্যানেল হলো রেডিও টুডে। ২০০৬ সালে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। এর অল্প কিছুদিন পরই আসে আরেকটি চ্যানেল রেডিও ফুর্তি। বর্তমানে বাংলাদেশে বিশটিরও বেশি বেসরকারি এফএম রেডিও চ্যানেল রয়েছে। যাত্রা শুরু করার পর পরই এফএম রেডিও চ্যানেলগুলো তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। গান নির্বাচন ও পরিবেশনায় নতুনত্ব খুব সহজেই তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করে ফেলে। চলতি পথে এফএম রেডিও চ্যানেলগুলোর মতো বিনোদনের মাধ্যম আর নেই। মূলত বিভিন্ন ধরনের গান শুনতে পারাটাই এফএম চ্যানেলগুলোর মুল আকর্ষণ। এর উপর আবার রয়েছে প্রিয় ব্যান্ড বা শিল্পীদের সরাসরি পরিবেশনা ও সাক্ষাৎকার। পাশাপাশি প্রেম, ভূত, কৌতুক, সাম্প্রতিক ঘটনার মত জনপ্রিয় বিষয় নিয়ে করা অনুষ্ঠানগুলোও শ্রোতা ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এফএম রেডিও চ্যানেলগুলো বাংলাদেশের তরুণদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে। অনেক তরুণই এখানে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখেন। আরজে টুটুল, নীরব, সায়েম, টুটুল, সাদিয়া, মেঘলা, রাসেলের মতো নিজেদের জায়গা সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।
তরুণদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় পেশা আর জে। আর জে মানে রেডিও জকি। তরুণদের মধ্যে এই পেশা নিয়ে বিশেষ ধরনের আকর্ষণ কাজ করে থাকে। তবে এই পেশায় কীভাবে আসতে হবে, এই পেশায় আসতে কী কী জানতে হবে এসব বিষয়ে জানা না থাকায় এই পেশায় আসার মতো সাহস অনেকেই সঞ্চয় করতে পারেন না। তাই যারা আসলেই মন থেকে আরজে হতে চান, কীভাবে এই পেশায় আসবেন, এই পেশার সম্ভাবনা কতটুকু এসব বিষয় নিয়ে আমাদের আজকের এই মূল ফিচার। কথা বলেছেন, রেডিও টুডে ৮৯.৬ এর অন্যতম আর জে এবং প্রোগ্রাম অব হেড টুটুল। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন দৈনিক প্রভাতী খবরের সিনিয়র সাংবাদিক রবিউল ইসলাম সোহেল। সহায়তা করেছেন এই পত্রিকার বার্তা সম্পাদক আসিফ হাসান। প্রভাতী খবর: বাংলাদেশের এফএম রেডিওগুলোর একটি বড় সমালোচনা হচ্ছে এর উপস্থাপকদের ভাষার ব্যবহার। বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে কথা বলা এবং তরুণ প্রজন্মের উপর এর প্রভাবের কথা বিবেচনা করে অনেকেই এটাকে বাংলা ভাষার বিশুদ্ধতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন। যদিও সরকারের নির্দেশনা এবং ক্রমাগত মনিটরিং-এর জন্য এ বিষয়গুলো এখন অনেকটাই সংশোধন হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? টুটুল: প্রথমেই বলে রাখি আমার ভাষা কিংবা সংস্কৃতির অপমান আমরা সহ্য করি না। বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে কথা বলার প্রবণতা আমার মনে হয় এখন একটু কমে গেছে। আমরা যখনই একজন আর জে নিয়োগ করি, তখন আমরা তাদের বাংলা বলার দক্ষতা যাচাই-বাছাই করি। আমাদের দেশের প্রায় সব রেডিও চ্যানেলই এখন ভালো করছে। তবুও মানছি যে ধবধবে সাদা কাপড়ে একটুখানি দাগ লাগলেই স্পষ্ট দেখা যায়। সমাজের সকলখানে এমনকি দেশীয় সিনেমা