দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গতি আনতে সমবায় বড় ধরনের ভ‚মিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাছাড়া এই খাতে নারীদের কর্মসংস্থানেরও বিরাট সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন সরকারপ্রধান। গতকাল রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৪৭তম জাতীয় সমবায় দিবসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়নে সমবায় বিরাট ভ‚মিকা রাখতে পারে। সমবায়ের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে।এখানে নারীদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি।নারীদের কর্মসংস্থানেরও বিরাট সুযোগ রয়েছে। কাজেই যেকোনো কাজ যখন আমরা করতে চাই, মনে রাখতে হবে সর্বস্তরের মানুষ যেন সেখানে সম্পৃক্ত হতে পারে। তাদের জীবনমান যেন উন্নত হতে পারে। সেই লক্ষ্য নিয়েই কিন্তু আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নদী-নালা, খাল-বিল রয়েছে, তারপর বিশাল সমুদ্রসীমা আমরা অর্জন করেছি। আমাদের জমি এখনো উর্বর। আমরা এগুলো ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশের মানুষকে তো খাবার দিতে পারবই, বিশ্বের অনেক দেশকে আমরা খাবার দিতে পারব। সেই সক্ষমতা আমরা অর্জন করতে পারি। সেজন্যই আমি সমবায়কে সবচেয়ে গুরুত্ব দেই। সমবায় সঠিকভাবে করতে পারলে উন্নয়নটা দ্রæত হবে, এই বিশ্বাস আমরা আছে। তিনি জানান, দেশে বর্তমানে এক লাখ ৭৪ হাজার সমবায় সমিতি রয়েছে, যাদের সদস্য সংখ্যা প্রায় এক কোটি ৯ লাখ। এসব সমিতির মোট মূলধনের পরিমাণ ১৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, আর সমবায়ের মাধ্যমে সৃষ্ট কর্মসংস্থানের সংখ্যা প্রায় নয় লাখ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমবায়ের দর্শনটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহন করেছিলেন। তিনি স্বাধীনতার পর আমাদের যে সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন, সেই সংবিধানের ১৩ অনুচ্ছেদে আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালার যে কথা তিনি বলেছেন, সেখানে ব্যক্তি মালিকানা খাতের পাশাপাশি সমবায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। সমবায়কে তিনি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি মনে করতেন বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সমবায় বিরাট ভ‚মিকা রাখতে পারে। তিনি আরও বলেন, আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় স্থান অধিকার করে আছে, তরিতরকারি উৎপাদনে চতুর্থ স্থান অধিকার করে আছি, ফলমূল উৎপাদনেও চতুর্থ স্থান, আলু উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম স্থান অধিকার করে আছি। এভাবে বিভিন্ন জিনিসে আমরা কিন্তু আস্তে আস্তে একটা জায়গায় পৌঁছাচ্ছি। এগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে, বাজারজাত করা সুবিধা হবে, আবার বিদেশেও পাঠানো যাবে। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পদক্ষেপ নিতে পারি। তাহলে আমাদের দেশের মানুষ দরিদ্র থাকবে না। সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মিল্ক ভিটাকে স¤প্রসারণ করে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে, দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, মসলা উৎপাদন, গাভী ক্রয় ও পালণে চার শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর সার্বিক উন্নয়নেও সমবায়ভিত্তিক কার্যক্রম করে যাচ্ছে সরকার। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।