শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন পীড়নের অভিযোগ এনে জীবন দিতে হয়েছে ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে। তাঁর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল নৃশংস এই ঘটনা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই বর্বর ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ-মানববন্ধন হয়েছে। সর্বত্রই এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে অনেকে। কিন্তু দেশ নাড়িয়ে দেওয়া এই ঘটনা কি রিরংসাপ্রবণ পুরুষের মধ্যে বিন্দুমাত্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পেরেছে? তেমনটি হলে তো নারী ও শিশুর প্রতি যৌন পীড়নের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না। গত দুই দিনে গণমাধ্যমে আসা খবরে দেখা যাচ্ছে সারা দেশে অন্তত ১৪টি যৌন পীড়নের ঘটনা ঘটেছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে এক কিশোরীকে গণধর্ষণ করেছে সাত দুষ্কৃতকারী। মোবাইল ফোনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেছে তারা। সিলেটে আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে এক তরুণী। বগুড়ার ধুনটে এক মাদরাসাছাত্রীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয়েছে। হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। নওগাঁয় দুই ও রাজবাড়ীতে এক স্কুলছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ময়মনসিংহে শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুমিল্লায় ধর্ষণের অভিযোগে এক মসজিদের ইমামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নওগাঁয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক কিশোরীকে অপহরণের পর ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, পাবনা, বাগেরহাট, বরগুনা, ময়মনসিংহ এবং ঝালকাঠি থেকেও ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগের খবর এসেছে সংবাদপত্রে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব খবরে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এ ধরনের অনাচার চলতেই থাকবে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? বলতে দ্বিধা নেই, সমাজচিত্র আজ অনেকটাই বদলে গেছে। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এখন মেয়েদের জন্য নিরাপদ নয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগে যে সম্পর্ক ছিল, তা এখন নেই বললেই চলে। একটি প্রতিবেদন বলছে, ২০১৭ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৯টি যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও যেন দায়বদ্ধতা থেকে সরে এসেছে। ২০০৯ সালে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটি গঠন করার জন্য হাইকোর্ট থেকে একটি গাইডলাইন দেওয়া হয়েছিল। সংবাদমাধ্যেমে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, উচ্চ আদালতের এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমিটি থাকলেও কোনো কার্যকারিতা নেই। যৌন নিপীড়ন রোধ করার লক্ষ্যে আইন বা বিধিমালা করারও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে সামাজিক অনুশাসন বলতে কিছু আর অবশিষ্ট নেই। ফলে অনাচারী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। অন্যদিকে বিচারহীনতার সংস্কৃতিও যেন অপরাধীদের উসকে দিচ্ছে। আর সে কারণেই শাস্তির একটা বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।