নাটকেও যখন ভাষার বিকৃতি ঘটে অবলীলায় তখন আমাদেরকেই শুধু আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়, কেন আমরা উচ্চারণ কে উচ্চাড়ণ কিংবা বারি কে বাড়ি বললাম! নাটক কিংবা সিনেমার ডায়ালগে যখন খাইছি ধরছি মারছি বিরামহীনভাবে সহ্য করতে হয়, ঠিক তখনি বিদেশী ভাষার মিশ্রণ নিয়ে আমাদের দিকেই আঙ্গুল তোলা হয়। মজার ব্যাপার হলো এই যে, প্রতিদিন যখন লক্ষ মানুষ দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে আমাদেরকে নিয়মিত শুনতে থাকে, ঠিক তখন আমাদেরকেই প্রতিযোগিতার একদম বাইরে রেখে সবচেয়ে বেশী সমালোচনা করা হয় । তবুও আমরা মেনে নিয়েছি। আলোচনা থেকে কিছু না পেলেও সমালোচনা থেকেই কিছু নিয়ে আমরা সামনে এগোচ্ছি। প্রভাতী খবর: আপনি কীভাবে আরজে হলেন এবং কেন এই পেশায় এলেন? টুটুল: ছোটবেলা থেকেই রেডিও শুনতাম। মায়ের সাথে রাত জেগে বাংলাদেশ বেতারের নাটক শুনতাম। এই মাধ্যমের প্রতি টান তখন থেকেই। আবৃত্তি করতাম, এখনও করি। মিডিয়াতে কাজ করার প্রচর ইচ্ছেও ছিল। সবকিছু মিলিয়ে এই দেশে যখন এফএম রেডিও চালু হলো শুরুতে না শুনলেও এরপর মন থেকে একটা ইচ্ছা তৈরি হলো যে আমিও কাজ করব। এরপর একটা ট্রেনিং কোর্স করলাম, সিভি জমা দিলাম ও আর জে হলাম। ২০১০ থেকে শুরু করেছি, এখনও কাজটাকে প্রচÐ ভালোবেসেই করে যাচ্ছি। শ্রোতাদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা পেয়েছি। আশা করি সামনের দিনগুলোতেও পাব। এখন উপলব্ধি করি যে, আমি ঠিক কাজটাই করছি। প্রভাতী খবর: বাংলাদেশে একজন আরজের ক্যারিয়ার কেমন সম্ভাবনাময় বলে আপনার মনে হয়? টুটুল: আমার জায়গা থেকে বলব এই সময়ে শতভাগ সম্ভাবনাময়। মাত্র ৮/৯ বছর আগে যখন এই দেশে এফএম রেডিও চালু হলো এবং ওই সময় যারা আরজে হিসেবে কাজ শুরু করলেন, তখন তাদের অনেকেই এই পেশাকে টাইম পাস বা নেশা হিসেবেই শুরু করেছিলেন। ওই সময়ে তাদেরকে অনেকটা অনিশ্চিত পথেই হাঁটতে হয়েছিল এবং নিজেদের অবস্থান শক্ত করার জন্য যথেষ্ট প্রতিক‚লতাকে মোকাবেলা করেই এগুতে হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এই মাধ্যমের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বিভিন্ন উদ্যোগীমহল এখন ব্যবসায়িক লাভ বিবেচনা করে এফএম স্টেশন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং এ ক্ষেত্রে সরকারও এগিয়ে এসেছেন, দিয়েছেন নীতিমালা। তাই এই পেশায় ভালো ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখাটা অবান্তর নয়। প্রভাতী খবর: একজন আরজে হতে হলে কী কী প্রয়োজন? টুটুল: প্রথমত, প্রবল ইচ্ছা-মন থেকে চাইতে হবে, স্বপ্ন দেখতে হবে, ভালোবাসতে হবে। অন্য সবার চেয়ে নিজেকে সবসময় একটু বেশি আপগ্রেড রাখতে হবে। নিজ দেশের সংস্কৃতি, ভাষা, কৃষ্টি, চালচলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। মাতৃভাষা অবশ্যই শুদ্ধভাবে বলতে ও জানতে হবে। ভিনদেশি ভাষা সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিয়েই বলতে হবে। সর্বোপরি নিজে কী বলছি তা সম্পর্কে নিজেরই আগে পূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে। আর কাজের প্রতি সৎ থাকতে হবে। প্রভাতী খবর: