জাতীয় ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। এবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য ‘মানবিক বিশ্ব বিনির্মাণে রবীন্দ্রনাথ’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দেন। এ বছর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হয় রাজধানী ঢাকায়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে গতকাল বুধবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম সিমিন হোসেন রিমি এমপি। বিশেষ বক্তা হিসেবে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক ও শিক্ষক অধ্যাপক সনজীদা খাতুন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত ভাষণ দেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল। রবীন্দ্র স্মারক বক্তা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক উপস্থিত ছিলেন। ‘মানবিক বিশ্ব বিনির্মাণে রবীন্দ্রনাথ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গতকাল বুধবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, প্রবন্ধ পাঠ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি।এ উপলক্ষে টিএসসি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল। বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী ও সংগীত বিভাগের চেয়ারপার্সন টুম্পা সমদ্দার আলোচনায় অংশ নেন। কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় তাঁর ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে স্থানীয় প্রশাসন। বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কুষ্টিয়ার স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে তিনদিন ব্যপী অনুষ্ঠানমালার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন কুষ্টিয়া ১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য আকম সরওয়ার জাহান বাদশা। এর আগে উদ্বোধনী সংগীতের মাধ্যেমে সুভ সূচনা করা হয়। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও সংস্কৃতিক মন্ত্রনালয় যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এছাড়াও ঢাকাসহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হয়। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোও যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করে। রবীন্দ্রনাথ ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে তিনি পশ্চিমবঙ্গের জোড়াসাঁেকার ঠাকুর পরিবারে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘর আলো করে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। রবীন্দ্র বিশেষঞ্জদের মতে এতবছর পরেও তিনি বাঙ্গালীর জীবনে প্রবাদের মত আছেন, আরো কয়েকদশক পরেও থাকবেন। তিনি চির নতুনের কবি, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কবি। মৃত্যুহীন অনন্ত জীবনের সাক্ষর বয়ে যাবেন যুগ থেকে যুগান্তরে। রবীন্দ্রনাথ বাংলার কবি, বাঙ্গালীর কবি তবে তিনি নিজেকে বিশ্বচরাচরের অংশ হিসাবে বিশ্বাস করতেন। বাঙ্গালীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, তুমি নিছক বাঙ্গালী নও, তুমি বিশ্বচরাচরের অংশ। সকলের সঙ্গে মিলিত হয়ে প্রেমের মধ্যে বাঁচতে বলেছেন রবীন্দ্রনাথ। সঙ্গে যুক্ত করতে বলেছেন প্রণীজগৎ, নিসর্গ, প্রকৃতিকে। শুধু তাই নয়, শিল্পের জগৎ, কল্পনার জগতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজের বিস্তার ঘটাতে বলেছেন।