সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া এক নব জাতককে নিয়ে দুই পরিবারের নানা নাটকীয় কাহিনীর পর অবশেষে মায়ের কোলে ফিরে গেল নব জাতকটি। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর পুত্রবধূ শ্বশুরালয়ে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানানোয় অনেকটা কৌশল অবলম্বন করে দাদী হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে টিকা দেওয়ার কথা বলে তাদের গহিরাস্থ বাড়ীতে নিয়ে যায় এই অভিযোগ পূত্রবধুর। এই ঘটনার পর হাসপাতাল থেকে নব জাতক চুরি হয়েছে এমন সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলেও রাউজানের বেসরকারী হাসপাতাল পাইওনিয়ার কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে ভিত্তিহীন দাবী করে আসছিল। পরে নবজাতকের মা পপি বড়–য়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে স্বীকার করে হাসপাতাল থেকে নবজাতকসহ তাকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর তারা বাড়ী ফেরার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পপি বড়–য়ার শ্বাশুরি নব জাতককে টিকা দেওয়ার কথা বলে হাসপাতাল থেকে কাউকে না জানিয়ে বাড়ী নিয়ে যায়। গত ২৩ নভেম্বর রাউজানের নোয়াপাড়াস্থ পাইওনিয়ার হাসপাতালে রাউজানের গহিরার পৌর এলাকার সুলাল বড়ুয়ার পুত্র ছোটন বড়ুয়ার স্ত্রী পপি বড়–য়া সন্তান জন্ম দেন। সন্তান ভূমিষ্ট হলেও তাদের না জানিয়ে শ্বশুরবাড়ীতে নিয়ে যাওয়ায় নবজাতকের মা পপি বড়–য়া সন্তান ফিরে পেতে অনেক আকুতি-মিনতি করতে থাকে। এই সময় টানা চারদিন নানা নাটকীয়তার পার হলে গত ২৬ নভেম্বর রাউজান থানা প্রশাসন নবজাতককে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় , রাউজান পৌর এলাকার গহিরাস্থ বড়–য়া পাড়ার সুলাল বড়ুয়ার পুত্র প্রবাসী ছোটন বড়ুয়া গত বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে প্রনয়সূত্রে আবদ্ধ হন পাশ্ববর্তী রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের কুল গ্রামের দীপাল বড়ুয়ার কন্যা পপি বড়–য়ার সাথে। বিয়ের তিন মাসের মাথায় পপি বড়–য়ার স্বামী ছোটন বড়–য়া ছুটি কাটিয়ে প্রবাসে ফিরে যাওয়ার পর থেকে তার পরিবারে বউ-শ্বাশুরি দ্বন্ধ শুরু হয়। এই ঘটনার জের ধরে সন্তান সম্ভবা পপি পড়–য়াকে তার পিতা দীপাল বড়–য়া বাপের বাড়ীতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে পপি বড়–য়া শ্বশুর বাড়ীতে আসতে অনীহা প্রকাশ করে। পুত্রবধূকে শ্বশুরালয়ে নিয়ে যেতেজ চোটন বড়–য়ার মা একাধিকবার রাঙ্গুনিয়ায় গেলেও পুত্রবধু তার সাথে শ্বশুরবাড়ী গহিরায় আসতে রাজী হননি। এমতাবস্থায় সন্তানসম্ভবা পপি বড়–য়াকে গত ২০ নভেম্বর চিকিৎসকের পরামর্শে ভর্তি করা হয় রাউজানের নোয়াপাড়াস্থ পাইওনিয়ার হাসপাতালে। ভর্তির তিনদিন পর গত ২৩ নভেম্বর হাসপাতালে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন পপি বড়–য়া। নিজের কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ার বিষয়টি ছোটন বড়–য়া বাবা-মাকে জানালে তারা হাসপাতালে ছুটেন আসে এবং ছোটন বড়ুয়া হাসপাতালের বিল পরিশোধের জন্য তার ভগ্নিপতি রাজু বড়–য়ার কাছে ৩৯ হাজার টাকা প্রেরণ করার পর ২৪ নভেম্বর হাসপাতাল থেকে নবজাতক ও প্রসূতিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র প্রদান করার পর ছোটন বড়–য়ার পরিবারের লোকজন পপি বড়–য়াকে গহিরায় নিয়ে যাওয়ার কথা বললে আবারো সেখানে যেতে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বাক-বিতন্ডা শুরু হয়। সেখান থেকে ছোটন বড়–য়ার পরিবার তাদের নাতনিকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি গহিরায় রওনা দিলে হাসপাতাল থেকে পপি বড়–য়া তার পিত্রালয় রাঙ্গুনিয়ায় চলে গিয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের কাছে হাসপাতাল থেকে তার সন্তান চুরির করে নিয়ে গেছে শ্বশুরপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে প্রিন্ট ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়। ঘটনার এক পর্যায়ে নবজাতকের মা পপি বড়–য়ার সাথে কথা বলে পাইওনিয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ সময় তার কথোপকথনের ভিডিও দৃশ্য ধারণ করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে পপি বড়–য়া হাসপাতাল থেকে তার সন্তানকে শ্বশুরবাড়ীর লোকজন টিকা দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে। পরে ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে গত ২৬ নভেম্বর রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ কেফায়েত উল্লাহ রাউজান পৌর সভার ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলমগীর আলী, রাউজান থানার উপ পরিদর্শক মহসিন রেজা, সহকারী উপ পরিদর্শক মোরশেদসহ রাত আনুমানিক ১১টার দিকে পপি বড়–য়ার শ্বশুরবাড়ী রাউজান পৌর এলাকার বড়–য়া পাড়ায় গিয়ে প্রবাসী ছোটন বড়–য়ার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে নব জাতককে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন। এই ঘটনার বিষয়টি নিয়ে রাউজানের নোয়াপাড়াস্থ পাইওনিয়ার হাসপাতালের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক শুভময় দাশ রাজু এ প্রতিবেদককে জানান, ‘গত ২৪ নভেম্বর পপি বড়–য়াকে তার সন্তানসহ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বিকেল পাঁচটার দিকে হাসপাতার ছাড়ার কথা থাকলেও পপি বড়–য়ার পরিবারের পক্ষ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান নবজাতক শিশুটিকে তার পিতার পরিবারের একজন টিকা দেওয়ার কথা বলে নিয়ে গেছে, এ সময় হাসপাতাল র্কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তাদের একান্ত পারিবারিক বিষয় হওয়ায় তাদেরকে হাসপাতাল ছাড়ার অনুরোধ জানান এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর এ বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো কিছু করার সুযোগ নেই বলে জানানো হলে তারা বিল পরিশোধের পর হাসপাতাল ছেড়ে যায়। পরে বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপর পপি বড়–য়া ও তার পরিবারের কোনো প্রকার অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালকে জড়িয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। দুই পরিবারের দ্বন্ধে সৃষ্টি হওয়া এই ঘটনায় কেন হাসপাতালকে জড়ানো হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। ’