যদি কেউ আরজে হতে চায়, তাকে কীভাবে শুরু করা উচিত? টুটুল: কথাটা তিক্ত শোনালেও সত্য যে, কোনো কিছু হতে চাইলেই হয়ে যাওয়া যায় না। একজন ব্যক্তিকে মাইক্রোফোনের সামনে কথা বলতে দেখা বা শোনা আর অমনি খুব সহজেই নিজে পারব বলে মনে করে ফেলা এক কথা নয়। তাই আমি মনে করি এই পেশায় আসতে হলে কোনো রকমে নিজেকে তৈরি করে এলেই হবে না; বরং যারা এর মধ্যে আরজে হিসেবে অনেকদিন ধরে কাজ করছেন এবং সুনাম কুড়িয়েছেন তাদের কাছ থেকে ধারণা নিয়ে একটু শিখে এলে ভালো। এরপর খেয়াল রাখতে হবে স্টেশনগুলো কখন সার্কুলার দেয়। একইসাথে নিজের জীবন বৃত্তান্তটাও খুব যতœ করে বানাতে হবে। আর নিজের উপর আস্থা হারালে চলবে না। প্রভাতী খবর: বতর্মানে এফ এম বেতার স্টেশনগুলো যথেষ্ট জনপ্রিয়। এর পিছনে কোন অনুষঙ্গ সক্রিয় বলে আপনি মনে করেন? টুটুল: প্রতিদিন যে মানুষগুলো আমাদেরকে শোনেন, শুধু শোনেন বললে ভুল হবে, নিজেদের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, মান-অভিমানসহ জীবনের নানা রকম টানাপোড়েনসহ অনেক কথাই কিছু ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়ে দিতেও একদমই কার্পণ্য করেন না, সেই মানুষগুলোর ভালবাসার দায়বদ্ধতা নিয়েই আমরা কাজ করছি, প্রতিদিন হটসিটে বসছি, দেদারছে কথা বলে যাচ্ছি, জীবন এবং চারপাশ থেকে যা কিছু শিখছি বা দেখছি তা-ই ঐ মানুষগুলোর উদ্দেশ্যে বলে যাচ্ছি। জনপ্রিয় হওয়ার এটিও একটি বড় কারণ। আমাদের প্রতিবেশী দেশে প্রায় আশির দশকের মাঝামাঝি থেকেই এফএম ব্যান্ডের যাত্রা শুরু, সেখানে আমরা শুরু করেছি প্রায় এক যুগ হলো। স্বভাবতই ভ্রু কুঁচকে একটা জিজ্ঞাসা আসতেই পারে যে আমরা তাহলে কাদেরকে অনুসরণ করে শুরু করলাম, বা এই লাইনে শুরুতে যারা কাজ শুরু করলেন তাঁরা কাদেরকে দেখে বা শুনে কাজ শিখলেন? সহজ এবং সরল স্বীকারোক্তি হলো এই যে, পথ দেখাবার মত অথবা হাত ধরে কাজ শেখাবার মত তেমন কেউই ছিলেন না। শুধুমাত্র এদেশের কিছু সাহসী মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশের অনুকরণে যাত্রা শুরু করলেন। ব্যাস, মানুষ আবার রেডিও শোনা শুরু করলো, রাত জেগে শুনতে থাকলো, অফিসে যেতে যেতে, রান্না করতে করতে, কাজের ফাঁকে, বন্ধুদের আড্ডায়, চা এর দোকানে বাজতে থাকলো রেডিও। উপস্থাপনায় ভিন্নতা এবং বেশী বেশী গান শোনার নিশ্চয়তায় অল্পদিনেই এই মাধ্যমটি জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। এ ছাড়া শুরু থেকেই স্টেশনগুলো তারণ্যকে উপজীব্য করে আমার ভালবাসা টাইপের কিছু জীবনমুখী অনুষ্ঠান স¤প্রচার করে শ্রোতাদের খুব কাছে পৌঁছে গেলো অল্পদিনেই। শুরুতে যদিও একটা বয়সী শ্রোতারাই এফএম রেডিও শুনতো, কিন্তু সময় যত এগোতে থাকে ততোই সব শ্রেণি-পেশা এবং বয়সের মানুষগুলোই এর সাথে সংযুক্ত হতে থাকে। বিয়ে বাড়ি কিংবা পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলোতে অন্য দেশীয় গান বেজে ওঠার পাশাপাশি দেশীয় বাংলা গানগুলোও আবার সমান তালে বেজে উঠতে থাকে। এর একটা বড় কারণ হচ্ছে এই যে, এফএম রেডিওগুলো শুরু থেকেই ভিনদেশী গানের পাশাপাশি অনেক বেশী মাত্রায় দেশীয় গান বাজাতে থাকে। আর এর ফলে শ্রোতারা খুব