সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবে সৎ থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। একই সঙ্গে তিনি প্রজাতন্ত্রের এই কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে সবাইকে সমান চোখে দেখার নির্দেশনা দিয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে নির্বাচনি আচরণ বিধিমালা সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সিইসি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে কাজ করবে। কারও নিয়ন্ত্রণে বিজিবি, কারও নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, কারও নিয়ন্ত্রণে র্যাব থাকবে। তাদেরকে আইনের আলোকে পরিচালনা করবেন। ভোটের সময় প্রিজাইডিং অফিসারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে কঠোর হতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দেন সিইসি। তাদের ওপর প্রচুর চাপ থাকে, ওই এলাকার সম্পূর্ণ দায়িত্ব থাকে প্রিজাইডিং অফিসারের। তাকে সাহায্য করা আপনাদের দায়িত্ব। তাদের পরিচালনা করতে যাবেন না। তারা যখনই সহযোগিতা চাইবেন, তাদের করবেন। সহেযোগিতা না চাইলে বা সহযোগিতা করার পরিবেশ না থাকলে বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করে সহযোগিতা করবেন। ভোটের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আপনাদের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জ্ঞানে কমতি ও অভিজ্ঞতার অভাব থাকলে সেটা পারবেন না। সেজন্য বিভিন্ন আইন, দÐবিধির বিভিন্ন ধারা, পুলিশ আইন, কার্যপ্রণালী বিধির ধারা তুলে ধরে তা আত্মস্থ করার তাগিদ দেন সিইসি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সবার সমান আচরণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্বকে বিচারকের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, বিচারকরাই এখন ভাগ্য বিধাতার প্রতিভ‚। সততা নিষ্ঠা, আন্তরিকতা দিয়ে আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন। আইনকে নিজস্ব পথে চলতে না দিলে নির্বাচন কখনও আইনানুগ হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। আইনের ব্যবহার সকলের ক্ষেত্রে সমান হওয়া উচিত। নিরপেক্ষভাবে আইনের প্রয়োগ না করলে সেই আইন আইন নয়, কালো আইন। সবার প্রতি সমান আইনের প্রয়োগ না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। আমরা তা কখনও চাই না। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদেরও তৎপর থাকার আহŸান জানিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, যারা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে আপনাদের ভ‚মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের বলেন, আপনারা মনে করেন আপনারা সবকিছু করতে পারেন, কিন্তু তা ঠিক না। আইনের কোনো অধ্যাদেশ প্রয়োগের সময় জুডিশিয়াল মাইন্ড প্রয়োগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, একটি আইনানুগ নির্বাচনের জন্য আপনাদের ভ‚মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেশাগত দক্ষতার মাধ্যমে আপনাদের প্রমাণ করতে হবে যে, আপনারা নিরপেক্ষ ও যোগ্য। একদমই নিরপেক্ষ থাকতে হবে আপনাদের। আচরণবিধি মানতে হবে, আইনানুগ হতে হবে। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রতিহিংসা না রাখার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তাগিদ দেন এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী মতামত প্রকাশ করতে হবে। নির্ভীকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, আইনের প্রয়াগ যেন প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকে, আপনাদের দ্বারা যেন আইন অসম্মানিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আইনের প্রয়োগ পক্ষপাতহীনভাবে হতে হবে। বিজিবি ও সেনাবাহিনী যেহেতু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনায় কাজ করবে, সেহেতু নির্দেশনা যেন সঠিক হয় সেদিকে নজর রাখার পরামর্ দেন সাবেক এই বিচারক। বৈষম্যমূলক আচরণের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ছাড় দেবে না বলেও হুঁশিয়ার করেন তিনি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে তিন দিনব্যাপী ব্রিফিংয়ের দ্বিতীয় দিন গতকাল রোববার বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা উপস্থিত ছিলেন।