একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোননয়ন বিতরনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দাবি করেছে বিএনপি। ইসি সচিব আচরণবিধি পালন সংক্রান্ত চিঠি পুলিশকে দেওয়ার পরই এই ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে দলটি। বিএনপি একই সঙ্গে ডিএমপির নয়াপল্টন বিভাগের উপকমিশনার ও ইসির যুগ্ম সচিবেরও (নির্বাচন পরিচালনা শাখা-২) শাস্তি চেয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নেতৃত্বে গতকাল মঙ্গলবার একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এ-সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছে। বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিঠিতে সই করেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার কাছে লেখা চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন তড়িঘড়ি করে ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর এর পরের দিন থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাস্তা বন্ধ করে যানজট সৃষ্টি করে মনোনয়নপত্র বিতরণ করেছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মোটরসাইকেল, গাড়ি, পিকপাকসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ধানমন্ডি যায় এবং রাস্তাঘাট বন্ধ করে মনোনয়ন সংগ্রহ করে। এ ছাড়া নিজেদের প্রার্থীদের মধ্যে দুইজন নিহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ তৎপরতা না নিয়ে বিএনপি মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় বিএনপির কার্যালয়ের সামনে স্বতঃস্ফুর্ত জনগণের ঢল দেখে নির্বাচন কমিশন সচিব ও ডিএমপি কমিশনারের গায়ে জ¦ালা ধরে। কমিশন নড়ে নড়ে বসে। চিঠিতে বিএনপি মহাসচিব লিখেন, কথিত আচরণ বিধির খড়গ নেমে আসে বিএনপির ওপর। ইসি সচিব গণমাধ্যমে আচরণবিধি প্রতিপালনের কঠোর হুমকি দিয়ে তা লঙ্ঘন বলে চিহ্নিত করে। এটি একটি পক্ষপাতমূলক আচরণ। চিঠিতে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ১৩ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি প্রতিপালনের নির্দেশনায় নেতা-কর্মী সমর্থকসহ জনগণের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের দেওয়া বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক এবং ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বক্তব্যে ঘটনা ঘটানোর স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এই সন্ত্রাসী হামলায় বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছে ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলায় ৪৭২ জন নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করেছে। ৭০ জনকে গ্রেফতার করেছে; রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে ৩৮ নেতাকর্মীকে। নির্বাচন কমিশনের চিঠির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির চরম বিঘœ সৃষ্টি, নিরাপরাধ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার সরাসরি ইন্ধন যুগিয়েছে। এমতাবস্থায় নির্বাচন কমিশনের সচিব, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপকমিশনার এবং উদ্দেশ্যমূলক জারি করা পত্রের স্বাক্ষরকারী নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২) এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনের আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য হবো। ইসিতে চিঠি জমা দেওয়ার পর মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। কমিশন মাঝে মাঝে চেষ্টা করছে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে তারা সেটি করতে পারছে না। এদিকে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের ঘটনায় পুলিশের কাছ থেকে তথ্য, উপাত্ত সংগ্রহ করে সহিংসতার বিষয়টিকে ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গত সোমবার ইসি সচিব গণমাধ্যমকে জানান, সুষ্ঠু তদন্ত করে ওই ফৌজদারি অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে। তবে যারা জড়িত নয়, তাদের হয়রানি না করার কথাও বলা হচ্ছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৮ নভেম্বর, আর তা বাছাই করা হবে ২ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৯ ডিসেম্বর। আর প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ১০ ডিসেম্বর।