পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই: প্রধানমন্ত্রী
তারিথ
: ১৪-০৭-২০১৮
অনলাইন ডেস্ক :
পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে সুরক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণে কনক্রিট ঢালাই কাজ উদ্বোধন করে তিনি এই আশ্বাসবাণী দেন। বাংলাদেশ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে হাত দেওয়ার পর থেকে ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে এধরনের প্রকল্পে দুর্ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। ‘কোনো কাজ করতে গেলে অনেক কথা হয়’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে উদ্বেগের কিছু নেই। এখন পারমাণবিক বিদ্যুতে উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। যার ফলে এখানে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবে- সেটা আমরা মনে করি না। বিশেষ করে নিরাপত্তার দিকটা আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছি। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা, নিরাপত্তা নিশ্চিত ও রক্ষণাবেক্ষণ ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মনে করেন তিনি। এক্ষেত্রে রাশিয়া ও ভারত বাংলাদেশের জনবলকে প্রশিক্ষিত করছে বলে তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে একটি ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে। গত বছরের ৩০ নভেম্বর রূপপুরে পরমাণু চুল্লির জন্য কনক্রিটের মূল স্থাপনা নির্মাণ উদ্বোধন করেছিলেন শেখ হাসিনা, গতকাল শনিবার দ্বিতীয় চুল্লীর নির্মাণ কাজ শুরু হল। ৬৮ মাসের মধ্যে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল স্থাপনা নির্মাণের কথা রয়েছে এ কাজের দায়িত্ব পাওয়া রাশিয়ার কোম্পানি অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের। সরকার আশা করছে, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে রূপপুরের ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ যোগ হবে জাতীয় গ্রিডে। পরের বছর চালু হবে সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট। রূপপুরের প্রকল্প এলাকায় এক হাজার ৬২ একর জমির ওপর চলছে বিপুল কর্মযজ্ঞ। প্রথম পর্যায়ের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে রুশ সহায়তায়। দুই ইউনিট মিলিয়ে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ব্যবহৃত তেজষ্ক্রিয় জ¦ালানি সরিয়ে নিতেও রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। রূপপুরের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপপুর তৈরি হচ্ছে ৩ প্লাস প্রযুক্তি দিয়ে। আর বর্জ্য কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা হবে, সে দায়িত্ব নিয়েছে রাশিয়া। এদিক থেকে আমি মনে করি, কারও আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই। শেখ হাসিনা তার সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে বলেন, ৫৭তম দেশ হিসেবে আমরা মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছি আর ৩৩তম দেশ হিসেবে পরমাণু শক্তির ক্লাবে যোগ দিয়েছি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরমাণু কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ইউরি বরিসভ, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিচালক দোহি হ্যান, রোসাটমের উপমহাপরিচালক আলেকজান্দার রাস্কিনও ও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে কনক্রিট ঢালাইয়ের কাজ উদ্বোধনের পর সেখানে রুশ উপপ্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। রূপপুরের অনুষ্ঠান শেষ করে সড়কপথে পাবনা যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে সার্কিট হাউজে কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে পুলিশ লাইনের জনসভায় যোগ দেন তিনি।