যে কোনো ধরনের গাড়ির জন্য ব্যাটারির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। গাড়ি স্টার্ট করার জন্য ব্যাটারি অত্যাবশ্যক একটি বিষয়। গাড়িতে থাকা সেলফকে ১৫-৩০ সেকেন্ড চালু রাখলে ইঞ্জিন স্টার্ট নেয়। এর জন্য খুব অল্প সময়ের জন্য যে ২৫-১৫০ অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট প্রবাহের প্রয়োজন হয়, আর তার জোগান দিতে হয় ব্যাটারিকে। ব্যাটারি আসলে এক ধরনের বৈদ্যুতিক জলাধার। কিন্তু এবার বিজ্ঞানীরা এমন এক ধরনের প্রযুক্তির কথা ভাবছেন যেখানে নাকি গাড়িতে আলাদাভাবে ব্যাটারি রাখার প্রয়োজন-ই হবে না। ব্যাটারি ছাড়াই তৈরি হবে গাড়ি।
ব্যাটারিবিহীন এই গাড়ির স্বপ্ন দেখানো বিজ্ঞানীর নাম লেইফ অ্যাসপি। সুইডেনের চ্যালমারস ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড ম্যাটারিয়াল সাইন্স বিভাগের অধ্যাপক লেইফ অ্যাসপি কম্পোজিট যন্ত্রাংশের ওজন কমানোর বিভিন্ন কলাকৌশল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। তিনি এমন এক ধরনের গাড়ি তৈরির কথা ভাবছেন যেখানে ব্যাটারির জন্য গাড়িতে আলাদাভাবে কোনো জায়গা দরকার হবে না, গাড়ির কাঠামোই কাজ করবে ব্যাটারি হিসেবে। এতে করে গাড়ির ওজনও কমে আসবে আগের তুলনায়। একটা সময় গাড়ির ওজন কমানোর জন্য এবং গাড়ির বাহ্যিক কাঠামো আরও মজবুত করতে কার্বন ফাইবার ব্যবহারের কথা ভাবেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এই কার্বন ফাইবারকে দিয়ে এখন গাড়ির কাঠামো তৈরির পাশাপাশি ব্যাটারির কাজও করিয়ে নিতে চাইছেন লেইফ অ্যাসপি’র গবেষণা দল। মূলত এই বিষয়টিই লেইফ অ্যাসপির গবেষণার মুখ্য বিষয়। এটি সম্ভব হলে শুধু গাড়ি নয় উড়োজাহাজের কাঠামো তৈরির পাশাপাশি ব্যাটারির কাজে ব্যবহার করা যাবে কার্বন ফাইবারকে।
লেইফ অ্যাসপির মতে, গতানুগতিক গাড়িগুলোতে ব্যাটারি মূলত পরজীবির মতো কাজ করে। নিজের থাকার জন্য আলাদা একটা জায়গা নেয়। নিজের ওজন চাপিয়ে দেয় গাড়ির ওপর। কমিয়ে দেয় গাড়ির কর্মক্ষমতাও। এসব কারণেই তিনি এমন এক ধরনের গাড়ি তৈরির কথা ভেবেছেন যেখানে আলাদাভাবে কোনো ব্যাটারি রাখার প্রয়োজন হবে না, উল্টো গাড়ির বাহ্যিক কাঠামোই ব্যাটারির কাজ করবে।
তিনি এমন এক ধরনের প্রযুক্তির স্বপ্ন দেখেন যে উপাদান দিয়ে কোনো গাড়ি, বিমান কিংবা স্মার্টওয়াচ যা-ই তৈরি করা হোক না কেন তা যেন যন্ত্রের কাঠামো এবং শক্তির উত্স হিসেবে কাজ করতে পারে। তিনি এটির নামকরণ করেছেন ‘স্ট্রাকচারাল ব্যাটারি’। বর্তমানের সবচেয়ে আধুনিক যে ‘ইলেকট্রিক গাড়ি’ বাজারে রয়েছে তার ওজন বেশ হালকা। লেইফ অ্যাসপি যে ধরনের ব্যাটারিবিহীন গাড়ি তৈরির স্বপ্ন দেখছেন তার ওজন ইলেকট্রিক গাড়ির চেয়ে শতকরা ৫০ ভাগ কম হবে।
লেইফ অ্যাসপির গবেষণা দলটি অবশ্য স্বীকার করেছে যে, কার্বন ফাইবার থেকে ইলেট্রোকেমিক্যাল উপাদান থাকার বিষয়টি তাদের আগেই মার্কিন বিজ্ঞানীরা আবিষ্কারে করে ফেলেছেন। এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য পেতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের কাছে এই সংক্রান্ত পেটেন্টের জন্য আবেদন করেছেন। যদিও এখন পর্যন্ত এই বিষয়টি নিয়ে অনেক বেশি গবেষণা হয়নি। গবেষণা দলটি জানিয়েছে, সব কার্বনই একভাবে তৈরি হয় না। কার্বনের বিভিন্নতার কারণে এর বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারের কথা ভাবছেন তারা। তারা এখন খুঁজে বের করে দেখতে চান যে, কোন কার্বনের ভূমিকা কেমন এবং কোন কার্বনকে কোন কাজে লাগানো যেতে পারে। যেসব কার্বন শক্তির ভালো উত্স হিসেবে কাজ করবে সেগুলো দিয়েই তিনি তৈরি করতে চান গাড়ির কাঠামো।-স্মিথ সোনিয়ান ম্যাগ