ঝিনাইদাহ যশোর জেলার একটি মহাকুমা। ঝিনাইদাহ জেলাটি ১৮৬২ সালে মহাকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে এটি একটি পৃথক জেলা হয়। ঝিনাইদহ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন প্রমান পাওয়া যায় না। অনুমান করা হয় যে ঝিনুক হতে ঝিনাইদহ নামের উৎপত্তি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাংলোর সামনে অবস্থিত বড় দোহাটিতে তখন পাওয়া যেত প্রচুর ঝিনুক। কিংবদন্তী অনুসারে বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে ঝিনুক কুড়াতে দলে দলে লোক আসতো। আবার ঝিনুক থেকে চুন ও বোতাম তৈরী হওয়ায় চুন ব্যবসায়ীরা এখানে রেখেছিল ঝিনুক কুড়াতে একদল লোক। এরা ঝিনুক প্রাপ্তির স্থানটিকে ঝিনুকদহ বলতো। কেউ কেউ বলেন, ঝিনুক ও দহ মিলিয়ে মুখে মুখে হয়ে দাঁড়ায় ঝিনকুদহ। দহ অর্থাৎ (বড় জলাশয়) যেখানে ঝিনুক ছিল। এই দহ থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করতে করতে , আঞ্চলিক ভাষায় এ স্থানের নাম হয় ঝিনেইদহ- ঝিনেদা অতঃপর রূপান্তরিত হয়ে আজকের ঝিনাইদহ হয়েছে।
আবার অনেকে বলেন দহ অর্থ গ্রাম। এই গ্রামে ঝিনুক পাওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ঝিনুকদহ নামকরণ হয়েছিল যা পরে ঝিনাইদহ হয়েছে। আবার.. জনশ্রুতি আছে প্রাচীনকালে বর্তমান ঝিনাইদহের উত্তর পশ্চিম দিকে নবগঙ্গাঁ নদীর ধারে ঝিনুক কুড়ানো শ্রমিকের বসতি গড়ে উঠেছিল। সে সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গেঁর কোলকাতা থেকে ব্যবসায়ীরা ঝিনুকের মুক্তা সংগ্রহের জন্যে এখানে ঝিনুক কিনতে আসতো। সে সময় ঝিনুক প্রাপ্তির এই স্থানটিকে ঝিনুকদহ বলা হতো। সে সময় ঝিনুক থেকে মুক্তা সংগ্রহের মাধ্যমে এবং ঝিনুক পুড়িয়ে চুন তৈরী করে তা বিক্রি করে মানুষ অর্থ উপার্জন করতো। অনেকের মতে ঝিনুককে আঞ্চলিক ভাষায় ঝিনেই, ঝিনাই এবং দহ অর্থ বড় জলাশয় ও ফার্সি ভাষায় দহ বলতে গ্রামকে বুঝানো হতো। সেই অর্থে ঝিনুকদহ বলতে ঝিনুকের জলাশয় অথবা ঝিনুকের গ্রাম বুঝাতো। আর এই ঝিনুক এবং দহ থেকেই ঝিনুকদহ বা ঝিনেইদহ, যা- রূপান্তরিত হয়ে আজকের ঝিনাইদহ নামকরন হয়েছে। এই নামের ক্ষেত্রে আর একটি কিংবদন্তী আছে যে, একজন ইংরেজ সাহেব নৌকাযোগে নবগঙ্গা নদী পার হচ্ছিলেন। ঘাটে তখন লোকজন ঝিনুক কুড়িয়ে জমা করছিল। ইংরেজ সাহেব ঝিনুক কুড়ানোরত লোকজনদের জিজ্ঞাসা করেন এই স্থানের নাম। কিন্তু ঝিনুক কুড়ানীরা সাহেবের কথা বুঝতে ব্যর্থ হয়। তারা মনে করে যে, নদী থেকে তারা কি তুলছে সাহেব তাই জানতে চাচ্ছে। তাই সাহেবের জায়গার নাম জানার প্রশ্নের উত্তরে তারা বলে ঝিনুক। এতে ইংরেজ সাহেব ধরে নেন যে এই স্থানের নাম ঝেনি। এই ঝেনি শব্দটি পরে ঝেনিদা হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। ঝিনুকদহ আর ঝেনিদা যাই হোক না কেন মূল যে ঝিনুক থেকে ঝিনাইদহ নামকরণের উৎপত্তি এ ব্যাপারে সমর্থন বেশী। আর সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাংলোর সামনে যে বিরাট দহ ছিল সেটাও অনস্বীকার্য।
বৃটিশ শাসনের শুরুতে ঝিনাইদহ ছিল ১টি পুলিশ ফাঁড়ি। ১৭৯৩ সালে এটাকে থানায় রূপান্তর করা হয়। ১৮৬২ সালে ঝিনাইদহ থানা যশোর জেলার একটি মহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় এবং ১৯৮৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী যশোর জেলা হতে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।
এই জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ : মরমী কবি লালন শাহ, কবি গোলাম মোস্তফা, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান, বিল্পবী বীর বাঘা যতীন, পাগলা কানাই, কেপি বসু, শিল্পী মোস্তফা মনোয়ার, শিল্পী মোস্তফা আজিজ, ও ইলা মিত্রসহ আরও অনেকে।
স্থাপত্য ঐতিহ্য এবং প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন : স্থাপত্য ঐতিহ্য এবং পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে বিশ্ববট (বেথুলি, মল্লিকপুর কালিগঞ্জ),
হরিহরগড় (শৈলকূপা), শৈলকূপা শাহী মসজিদ,
রাম গোপাল মন্দির (শৈলকূপা),
রানীমাতা দিঘী,
সওদাগর দিঘী ও মসজিদ,
গোড়ার মসজিদ (কালিগঞ্জ),
জোড়বাংলা মসজিদ, গলাকাটা দিঘি ও মসজিদ, চেরাগদানি দিঘি ও মসজিদ, শ্রী রামরাজার দিঘি, গাজী কালু চম্পাবতির সৌধ, ঢোল সমুদ্র দিঘি (ঝিনাইদহ সদর),