বর্ষাকালে সাধারণত ভেলায় চড়ে শাপলা ফুল তোলার দৃশ্য দেখে আমরা সবাই অভ্যস্ত। কিন্তু এ বছর অগ্রীম অতি বর্ষণের কারণে ভেলায় চড়ে আম তোলার মতো দূর্লভ দৃশ্য জেলার অনেক আম বাগানেই দেখা যাচ্ছে। তবে বাগানগুলো নিচু ধানি জমিতে হওয়াই এর কারণ বলছেন আম চাষীরা। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা য়ায় এই উপজেলায় ৪হাজার ২শত হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের প্রায় ৩শ আম বাগান রয়েছে।
রবিবার ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নের লোহাগাড়া, বনবাড়ি, অতরগাঁও গ্রামের বাগানগুলোতে আম চাষীদের ভেলায় চড়ে আম তুলতে ব্যস্ত দেখা যায়।
বাগানীরা জানায় আমের গাছ পানিতে ডু্বে যাওয়াতে আমের রং ও স্বাদ নষ্ট হচ্ছে। অতিদ্রুত আম সব আম গাছ থেকে না নামালে সব আম নষ্ট হয়ে পড়বে। সাধারণত আম্রপালি জাতের আমে কিছু কিডস আম গাছে রেখে থাকে বাগানীরা যা পড়ে বিক্রি করে বেশ মুনাফা পায় বাগানীরা। কিন্তু এবার গাছ পানিতে ডোবার জন্য সেই মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা।
নয় হাজার গাছের একটি বাগানের কেয়ারটেকার সাইদ জানায় তাদের সব গাছই পানিতে ডোবা। এতে অনেক আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন তারা। গাছ পানিতে ডুবে যাওয়ায় আম ফেঁটে যাচ্ছে, আমে গ্যাস হচ্ছে এতে আমের স্বাদ নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া লকডাউনের কারণে বাইরের পাইকাররা আম নিতে আসছেনা। আমের দাম যা ছিল গত কয়েক দিনে তাও কমে গেছে বলে জানান তিনি।
আম ব্যবসায়ি রাজ্জাক জানান,৩ হাজার টাকা মন দরে বেচঁবো বলে আম কিনেছি কিন্তু এখন আমের দাম পনের শ ষোল শ টাকা, বেশ ক্ষতি হচ্ছে। আবহাওয়ার কারণে বাইরের পার্টি আসছেনা। আমের মানও খারাপ হতে শুরু করেছে।
আম বাগান মালিক এন কে রানা জানান, অতি বৃষ্টির কারণে আমের রং নষ্ট সহ বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দিয়েছে সেই সাথে করোনার কারণে আম বাইরে না যাওয়াতে বেশ ক্ষতিতে পড়েছেন তাঁরা। ক্ষতি কাটাতে সরকারের কাছে প্রনোদনার দাবি জানাচ্ছেন বাগান মালিকেরা।
পীরগঞ্জ আম বাগান মালিক সমিতির সভাপতি আবু জাহেদ ইবনুল ইকরাম জুয়েল বলেন, আমের পরাগায়নের সময় বৃষ্টিতে কিছু মুকুল নষ্ট হয়ে পরে, এখন অবশিষ্ট মুকুলের আম অতি বর্ষণে নষ্ট হতে বসেছে, সব মিলিয়ে বাগানীরা আমরা বেশ ক্ষতির মুখেই আছি। আমে বালাই নাশক স্প্রে করা হয়, কিন্তু মানসম্মত বালাই নাশক পরিমাপক যন্ত্র কৃষি বিভাগে নেই। এই যন্ত্রের ব্যবস্থা থাকলে আমরা মান সম্মত বলাই নাশক ব্যবহার করে উপকৃত হবো বলেও তিনি জানান।
পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার এস এম গোলাম সারোয়ার দৈনিক প্রভাতি খবরকে বলেন, কোন রোগ বালাই নয় অতি বৃষ্টির কারণে আমের ক্ষতি হচ্ছে। আম বাজারজাতের বিষয়টি বাগানীদেরকেই দেখতে হবে। তবে ইতিমধ্যে পীরগঞ্জ হতে ১হাজার কেজি আম্রপালি আম ব্যক্তি উদ্যোগে বিদেশ পাঠাবার ব্যবস্থা করেছেন কৃষি বিভাগ এবং পরবর্তিতে অর্ডার পেলে আরো আম পাঠানোর সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন কৃষি অফিসার।