সহজেই ভাল গান বেছে নিতে পারে। এছাড়া সদ্য ঘটে যাওয়া সংবাদ, ট্র্যাফিক জ্যাম, আবহাওয়া, বিশিষ্ট সেলিব্রিটিদের সাথে হটসিট বসাসহ নানামুখী শ্রোতাবান্ধব কর্মসূচী নেয়ার ফলেই আজকে এই মাধ্যমটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। লক্ষ্য করে দেখবেন বাংলাদেশ বেতারও একসময় কেউ শুনতো না। তারা এফএম তরঙ্গে এসে কিছুটা ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠান প্রচার শুরু করাতে কিন্তু শ্রোতারা বাংলাদেশ বেতারও শুনতে আগ্রহী হচ্ছে। প্রভাতী খবর: একটা অভিযোগ আছে এফএম রেডিওগুলো আকাশ সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখছে। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন? টুটুল: আমি খুব ভাল করেই বুঝতে পারছি যে ঠিক এখনি আপনি বলতে চাচ্ছেন যে আমরা অনেক ভিনদেশী গান বাজাই। আচ্ছা আকাশ সংস্কৃতির এই ব্যস্ত সময়ে যদি আমরা একটাও বিদেশী গান না বাজাতাম, তাহলেই কি এই দেশে অন্য ভাষার গান শোনা বন্ধ হয়ে যেত? নাকি আমাদের সংগীতাঙ্গন রাতারাতি বদলে যেত? আসলে জানালা খোলা রাখতেই হবে, আর বাইরের মুক্ত বাতাস ঘরে প্রবেশ করবেই। ভাল কাজ দিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে দরজা জানালা সব বন্ধ করে রাখলে হবে না, বরং সেগুলো উঠোনে ছড়িয়ে দিতে হবে, আর সেই উঠোনে অন্যকেও বসতে দিতে হবে। একটু চোখটা বন্ধ করে দশটা বছর পেছনে চলে যান তো! বাংলা গান শোনা আমরা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। অভ্যাসটা প্রায় যেতে বসেছিল। এদেশের এফএম রেডিওগুলোতে গান তথা দেশীয় গান বাজতে থাকলো দিনব্যাপী। পুরনো গানের পাশাপাশি একদম নতুন শিল্পীদের গানও বাজতে থাকলো। শ্রোতাপ্রিয়তা পেতে থাকলো অনেক নতুন ভাল গান। আর সেই কারণেই কেউ স্বীকার করুক আর নাইবা করুক একদম মাটি থেকে আকাশে উঠে আসলো এদেশের অনেক সংগীত শিল্পী। যারা এখনো ভাল কাজ করছেন। মানুষের মধ্যে দেশীয় গান শোনার অভ্যাসটাও আবার ফিরে এলো। এমনকি এই প্রজন্মের যারা এ দেশের তথা এই উপমহাদেশের বিখ্যাত গান এবং কণ্ঠশিল্পীদের প্রায় ভুলতেই বসেছিল, তাঁদের জন্যই শুরু হলো ওল্ড ইজ গোল্ড নামের শ্রোতানন্দিত অনুষ্ঠান। প্রভাতী খবর: একটি চ্যানেলকে জনপ্রিয় করতে কি ধরনের অনুষ্ঠানের প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিৎ? টুটুল: বিনোদনের এই মাধ্যমটির একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে সৃষ্টিশীলতার অভাব। সব চ্যানেলের অনুষ্ঠানে খুব বেশি পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় আরেকটু সৃজনশীল হলে এর জনপ্রিয়তা আরও বহুগুণ বেড়ে যেত। এটাও ঠিক যে, প্রায় সব রেডিও চ্যানেলই একই ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার করে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এ সমস্যাটা আগে বেশি হতো। বর্তমানে অনুষ্ঠানের কিছু ভিন্নতা এসেছে। এছাড়া এখন চ্যানেল সংখ্যা বেড়ে গেছে। সঙ্গত কারণে প্রতিযোগিতাও বেড়ে গেছে। বাজারে টিকতে হলে অনুষ্ঠানে নুতনত্ব আনতে হবে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে গুরুত্ব দিয়ে সেই আঙ্গিকে অনুষ্ঠান তৈরি