দেশের বিদ্যমান লঞ্চ টামির্নালগুলোর অবকাঠামো বদলে ফেরার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রাথমিকভাবে দেশের ১১ জেলার ৫০টি টার্মিনালের (পন্টুন) বিদ্যমান অবকাঠামো বদলে ফেলা হবে। পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে সারাদেশের টার্মিনালগুলোয় পরিবর্তন এনে নৌপথে সংযোজন হতে যাচ্ছে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত টার্মিনাল। ওই লক্ষ্যে আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ বিশেষ ধরনের পন্টুন নির্মাণ ও স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প নেয়া হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ১৬২ কোটি ৭১ লাখ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে প্রকল্পটিতে অনুমোদন দিয়েছে। আর বরাদ্দের পুরো অর্থই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদকালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে অভ্যন্তরীণ নৌপথ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সেগুলোর অবকাঠামো সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেই লক্ষ্যে দেশের নদীবন্দরগুলোতে বিদ্যমান ছোট ও অবকাঠামোগতভাবে দুর্বল টার্মিনাল (পন্টুন) সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেখানে নতুনভাবে স্থাপিত হবে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত পন্টুন বা টার্মিনাল। বর্তমানে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং যাত্রীদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল নৌযান তৈরি ও পরিচালনা করা হচ্ছে। যা আগে পরিচালিত নৌযানের তুলনায় আকার, আয়তন, ইঞ্জিন ক্ষমতা সবদিক থেকেই আকারে বড়। ফলে বিদ্যমান পন্টুনগুলো চলমান ওসব নৌযানের তুলনায় ছোট এবং কাঠামোগতভাবে দুর্বল। ওসব টার্মিনাল বা পন্টুনে বড় আকারের লঞ্চ ঘাটে ভেড়ার সময় বা লঞ্চ ছাড়ার সময় বিভিন্ন প্রকার সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া নৌযানগুলোর টার্মিনালে অবস্থানসহ ক্রমবর্ধমান যাত্রী সংখ্যার কারণে পন্টুনগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সূত্র জানায়, নৌযান ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী, সুবিধাভোগী যাত্রী ও লঞ্চ মালিকদের চাহিদা ও অনুরোধের পাশাপাশি যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের সম্ভাব্যতার বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) প্রধান নদীবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ অবতরণ স্টেশনগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচিত করে আরো সুবিধাসহ আপাতত ৫০টি পন্টুন নির্মাণ ও স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আপাতত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, খুলনা ও চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৫০টি টার্মিনালে এ পরিবর্তন আনা হবে। আর সদরঘাট, পটুয়াখালী, বরিশাল, চাঁদপুর, খুলনা এবং ভোলা নদী বন্দরসহ দেশের মোট ১৫টি নদী বন্দরে স্থাপনের জন্য মোট ৫০টি বিশেষ ধরনের টার্মিনাল পন্টুন নির্মাণ ও স্থাপন করা হলে প্রতিবছর অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাতায়াতকারী প্রায় ৪ (চার) কোটি যাত্রীর নিরাপদ ও সহজ উঠা-নামা নিশ্চিত এবং লঞ্চের নিরাপদভাবে টার্মিনালে লঞ্চ ভেড়ানো বা ছাড়া নিশ্চিত হবে। প্রকল্পের আওতায় আপাতত ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য, ৩২ ফুট প্রস্থ এবং ২৭ দশমিক ৫ ফুট গভীরতা সম্বলিত ৪৫টি পন্টুন সংগ্রহ করা হবে। তাছাড়াও দৈর্ঘ্যে ১২০ ফুট, প্রস্থে ৩৫ ফুট ৫টি পন্টুন সংগ্রহ করা হবে। একই সাথে প্রকল্পের আওতায় ১১০টি স্টিল স্পাড নির্মাণ করা হবে। তার সঙ্গে নির্মাণ করা হবে ৩৬৬ বর্গমিটার স্টিল জেটি। এ প্রসঙ্গে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান জানান, যুগ বদলেছে। বদলেছে মানুষের চাহিদা ও রুচি। নিরাপত্তার বিষয়েও মানুষ সতর্ক হচ্ছে। ফলে বদলে যাচ্ছে বাহনও। আগের তুলনায় নৌযানের আবকাঠামো ও আকার বেড়েছে। লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। নৌবন্দরগুলোতে আধুনিক টার্মিনাল স্থাপনে নৌপরিবহনে যাতায়াত সহজ ও নিরাপদ হবে।