অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি,দুুুুর্যোগ ব্যবস্থাপনা,খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশ রক্ষার উন্নয়নে নীলফামারী জেলার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট- বড় ১০টি নদী ও একটি খাল খনন হওয়ায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
ইতোমধ্যে কয়েকটি নদী খনন করার ফলে বদলে গেছে জেলার নদীবাহিত এলাকা গুলোর দৃশ্যপট। অপরূপ সাজে সেজেছে নদীবাহিত গ্রাম গুলো প্রতি বছরের বর্ষা মৌসুমের চির চেনা জলাবদ্ধতা এ বছর আর নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গৃহিত ৩ বছর মেয়াদী এসব নদী ও খাল খনন কাজ শেষ হলে এ অঞ্চলে বাড়বে সেচ সুবিধা-ফলে বাড়বে শষ্য উৎপাদন। বর্ষা মৌসুমে ত্বরান্বিত হবে পানি নিস্কাশন, প্রজনন বাড়বে দেশীয় প্রজাতির মাছের, সংরক্ষণ হবে জীব বৈচিত্র, এবং নদীতে পানি ধারন ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় বন্যার করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পাবে নদী বাহিত এলাকা এবং দেশীয় প্রজাতির ফলজ, বনজ,ঔষদি গাছ লাগানো হবে।
নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুত্র মতে , দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় বালু ও পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে জেলার বুড়ি তিস্তা, দেওনাই-চাড়ালকাটা-যমুনেশ^রী, ধুম, ধাইজান, আউলিয়া খানা, বামনডাঙ্গা, বুড়িখোড়া, নাউতারা, কলমদার, চারা, সুইসহ ১৯টি নদী। ভরাট হয়ে গেছে ৯টি খাল। স্থান ভেদে সমতল ভূমি থেকে এসব নদীর বেডের গভীরতা ছিল তিন থেকে চার ফুট। এতে পানি ধারন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষনে এসব নদীর দূকুল ছাপিয়ে প্লাবিত হতো বিস্তিন্ন এলাকা। এতে পানিতে তলিয়ে থেকে পচে নষ্ট হতো নদী তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন ফসল। জমি থেকে এক ফসলের বেশি চাষাবাদ করতে পারে না কৃষক। নদীঞ্চালের ক্ষেতসহ মানুষের বাড়িতে পানি উঠায় বাড়তো তাদের দুর্ভোগ। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ নামে একটি মহাপরিকল্পনার অধীন ১ম পদক্ষেপ হিসেবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পূনঃখনন প্রকল্প (১ম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বিগত ২০১৮-১৯অর্থ বছরে দেওনাই-চাড়ালকাটা-যমুনেশ্বরী, ধুম, ধাইজান, বামনডাঙ্গা, বুড়িখোড়া, নাউতারা, কলমদার, চারা, সুইসহ ১০টি নদী ও পচানালা খালের মোট ২৭০ কিঃমিঃ খনন কাজ শুরু করা হয়। ইতোমধ্যে গড়ে শতকরা ৬০ ভাগ কাজ শেষ হলেও আর্থিক অগ্রগতি শতকরা ২৫ ভাগ। আগামী ২০২০-২১ অর্থ বছরের জুন মাসের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ শেষ হবে। ১৯টি নদী ও ৯টি খালের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১০টি নদী ও পচানালা খাল খনন কাজ শুরু করা হলেও ৯টি নদী ও ৮টি খাল খননের কোন পদক্ষেপ এখনো নেয়া হয়নি। এতে এবারের বর্ষা মৌসুমে এসব নদীর দুকুল ছাপিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নদী তীরবর্তী বসতভিটা ও ফসলী জমি। এসব নদী ও খাল দ্রুত খননের দাবী করছে ভুক্তভুগি এলাকার জনগন। সরেজমিনে জলঢাকা উপজেলার ধাাইজান নদীর
তীরবর্তী সুবিধা ভোগি কৃষক আফছার আলী,হাছিনুর রহমান,সামসুল হক বলেন,নদী খনন করার ফলে আগের মত বন্যা বা বৃষ্টির পানি জমে ক্ষেতের যে ক্ষতি হতো তা এ বছর হয়নি। আগে আমরা এই জমি গুলো থেকে এক ফসলের বেশি পেতাম না,নদী খননের ফলে এখন আমরা এই জমি থেকে দুই থেকে তিন ফসলী ফসল আবাদ করতে পারছি।
জানতে চাইলে,নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ১ম পর্যায়ে বাদ পড়া নদী-খাল সমূহ খননের জন্য ২য় পর্যায়ে প্রস্থাবনা দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া, চলমান খননের ফলে নদীর গড় গভীরতা ১৫ফুটের বেশী হওয়ায় বেড়েছে পানি প্রবাহ। এ অঞ্চলের ভূমি সমতলের ঢাল বেশী হওয়ায় পানির গতি বেড়ে গিয়ে ভাঙ্গছে নদী। ইতোমধ্যে, চাড়ালকাটা নদী ডোমার, জলঢাকা, বাশদহ, লক্ষীমারাই, বাজিতপাড়া, খুটামারা, যাদুরহাটসহ ১৫টি পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এ ভাঙ্গনে নদী তীরবর্তী এলাকার ১৫টি পরিবারের বসতভিটা, ঘরবাড়ি আর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় তারা আশ্রয় নিয়েছে অন্যের জমিতে।নীলফামারী সদরে বেড়া ডাঙ্গা যাদুরহাট দাখিল মাদ্রাসার চারতলা ভবন পড়েছে ভাঙ্গনের মুখে। ভাঙ্গনরোধে এসব এলাকায় বালুর বস্থা ও বাঁশের পাইলিংসহ রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।