সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট টাঙ্গুয়া হাওরে প্রতি বছর এ মৌসুমে সুদূর সাইবেরিয়া সহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মাইল পথ পাড়ি দিয়ে অতিথি পাখি আসলেও এ বছর অতিথি পাখি এখনো না আসায় পর্যটক প্রেমীরা হতাশ। এ সময়ে টাঙ্গুয়া হাওরে লেনজা হাস, পিং হাস, বালি হাস, সরালি কাইম, গংগা কবুতর, কালাকূড়া, পিয়ারিসহ বিভিন্ন রঙ্গের অতিথি পাখি আসলেও অন্য বছরের তুলনায় খুবই কম। যা ইতিমধ্যে এসেছে তা আবার শিকার করে চুরি করে বিক্রির পায়তারা করছে এক শ্রেনীর অসাধু চক্ররা। পাখি বিশেষজ্ঞ ও এলাকাবাসী মনে করছেন, পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত টাঙ্গুয়া হাওরে পাখির আবাসস্থল তৈরি করতে কার্যকরী কোন উদ্যোগ নিতে না পারায় বিশাল এই হাওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়া হাওরকে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি ইরানের এক সম্মেলনে এ হাওরকে রামসার এলাকাভুক্ত করা হয়। ২০০৩ সালের নভেম্বর থেকে ইজারা প্রথা বাতিল করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় হাওরের জীব বৈচিত্র্য রক্ষা ও রামসার নীতি বাস্তবায়ন লক্ষে উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। কিন্তু গত ১৮ বছরেও টাঙ্গুয়া হাওরে কোন উন্নয়ন হয়নি বরং যতদিন যাচ্ছে ততই হাওরের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন দায়িত্ব পাওয়ার পর পাখি বিজ্ঞানী ও আইইউসিএনের তত্ব মতে, টাঙ্গুয়া হাওরে দেশি - বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ২১৯ প্রজাতির পাখি ছিল। পৃথিবীর বিলুপ্তপ্রায় প্যালাসিস ঈগল পাখিও আছে এ হাওরে। কালেম, পানকৌড়ি, ভূতিহাঁস, পিয়ংহাঁস, খয়রাবগা, লেঞ্জাহাঁস, নেউপিপি, সরালি, রাজসরালি, চখাচখি, পাতি মাছরাঙা, পাকড়া মাছরাঙা, মরিচা ভূতিহাঁস, সাধারণ ভূতিহাঁস, শোভেলার, লালশির, নীলশির, পাতিহাঁস, ডাহুক, বেগুনি কালেম, গাঙচিল, শঙ্কচিল, বালিহাঁস, ডুবুরি, বক, সারসসহ তখনকার হিসেবে মতে প্রায় ২১৯ প্রজাতির দেশি - বিদেশি পাখি থাকার কথা। কিন্তু ২০১১ সালের আইইউসিএনের অপর এক জরিপে টাঙ্গুয়ার হাওরে ৬৪ হাজার পাখির অস্তিত্ব দেখানো হয়েছে। এতে ৮৬ জাতের দেশি এবং ৮৩ জাতের বিদেশি পাখির কথা উল্লেখ করা হয়। ঢাকা থেকে টাঙ্গুয়া হাওর দেখতে আসা মনিরুজ্জামান ও শাহিন নামে দুইজন পর্যটক জানান, গত কয়েক বছর আগে টাঙ্গুয়া হাওরে যে পরিমান অতিথি পাখি দেখা গেছে বর্তমানে তা দেখা যাচ্ছে না। টাঙ্গুয়া হাওর নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের এক্রকিউটিভ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রিট মো. আল আমিন সরকার জানান, এ বছর অতিথি পাখি একটু কম মনে হচ্ছে। তবে, শীত যত ঘনিয়ে আসবে ততই অথিতি পাখি হাওরে বাড়বে। তিনি বলেন, অসাধু চক্ররা যাতে হাওরে পাখি শিকার করতে না পারে সে জন্য পুলিশ, আনসার সার্বক্ষনিক নজর রাখছে।
|