আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কতটি কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে সে সিদ্ধান্ত আজ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা। গতকাল শুক্রবার আগারগাঁওয়ে ইটিআই ভবনে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জাবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা ইভিএম পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করব। একেবারে সীমিত আকারে ব্যবহার করতে হবে। অথবা কয়েকটি আসনের কিছু সংখ্যক কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হবে। এই দুটো জিনিস শনিবারের সভায় ঠিক হবে। গত অক্টোবরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি নূরুল হুদা শহরাঞ্চলে অল্প কিছু এলাকায় ভোটগ্রহণে ইভিএম ব্যবহারের কথা বলেছিলেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইভিএমের পক্ষে অবস্থান জানালেও বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এর ঘোর বিরোধিতা করে আসছে। আপত্তি না শুনে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করলে মামলা করারও হুমকি দিয়ে রেখেছে তারা। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিইসি বলেন, যারা মামলা করবে, এটা তাদের ব্যাপার, আমার কিছু বলার নেই। আমরা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সীমিত আকারে ব্যবহার করব। এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আয়োজিত প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধনে নূরুল হুদা বলেন, ইভিএম একটি নতুন উদ্যোগ। ব্যালটে ভোট দেওয়ার যে ঝামেলা, সেটি দূর করতে হবে। ইভিএমের মাধ্যমে সেটা করা যেতে পারে। ইতোপূর্বে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এটি ব্যবহার করা হয়েছে। সংসদ নিবাচনে ইভিএম ব্যবহারে কোনো আইনগত বাধা নেই। সেটা আমরা ব্যবহার করব। তিনি বলেন, যেখানে ইভিএম ব্যবহার করা হবে, সেখানে কয়েকদিন আগে থেকে মানুষকে এ যন্ত্র সম্পর্কে বোঝাতে হবে, যাতে কোনো সমস্যা না থাকে। বিভিন্ন দল ইভিএমের বিরোধিতা করে, তারা এসে এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখুক। তাদের লোক দিয়ে ইভিএমের টেকনিক্যাল বিষয় পরীক্ষা করুক। তাহলে তাদের সংশয় কেটে যাবে। প্রশিক্ষকদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ভোটের তারিখ ৩০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি ‘ব্যাপক’। দিনটি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, ওইদিন জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। রাজনৈতিক দলসহ সকলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। নিরপেক্ষতা, কারিগরি দক্ষতা এবং নির্বাচন পরিচালনায় আইন ও বিধি-বিধান জানা দরকার। আপনারা নির্বাচন কীভাবে পরিচালনা করবেন সেটা জানলেও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের জানার কথা নয়। বার বার বিভিন্ন পর্যায়ে এই ট্রেনিং দেওয়া হয়ছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আপনারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আপনারা তাদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেবেন। পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, তারা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। তারা থাকেন মাঠে, তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। অনেক সময় তীর্যক কথা বলতে পারেন, কিন্তু সেটা নেওয়া যাবে না। তারা প্রশ্ন করবে, জানতে চাইবে। সেটি তাদের বুঝাবেন। নূরুল হুদা বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যারা আছেন, তাদের সমস্যাগুলো বুঝতে হবে। তাদের সমস্যাগুলো দেখতে হবে। আগে এটি ছিল না, এখন সেটা করতে হবে। তাদের প্রশ্ন শুনে ধৈর্য্য ধরে উত্তর দিতে হবে। এদিকে, বুড়িগঙ্গা নদী থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু বকর আবুর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ইটিআই ভবনে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। যশোর জেলা বিএনপির সহসভাপতি কেশবপুরের মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বকর আবু (৫৮) ঢাকায় এসে দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। সাক্ষাতকারের আগের দিন পল্টনের এক হোটেল থেকে তিনি নিখোঁজ হন এবং বুধবার কেরানিগঞ্জে বুড়িগঙ্গা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। স্বজনরা বলছেন, আবুকে অপহরণ করে তাদের কাছ থেকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা আদায় করা হলেও এই বিএনপি নেতাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। বিএনপি এ হত্যাকা-ের জন্য সরকারকে দায়ী করে বলেছে, ‘ক্ষমতাসীনদের মদদে পরিকল্পিতভাবে’ হত্যা করা হয়েছে ধানের শীষ নিয়ে ভোট করতে আগ্রহী যশোরের এই নেতাকে। গতকাল শুক্রবার সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিইসি নূরুল হুদা প্রথমে বলেন, পুলিশ ফৌজদারি মামলা করবে। আমরা তো কিছু করতে পারব না। কী ঘটনা ঘটেছে সেটা তো জানি না। ক্রিমিনাল কেস হবে, ইনভেস্টিগেশন করবে পুলিশ। দেখবে, কীভাবে তাকে মারা হয়েছে। এ ব্যাপারে তো আমার বলার কিছু নাই। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী পাঁচ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে বুধবার দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, সেখানেও আবুর নাম ছিল। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সিইসি বলেন, আইনগতভাবে পুলিশ দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে নেবে। এটা নির্দেশ থাকবে পুলিশের ওপরে।