বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের সোনালী দিনের প্রথম সারির নায়িকা শাবানা। সুনিপুণ অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি জয় করে নিয়েছেন কোটি দর্শকের মন। চার দশক ধরে অত্যন্ত প্রতাপের সঙ্গে অভিনয় করেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী। সমাজ ও পারিবারিক জীবনের বহু সমস্যা ও টানাপড়েনের চিত্র তিনি তার অভিনয়ের মাধ্যমে তুল ধরেছেন। দর্শকদের কাঁদিয়েছেন, শিখিয়েছেন। পেয়েছেন রেকর্ড সংখ্যক ১০ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
১৯৯৭ সালে শাবানা অজানা কারণে হঠাৎ বিদায় নেন চলচ্চিত্র থেকে। ২০০০ সাল থেকে তিনি সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে বসবাস করছেন। পারিবারিক কিছু কাজে শাবানা সম্প্রতি দেশে এসেছেন। তিন সপ্তাহ থেকে আবার ফিরে যাবেন যুক্তরাষ্ট্রে। এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে এসেছিলেন শাবানা।
তবে কি কারণে হঠাৎ অভিনয় ছেড়েছিলেন লাখো দর্শকের প্রিয় এই তারকা। দীর্ঘ ১৯ বছর পর সম্প্রতি সেই অজানা কথাই ফাঁস করলেন শাবানার স্বামী প্রযোজক ওয়াহিদ সাদিক। স্ত্রীর অভিনয় ছাড়া প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, শৈশব থেকে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল শাবানা। নিজেকে সে সময় দিতে পারেনি। তাই অভিনয় ছেড়ে এখন নিজের মত করে সময় কাটাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প এখনও শাবানাকে হারানোর ক্ষত সেরে উঠতে পারেননি। তার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। শাবানা অভিনয় ছাড়ার পর ঢাকার ফিল্মের এমন দুরবস্থা হবে কল্পনাও করিনি। একজন অভিনয় থেকে অবসর নিতেই পারে, তাই বলে আরেকজন সিনেমা করবে না, তাতো হয় না। এমনটা হচ্ছে বলেই ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রি সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না।
১৯৬২ সালে নতুন সুর, চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন শাবানা। ওই সময় পর্দায় নাম ছিল রত্না। এরপর তালাশ-সহ বেশ কয়েকটি সিনেমায় নৃত্যশিল্পী ও অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন তিনি। সহনায়িকা চরিত্রে দেখা যায় আবার বনবাসে রূপবান ও ডাক বাবুতে।
১৯৬৭ সালে এহতেশাম পরিচালিত চকোরী’তে চিত্রনায়ক নাদিমের বিপরীতে নায়িকা হয়ে অভিনয় করেন তিনি। আর তখন রত্না থেকে হয়ে যান শাবানা। বাংলা ও উর্দু ভাষায় নির্মিত ‘চকোরী’ ছবি ব্যবসা সফল হয়। এর পর থেকে শাবানাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
তিন দশকের ক্যারিয়ারে নাদিম, রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, জসীম, সোহেল রানার সঙ্গে জুটি বেঁধে শাবানা উপহার দেন জনপ্রিয় অনেক ছবি। তার উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হচ্ছে, ‘ভাত দে’, ‘অবুঝ মন’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘সত্য মিথ্যা’, ‘রাঙা ভাবী’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘ওরা এগারো জন’, ‘বিরোধ’, ‘আনাড়ি’, ‘সমাধান’, ‘জীবনসাথী’, ‘মাটির ঘর’, ‘লুটেরা’, ‘সখি তুমি কার’, ‘কেউ কারো নয়’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘স্বামী কেন আসামি’, ‘দুঃসাহস’, ‘পুত্রবধূ’, ‘আক্রোশ’ ও ‘চাঁপা ডাঙার বউ’।
অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে শাবানা দশবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে অভিনয়ের জন্য ৯ বার ও প্রযোজক হিসেবে ১ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৭ সালে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন শাবানা।
অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে- প্রযোজক সমিতি পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, আর্ট ফোরাম পুরস্কার, নাট্যসভা পুরস্কার, কামরুল হাসান পুরস্কার, নাট্য নিকেতন পুরস্কার, ললিতকলা একাডেমি পুরস্কার ও কথক একাডেমি পুরস্কার।
১৯৫২ সালের ১৫ জুন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শাবানা। ঢাকার গেন্ডারিয়া হাই স্কুলে ভর্তি হলেও মাত্র ৯ বছর বয়সে তার শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটে। ১৯৭৩ সালে সরকারি কর্মকর্তা ওয়াহিদ সাদিককে বিয়ে করেন তিনি। দু‘জনে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন প্রযোজনা সংস্থা এসএস প্রোডাকশন। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে নির্মিত হয়েছে অনেক জনপ্রিয় সিনেমা।