ইমরুল হাসান বাবু, টাঙ্গাইল :
দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে না হতেই মোটরসাইকেল, সিএনজি, অটো রিক্সা বা প্রাইভেট কারে করে ভ্রমণ পিপাসুরা ভীড় জমাতে থাকে মনতলায়। শুধু তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীরাই নয়, পরিবার পরিজন নিয়ে শত শত মানুষ এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাস্তার দুই পাশেই থৈ থৈ পানি। মৃদু বাতাসে ছোট ছোট ঢেউ আছরে পড়ছে রাস্তার পাশে। কেউ কেউ নৌকায় করে পানিতে ভাসছে। তাদের হাসির শব্দ ঢেউয়ের সাথে পাড়ে এসে পড়ছে। কেউ কেউ রাস্তার সাথে স্লুইস গেইটের পাশে জুয়েল মিয়ার দোকানের সামনে রাখা চেয়ারে বসে, কেউবা দাঁড়িয়ে ফুচকা, চটপটি খাচ্ছে আর প্রকৃতির অপরূপ শোভা উপভোগ করছে। এমনই দৃশ্য দেখা যায় মনতলায়।
মনতলায় গিয়ে জানা যায়, প্রায় বছর খানেক আগে ভাটচান্দা গ্রামের মো. জুলহাস মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়া (৩০) এই মনতলা মোড়ে ফুচকা ও চটপটি বিক্রয় শুরু করে। তখন এখানে ভ্রাম্যমান মোটরসাইকেল আরোহীরা মাঝে মাঝে থেমে ফুচকা-চটপটি খেত। কোনদিন একশ টাকা, কোনদিন দুইশ আবার কোনদিন বিক্রিও হতো না। মাঝে মাঝে কিছু উঠতি বয়সের শহুরে ধনীর দুলাল মোটর সাইকেল নিয়ে এখানে এসে বিকালে আড্ডা দিত। এছাড়া এলাকার কিছু লোক এখানে প্রায় প্রতিদিন বিকালেই তাদের বন্ধু বান্ধব এখানে বসত। এই এরপর থেকে এই মনতলা জনপ্রিয় হতে থাকে। এই মনতলা জনপ্রিয় হওয়ার আরো বড় কারণ হলো শহরের কোলাহল মুক্ত প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ এবং শহরের অতি নিকটে। এরপর চলে আসে বর্ষার পানি। তখন রাস্তার দুইপাশের নিচু জমি পানিতে ভরে গেছে। আর প্রকৃতির সেই অপরূপ সৌন্দর্যে কিছুটা সময় কাটাতেই শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিড় করছে প্রকৃতি প্রেমীরা।
কিভাবে যাবেন মনতলা? টাঙ্গাইল ডিস্টিক্ট গেইট থেকে অটো, সিএনজি, মোটরসাইকেল বা প্রাইভেট কারে করে যেতে পারবেন। অটো এবং সিএনজিতে জনপ্রতি ১৫ টাকা। মটর সাইকেল নিয়ে গেলে শহর থেকে গালা রোডে বিল মাগুরাটা ভাটচান্দা চার রাস্তার মোড়ে অবস্থিত এ মনতলা।
এখানে কি কি আছে? অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নৌকায় করে ভ্রমণের সুযোগ, বটগাছ। এছাড়া আপনি ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে সেই জুয়েল মিয়ার কাছে পাবেন বিভিন্ন ফলের জুস, কফি, সুস্বাধু ফুচকা ও চটপটি। এছাড়াও অন্যান্য দোকানে বিস্কুট, চানাচুর, চা, চিপস ইত্যাদি।
স্থানীয় আলামিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, এখানে সারাদিনে ১ থেকে ২ শ মোটরসাইকেলে করে লোকজন ঘুরতে আসেন, এদের অধিকাংশই উঠতি বয়সের। কেউ আবার অটো বা সিএনজি নিয়ে আসে। প্রকৃতি প্রেমী ভ্রমণ পিপাসুদের নিরাপত্তার জন্য বিকাল ৪ থেকে রাত ৮ পর্যন্ত এই এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করলে খুবই ভাল হয়।
শহরের প্যারাডাইস পাড়ার এক দম্পতির সাথে কথা বললে তারা বলেন, সাংবাদিক ভাই টাঙ্গাইলে অনেকগুলো পার্ক রয়েছে, সেগুলোতে পরিবার নিয়ে যাওয়া যায়না। এখানে খোলামেলা পরিবেশ। চারিদিকে পানি আর পানি। নৌকায় ঘুরার ব্যবস্থা আছে। আর এখানকার চটপটির স্বাদ অনেকদিন মুখে লেগে থাকবে। সত্যি মনতলায় এসে মন জুড়িয়ে গেছে।
মনতলায় প্রকৃতি প্রেমীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সদর ফাঁড়ি ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোশারফ হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, মানুষের নিরাপত্তা দেওয়াই আমাদের কাজ। টাঙ্গাইলে যেহেতু টুরিস্ট পুলিশ নাই, তাই প্রকৃতি প্রেমী ভ্রমণ পিপাসুদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদেরই পালন করতে হয়। আর মনতলায় প্রকৃতি প্রেমীদের সংখ্যা বেড়েছে। এই বিষয়টি আমার নজরেও এসেছে। আমি এসপি স্যারের সাথে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব, যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
|