ফেইসবুকসহ বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো নিজেদের করপোরেট কর ফাঁকির উপায় হিসেবে যেসব ফাঁকফোকর ব্যবহার করে তা বন্ধে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে সম্মত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নিয়ে গঠিত ১৯টি দেশের জোট জি টোয়েন্টির অর্থমন্ত্রীরা।
জাপানের ওসাকায় সমৃদ্ধ অর্থনীতিগুলোর আন্তর্জাতিক এই জোটের অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের বৈঠকের চূড়ান্ত যৌথ ঘোষণার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এখবর দিয়েছে। কর ফাঁকি দিতে ফেইসবুক, গুগল ও অ্যামাজনসহ বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য বা সেবা যে দেশেই বিক্রি করুক না কেন মুনাফার উৎস দেশ হিসেবে সব সময় নিম্ন-করের দেশগুলোকে দেখায় বলে সমালোচনা আছে। এ ধরনের চর্চাকে অনেকেই অনৈতিক হিসেবে দেখেন। নতুন বিধিমালা বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর উপর যেমন উচ্চ করের বোঝা চাপাবে তেমনি ‘নাম-মাত্র’ কর আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আয়ারল্যান্ডের মতো দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ টানাও কঠিন করে তুলবে। যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, “ডিজিটাইজেশন থেকে উদ্ভূত কর ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাম্প্রতিক অগ্রগতিকে আমরা স্বাগত জানাই এবং ‘টু পিলার অ্যাপ্রোচ’ নিয়ে তৈরি উচ্চাভিলাষী কর্মসূচিকে সমর্থন করি। “২০২০ সাল নাগাদ একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদনসহ ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমাধানে পৌঁছতে আমরা আমাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করব।” কর ব্যবস্থার পরিবর্তনের বিষয়ে জি টোয়েন্টির বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে টু পিলার বা দ্বি-স্তম্ভ নীতি, যা কিছু কোম্পানির জন্য উভয় সংকট হিসেবে দেখা দিতে পারে। প্রথম স্তম্ভ হলো- কোনো দেশে ব্যবসায়িক উপস্থিতি না থাকলেও সেখানে যদি কোম্পানির পণ্য বা সেবা বিক্রি হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশ ওই কোম্পানির উপর কর আরোপের অধিকার পাবে। এরপরও কোম্পানিগুলো নিম্ন করের দেশে মুনাফা সরিয়ে নিতে পারলেও দ্বিতীয় স্তম্ভের অধীনে কোম্পানিগুলোর উপর নূন্যতম কর আরোপ করা যাবে, যার হার পরে ঠিক হবে। মুনাফা সরিয়ে নিম্ন করের অঞ্চলে নেওয়া কঠিন করতে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর উপর করারোপের পাশাপাশি নূন্যতম করপোরেট কর হার প্রবর্তনের প্রস্তাবের পক্ষে সোচ্চার রয়েছে ব্রিটেন ও ফ্রান্স। দেশ দুটির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছে, বৈশ্বিক কর ব্যবস্থা সরকারের বড় উদ্যোগের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোকে অন্যায়ভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। বৃহৎ ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর ভাষ্য, তারা করনীতি অনুসরণ করেন। কিন্তু যেটা করেন সেটা হলো- আয়ারল্যান্ড ও লুক্সেমবুর্গের মতো নিম্ন করের দেশকে বিক্রয়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে ইউরোপে সামান্য কর পরিশোধ করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ফেইসবুক ও ইউটিউবের মতো ইন্টারনেট যোগাযোগ মাধ্যমে দেশীয় বিজ্ঞাপনদাতাদের পরিশোধিত অর্থের উপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করেছে।