করতে হবে। বর্তমান বা উঠতি প্রজন্মকে বিনোদন দেয়ার পাশাপাশি স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। একইসাথে খেলা ও আন্তার্জাতিক ঘটনাবলীর সূ² বিশ্লেষণসহ টক শোরও আয়োজন করা যেতে পারে। বাংলাদেশের সমাজজীবনে, বিশেষ করে নগর জীবনে আবির্ভূত এফএম চ্যানেলগুলোর প্রভাব অনেক। অনেক মানুষেরই দিন শুরু হয় এফএম চ্যানেলের খবর কিংবা রবীন্দ্র সংগীত শুনতে শুনতে। গাড়িচালকরা রেডিওর মাধ্যমেই জেনে যান কোন রাস্তায় জ্যাম বেশি, কোন রাস্তায় কম। অনেক তরুণকে দেখা যায় এফএম আরজেদের বাচনভঙ্গি নকল করতে। অনেকে আবার এফএম রেডিওতে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নে বিভোর। প্রভাতী খবর: একজন আরজে হিসেবে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনকে কিভাবে সমন্বয় করেন? টুটুল: বিষয়টি আমি উপভোগ করি। একসময় কথা বলাকে নেশা হিসেবে নিলেও বর্তমানে এটি আমার অন্যতম এবং একমাত্র পেশা। অনেকে বলেন আমরা নাকি খালি কথা-ই বলি। কথা ছাড়া নাকি আমাদের আর কোন কিছুই করে দেখাবার নাই। ঠিক আছে মানলাম। কিন্তু একটা ছোট্ট জিজ্ঞাসা, শুধু কথা শুনিয়ে লক্ষ মানুষকে প্রতিদিন প্রায় তিন থেকে ছয় ঘণ্টা আটকে রাখার কাজটা এই সময়ে যারা খুব ভালভাবেই করে যাচ্ছেন, তাঁরা খুব সহজ কাজ করছেন কি? তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, যারা আমাকে নিয়মিত শুনেন কদিন বলতে পারবেন বাতাসে যে মানুষটি চরম উচ্ছ¡াস নিয়ে প্রতিদিন শব্দ ছড়িয়ে দিচ্ছে, সেই মানুষটা আজ কতটা ভাল আছে, কতটা সুস্থ আছে, তার মনের কিংবা পকেটের স্বাস্থ্য ঠিকঠাক আছে কিনা!! জানি খুব বেশী বলতে পারবেন না। কারণ আমার মতই এই পেশায় বা নেশায় যারা মগ্ন তারা প্রায়ই ভুলে যান নিজেদের সুখ-দুঃখের কথা, অন্যকে আনন্দ দেয়াতেই যেন তার পূর্ণতা। প্রভাতী খবর: শ্রোতাদের উদ্দেশে কোন আর্জি? টুটুল: শ্রোতাদের উদ্দেশে আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। তারা আমাদের আগ্রহ নিয়ে শোনেন, মতামত দেন, সর্বোপরী তাদের যাপিত জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ বলেই মনে করেন আমাদের। এটাও আমাদের বড় একটি প্রাপ্তি। আর দুঃখের কথা যদি বলতে হয় তাহলে বলবো, যে আজ পর্যন্ত কোন সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ের কোন প্রতিষ্ঠান এফএম রেডিওকে তাদের পুরষ্কার বা স্বীকৃতি কাতারে ফেলেননি। সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও কোন কোন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বিভাগে যোগ্যতার ভিত্তিতে পুরস্কার দিয়ে থাকেন। বেসরকারি পর্যায়েও বহু প্রতিষ্ঠান এই মহৎ কাজটি করে থাকেন। স্বীকৃতি বা পুরষ্কার যে কোন কাজকেই আনন্দ দেয়, আরো দায়িত্বশীল করে তোলে। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এফ এম রেডিওকে পুরস্কারে ক্যাটাগরিতে আনা উচিত। তাহলেই প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রটি আরো বিস্তৃত হবে। প্রভাতী খবর: আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। টুটুল: আপনাদেরকেও আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ।
|