একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ
তারিথ
: ০৪-১২-২০১৮
অনলাইন ডেস্ক :
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। তালিকা করে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ওসব কেন্দ্রের নিরাপত্তা ছকও তৈরি করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে ওই কেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ না বলে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন মাঠ পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ভোটকেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের সোয়া লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তাছাড়াও রিজার্ভ ফোর্স, কেন্দ্রভত্তিক মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্বে থাকবে। পুলিশ সদর দফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার একটি সমতল এলাকা ও অপরটি বিশেষ এলাকা হিসেবে ধরা হয়েছে। দুটি এলাকাতেই গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ হিসেবে কেন্দ্রগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচনে সারাদেশে মোট ভোটকেন্দ্রের ৬৪ দশমিক ১৩ ভাগ ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। বাকি ৩৫ দশমিক ৮৭ ভাগ সাধারণ কেন্দ্র। পুলিশের তালিকায় একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটাররা সারাদেশে ৪০ হাজার ২৭৩টি ভোটকেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। তার মধ্যে ২৫ হাজার ৮২৭টি কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকি ১৪ হাজার ৪৪৬টি কেন্দ্রকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ওসব কেন্দ্রের মধ্যে দুর্গম এলাকায় এক হাজার ৬৩২টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, যেসব ভোটকেন্দ্রের সামনে প্রার্থী বা তার নিকটাত্মীয়ের বাড়ি রয়েছে এমন কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী গোলযোগ বা বিশৃঙ্খলা হতে পারে এমন কেন্দ্র, কোন প্রার্থীর পক্ষে কোন গোষ্ঠী অবৈধ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে তেমন সব কেন্দ্রকেই পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করেছে। তাছাড়া ভৌগোলিক অবস্থান ও ভোটকেন্দ্রের স্থাপনাকেও ওই বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিশেষ এলাকার কেন্দ্র হিসেবে দুর্গম এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে পাহাড়ি এলাকা, চরাঞ্চল ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যাতায়াতে বিঘœ ঘটে তেমন এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলো রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, পুলিশের করা তালিকায় ঢাকা মহানগর এলাকায় ২ হাজার ১১২টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে অর্ধেকের বেশি ১ হাজার ২৬৭টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় ৫৯১টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৪৩টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৪৮টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। খুলনা মহানগর এলাকায় ৩০৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯৯টি সাধারণ কেন্দ্র পাওয়া গেলেও ২১০টিই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগর এলাকার ১৯৬টির মধ্যে ১৬৮টিই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ও ২৮টি সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বরিশাল মহানগর এলাকার ১৯৭টির মধ্যে ৭১টি সাধারণ ও ১২৬টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সিলেট মহানগর এলাকার ২৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ২০২টি, অপর ৯১টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গাজীপুর মহানগর এলাকার ৪২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৩৮টিই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে পুলিশ। মাত্র ৮৮ কেন্দ্র সাধারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। রংপুর মহানগর এলাকার ১৯৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৮টি গুরুত্বপূর্ণ এবং ৮০টি সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাছাড়া ঢাকা রেঞ্জের জেলাগুলোর মধ্যে মোট কেন্দ্র রয়েছে ৭ হাজার ৩৩৪টি। তার মধ্যে ৪ হাজার ৭৪টিই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই রেঞ্জে ৩ হাজার ২৬০টি কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ৫ হাজার ৭৯৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩ হাজার ৮৮১টি গুরুত্বপূর্ণ এবং এক হাজার ৯১৭টি সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজশাহী রেঞ্জের ৪ হাজার ৮৯৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ২ হাজার ৮০৭টি গুরুত্বপূর্ণ ও ২ হাজার ৮৮টি সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাছাড়া ময়মনসিংহ রেঞ্জের ২ হাজার ৭১১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৭৫৩টি গুরুত্বপূর্ণ এবং ৯৫৮টি সাধারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। রংপুর রেঞ্জের ৪ হাজার ১৪৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ২ হাজার ৯০৭টি গুরুত্বপূর্ণ ও ১ হাজার ২৪১টি সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। খুলনা রেঞ্জের ৪ হাজার ৫২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ২ হাজার ৮৪৯টিই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর ওই রেঞ্জে এক হাজার ৬৭৬টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বরিশাল রেঞ্জের ২ হাজার ৩৩১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৬৯৭টিই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর ওই রেঞ্জে মাত্র ৬৩৪টি কেন্দ্র সাধারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। সিলেট রেঞ্জের ২ হাজার ১৮৩টি কেন্দ্রের এক হাজার ২৯৩টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৮৯০টি সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংখ্যা বেশি থাকবে। সেজন্য পুলিশের স্থানীয় ইউনিটগুলোর চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ, র্যাবসহ অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্র প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা জানান, পুলিশের দৃষ্টিতে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কেন্দ্র নেই। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সাধারণ কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তায়ও পুলিশ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।