গত বছর বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কৃষকেরা রসুন চাষে ঝুঁকে। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে রসুন চাষ করেন স্থানীয় কৃষকেরা। এবার রসুন চাষে জমি বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি ফলনও হয়েছে বাম্পার। বর্তমানে ফসলি জমি থেকে রসুন উত্তোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কৃষকরা। কিন্তু ফলন ভালো হলেও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকের কপালে। অথচ এই রসুন চাষ করেই বিগত সময় শত শত কৃষক তাদের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। এবার কৃষকের ফসলে লাভ গুনছে এক শ্রেণীর মজুদকারী ব্যবসায়ীদের একটি অসাধু চক্র। দিনাজপুরের খানসামায় চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে রসুন চাষাবাদ হয়েছে। এবার রেকর্ড পরিমাণের জমিতে রসুন চাষাবাদ ও ফলন বাম্পার হলেও কৃষকেরা বাজারে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। ফলে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন এখানকার রসুন চাষিরা। এদের মধ্যে চরম বিপদে পড়েছেন বর্গা ও দরিদ্র চাষিরা। চাষাবাদে যে পরিমাণের খরচ হয়েছে বিক্রিকালে খরচের টাকা আসা তো দূরের কথা উল্টো গুনতে হচ্ছে লোকসান। লোকসানের মধ্যে বর্গা চাষিদের গুনতে হচ্ছে বর্গার টাকা। বর্গা ও দরিদ্র চাষিরা অধিক লাভের আশায় বেশি জমিতে রসুন চাষাবাদ করে এনজিও এবং ঋণের টাকা দিয়ে। কিন্তু রসুন উঠার পর বাজারে দাম না পাওয়ায় ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন কৃষকেরা। তবে স্থানীয় রসুন চাষিরা বলছেন বাজার মূল্যে সরকার হস্তক্ষেপ করলে ন্যায্য মূল্য পাবেন কৃষক। ওই উপজেলার পাকেরহাট, খানসামা সদর, কাচিনিয়া, কালীরবাজার ও ডাংগারহাট রসুনের জন্য বিখ্যাত। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় কাচিনিয়া হাট সপ্তাহের রোববার ও বুধবার হলেও রসুন মৌসুমে সপ্তাহের চারদিন এই হাট বসে। অপরদিকে সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার উপজেলার পাকের হাটে রসুন বিক্রি হয় এই মৌসুমে। এদিকে রসুনের জন্য খ্যাত দেশের উত্তরের জেলা দিনাজপুরের খানসামার হাট-বাজারগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় জমে উঠেছে। রসুন কিনতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন পাইকার ব্যবসায়ীরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, খানসামায় চলতি বছর ৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৪ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে এবার রসুন চাষ হয়। উপজেলার কাচিনীয়া, গোয়ালডিহি, জোয়ার, জুগীরঘোপা, কায়েমপুর, উত্তমপাড়া, দেউলগাঁও, রামনগরসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এবার চলতি মৌসুমে এই অঞ্চলে রসুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা তাদের ফসলি জমি থেকে রসুন উত্তোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার ছোট-বড় প্রায় সব পরিবারই কম-বেশি রসুন চাষ করে থাকেন। উপজেলার গোয়ালডিহি এলাকার মো. আবদুর রহমান জানান, বেশি লাভের আশায় অধিক জমি বর্গা নিয়ে স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণের টাকা দিয়ে রসুন চাষ করেছেন। সবমিলিয়ে এখন সব বর্গা চাষিদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। কাচিনিয়া হাটে রসুন বিক্রি করতে আসা মো. মামুন জানান, সাইজ হিসেবে বড় দানার রসুন প্রতিকেজি ১০টাকা ও ছোট দানার রসুন ৪ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষাবাদে যে পরিমাণের খরচ গুনতে হয়েছে সে অনুযায়ী বর্তমান বাজার মূল্যে অনেক কম। তাই কৃষকদের রসুন বিক্রিতে গুনতে হচ্ছে লোকসান। তবে ভারত ও চীন থেকে রসুন আমদানি বন্ধ হলেই স্থানীয় রসুনের সঠিক দাম পাবেন কৃষকরা। কাচিনিয়া হাট ইজারাদার রবিউল আলম তুহিন জানান, প্রতিবার এই হাটে দিনে ১০ থেকে ১৫ টন যা গড়ে এক মৌসুমে প্রায় আড়াইশ’ টন রসুন ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। এখানে রসুন কিনতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকার ব্যবসায়ীরা আসেন। প্রতি বছরের মতো এবারও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রসুন কিনতে মানুষ ছুটে এসেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আফজাল হোসেন জানান, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে চাষ ও তেমনি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে। আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় সব জমির রসুন উত্তোলন কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। দিন দিন এই অঞ্চলে রসুন চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। রসুন লাভজনক ফসল হলেও বর্তমানে বাজারে রসুনের দাম কম থাকায় সংরক্ষণের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতেও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।