আসছে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট। এটি হবে টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম বাজেট। জানা যায়, নতুন বাজেটে নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে যেমন গুরুত্ব আরোপ করা হবে, তেমনি অর্থনীতির জরুরি প্রয়োজনগুলোও বিবেচনায় রাখা হবে। সংসদে বাজেট উপস্থাপন হতে এখনো এক মাসের কিছু বেশি সময় বাকি আছে। এরইমধ্যে বাজেট নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সভা-সেমিনার করে নতুন বাজেট প্রণয়নে তাদের দাবিদাওয়া তুলে ধরছে। অর্থনীতিবিদরা আগের বাজেটগুলোর ব্যর্থতা তুলে ধরে নতুন বাজেটে সেগুলো সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন। শুধু অর্থনীতিবিদ বা ব্যবসায়ীরাই নন, বাজেট নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহও কিছু কম নয়। নতুন কোনো কর আসছে কি না, করের সীমা বাড়ছে কি না কিংবা বাজারে নতুন বাজেটের কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারেÑতা নিয়েও তাঁরা শঙ্কায় থাকেন। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, নতুন বাজেটের আকার হতে পারে পাঁচ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা, যা এ পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বাজেট প্রাক্কলন। এটি চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৬০ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা বা ১৩ শতাংশ বেশি। সর্ববৃহৎ বাজেটের আর্থিক দায় মেটাতে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়াতে হবে। জানা যায়, প্রাথমিকভাবে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা, পরে কাটছাঁট করে দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অটুট রাখতে নতুন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারও বাড়িয়ে এক লাখ ৯৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে, যা মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬.৮ শতাংশ। সূত্র মতে, আসছে বাজেটের বড় চমক হচ্ছে তিন স্তরের ভ্যাট, যা হবে ৫, ৭ ও ১০ শতাংশ। রাজস্ব আদায়ে করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর ওপরই বেশি জোর দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে। উন্নয়নের এই ধারা আরো বেগবান করতে হবে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন দ্রæততর করতে হবে। এজন্য পদ্মা সেতু, মেট্রো রেলসহ গৃহীত মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রæত সম্পন্ন করতে হবে। বিদ্যুতের উৎপাদন যেমন বেড়েছে, চাহিদাও ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। তাই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ হাবের কাজ দ্রæত এগিয়ে নিতে হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থার আধুনিকায়নও জরুরি। দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ উৎসাহিত করতেও নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নে অনেক বেশি জোর দিতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে মনোযোগ বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রের এই উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো সঠিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্যই প্রয়োজন একটি সুপরিকল্পিত, সুসমন্বিত ও বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট। শুধু বড় বাজেট নয়, বাজেটের সর্বোচ্চ বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে। আগামি বাজেটে মানুষ সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন দেখতে চায়।
|